নিজস্ব প্রতিবেদক »
‘কাস্টমসের ৭০তম জন্মদিন। হাঁটিহাঁটি পা পা করে কাস্টমস এখন পরিপক্ক হয়েছে। সরকারের এখন লক্ষ্য হলো স্মার্ট বাংলাদেশ। এজন্য লাগবে স্মার্ট লোক। সবকিছুই স্মার্ট করতে হবে। এখানে স্মার্ট মানে নলেজ বেইজড স্মার্ট। নতুন কর্মকর্তাদের টিমকে স্বাগত জানাই। কারণ তারাই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবেন। আমরা ব্যবসায়ীরা শতভাগ ইথিক্যাল, তা আমি বলবো না। আমি চাইবো, ৯৯ পারসেন্ট ইথিক্যালি কাজ করার। সবকিছুই অটোমেশন হওয়া দরকার। অটোমেশন করতে সার্ভারের সমস্যার সমাধান জরুরি। এ নিয়ে আপনাদের মনোযোগ দিতে হবে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস আয়োজিত আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবসের সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চিটাগং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম এসব কথা বলেন।
প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘কাস্টমস প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। যতদ্রুত সম্ভব কাজ যথাসময়ে শুরু করে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে পারলে সমস্যাগুলো লাঘব হবে বলে আমি মনে করি। পাশাপাশি আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কোনো একজনের ধীরগতির কারণে পুরো কাজ পিছিয়ে পড়তে পারে। এজন্য কাস্টমসের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে সচেতন হতে হবে। আমরা ইথিক্যালি কাজ করে জাপানের মতো উন্নত হওয়ার চেষ্টা করবো।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার এ কে এম মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ কাস্টমস সরকারের যথাযথ রাজস্ব সংরক্ষণ, নিরাপদ বাণিজ্য নিশ্চিতকরণ এবং চোরাচালান ও অর্থপাচার প্রতিরোধে জ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যা টেকসই অর্থনীতি বাস্তবায়নে বিপুল ভূমিকা রাখবে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য সবার আগে প্রয়োজন স্মার্ট জনবল। কাস্টমসকে স্মার্ট হিসেবে গড়ে তুলতে পারস্পরিক জ্ঞান বিতরণ এবং উত্তম পেশাদারিত্ব অর্জনই আগামীর প্রত্যয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার, যাত্রী ও ইলেকট্রনিক কমার্সের বিপুল বিস্তৃতি এবং অংশীজনদের উন্নত সেবাপ্রাপ্তির চাহিদা কাস্টমসকে স্মার্ট কাস্টমসে রূপান্তরের অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে।’
গত অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের ৩০ শতাংশ কাস্টমস থেকে আয় করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২০২১-২২ অর্থবছরে এনবিআর আহরিত কর রাজস্ব ৩ লাখ ১ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা। যার মধ্যে কাস্টমস আহরিত রাজস্ব ৮৯ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা অর্থাৎ ৩০ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কর রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে কাস্টমসের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আহরণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, শিল্পের বিকাশ, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা, পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন রাখা এবং ক্ষতিকারক পণ্যের গমনাগমন নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিতের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও জনগণের কল্যাণে কাজ করছে কাস্টমস। বিশ্ব পরিস্থিতিতে কাস্টমস এখন রাজস্ব আহরণ ছাড়াও ট্রেড ফেসিলিশন, ন্যাশনাল সিকিউরিটি, আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনসহ নানা বিষয়ে কাজ করে থাকে।’
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান বলেন, বিশ্বের ১৮৪টি দেশে কাস্টমস দিবস উদযাপন করা হচ্ছে। এবারের কাস্টমস দিবসের প্রতিপাদ্য ‘নার্চারিং দ্যা নেক্সট জেনারেশন: প্রমোটিং অ্যা কালচার অব নলেজ- শেয়ারিং অ্যান্ড প্রফেশনাল প্রাইড ইন কাস্টমস’। অর্থাৎ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের লালনে কাস্টমসে জ্ঞানচর্চার সংস্কৃতি ও উত্তম পেশাদারিত্বের বিকাশ। এখানে নলেজ শেয়ারিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে বিভিন্ন দেশের কাস্টমস কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ব্লক চেইন, ক্লাউড কম্পিউটিং এবং বিগ ডাটাসহ আধুনিক প্রযুক্তি কাস্টমস কার্যক্রম দ্রুতকরণ এবং ঝুঁকি নিবারণে সফলভাবে ব্যবহার করছে। আমাদের আশা, ভবিষ্যতে স্টেকহোল্ডারদের উপস্থিতি ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাস্টমস সেবা দেবে। এজন্য আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে একটি অটোমেটেড পেপারলেস কাস্টমস সিস্টেম তৈরি করা আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পণ্য চালান জাহাজীকরণ ও খালাস দ্রুততর করা এবং ব্যবসার খরচ উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা আমাদের মূল লক্ষ্য।
চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমির মহাপরিচালক মো. মাহবুবুজ্জামানের সভাপতিত্বে এ সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন চট্টগ্রাম ট্যাকসেস আপিলাত ট্রাইব্যুনাল সদস্য সাফিনা জাহান, চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কমিশনার সৈয়দ মুসফিকুর রহমান, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার সহ সভাপতি মাহবুবুর রহমান ও চট্টগ্রাম উইম্যান চেম্বারের সহ-সভাপতি আবিদা মোস্তফা।
অনুষ্ঠানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (মূসক ও নিরীক্ষা) ড. মো. সহিদুল ইসলাম অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও তিনি আসতে পারেননি। এছাড়া অনুষ্ঠানের আয়োজনও ছোট করা হয়েছে। এসব জানিয়ে সেমিনারের সভাপতি চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমির মহাপরিচালক মো. মাহবুবুজ্জামান বলেন, ‘আমাদেরও ভালো লাগতো, যদি অনুষ্ঠানটি আরও প্রাণবন্ত করা যেতো। কিন্তু একই অনুষ্ঠান বড় করে ঢাকায় হচ্ছে। ওখানে মন্ত্রী মহোদয়ও যাবেন। তাই এখানে ছোট আয়োজন করার নির্দেশনা আছে। ফলে এখানে বেশি কোনো আয়োজন রাখিনি। শুধু সেমিনার দিয়েই উদযাপনটা শেষ করছি।’
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের দুইজন উপ-কমিশনার খাদিজা পারভিন সুমি ও মো. আহসানুল্লাহ।