সারাদেশে শীতের আবহ ফুরিয়ে আসছে। এসেছে নতুন ঋতু। এই বসন্তঋতু মানে ফাল্গুন ও চৈত্রের শুকনো, খরখরে পরিবেশের উপস্থিতি। তারপরই নতুন বাংলাবর্ষের আগমন। এও বৈশাখের দাবদাহের কাল। এই পুরো সময়টায় আবহাওয়া শুষ্ক এবং ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে। ফলে সারাদেশে এই সময়টাতেই সংঘটিত হতে থাকে অনভিপ্রেত বিপুল সব অগ্নিকা-। এমন কি অরণ্যে দাবানলের ঘটনাও এ সময়টাতেই পরিদৃষ্ট হয়। অন্যদিকে এই সময়েই পার্বত্য অঞ্চলে জুমচাষের জন্য পাহাড়ে আগুন লাগিয়ে জুমভূমি প্রস্তুত করার রেওয়াজ রয়েছে। তাই বলা যায়, প্রকৃতিজুড়ে খরাদাহের পদধ্বনি নিয়ে নতুন ঋতু ও সময়ের আগমন ঘটছে আমাদের চারপাশে। আর এ সময়টাতেই সাধারণ মানুষের খড়োঘর বা সনাতনী বাসভবনে ব্যাপক মাত্রায় আগুন লাগে নানা ধরনের অসতর্কতা ও অসাবধানতা থেকে। এর মধ্যে রয়েছে বৈদ্যুতিক চুলা, শর্টসার্কিট, পাখা ও এয়ারকন্ডিশনের অতিরিক্ত ঘূর্ণন ও ব্যবহার। এছাড়া গৃহিণীদের অমনস্কতাও এসব অগ্নিকা- ঘটার পেছনে কম দায়ী নয়।
আমাদের এ আশংকা যে অমূলক নয়, তা বারবার প্রমাণিত হয়েছে অনতি অতীতে। সম্প্রতি পত্রিকান্তরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন বিষয়টিকে সময়োচিত মাত্রায় সামনে নিয়ে এসেছে।
গতকাল মঙ্গলবার এরকম একটি অগ্নিকা-ে প্রাণ হরিয়েছেন এক পক্ষাঘাতগ্রস্ত বৃদ্ধ। নগরের ইপিজেড থানার আলী শাহ নগরের এক বস্তিতে এ মর্মন্তুদ ঘটনাটি ঘটে। এখানে ৪৮টি কাঁচাঘর পুড়ে গিয়ে পুরো বস্তিব্সী নিঃস্ব হয়েছেন। অগ্নিকা-ে এখানে প্রায় ১২ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয় বলে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে। আবার ওই একই দিনেই কর্ণফুলী থানাধীন চরপাথরঘাটার মাইজ্জ্যারটেক এলাকায়ও একটি কারখানা পুড়ে যায়। এটি ছিল কর্কশিট তৈরির একটি কারখানা। আগুনে কারখানাটির নিচতলা ও দ্বিতীয়তলা পুড়ে গেছে।
লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, ফায়ার সার্ভিসের তৎপরতা সত্ত্বেও আগুন নেভানোর কাজটা বিলম্বেই সম্পন্ন হচ্ছে এবং ক্ষতির পরিমাণও অনাকাক্সিক্ষত মাত্রাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে বরাবরই।ফায়ার সার্ভিস বিভাগটি যথেষ্ট অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি দ্বারা সুসজ্জিত নয় বলে অভিজ্ঞমহলে দীর্ঘদিনের অভিযোগ রয়েছে। ফলে কর্মরতদের আন্তরিকতাই এখানে সমস্যা সমাধানের একমাত্র নিরিখ নয় বলে প্রমাণিত হচ্ছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সৎ ও আন্তরিক তথা সেবা মনোভাবের কর্মীর পাশাপাশি এ বিভাগকে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে পরিপূর্ণ সক্ষম একটা বাহিনীরূপে গড়ে তোলা সময়ের দাবি এখন। এছাড়া আজকালকার অগ্নিকা-ের ধরনধারণ সনাতনী কায়দার ভেতরেও আর সীমাবদ্ধ নেই। ইদানিং বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে বহুতল ভবনেও অগ্নিকা- সংঘটিত হচ্ছে দেদার। ঢাকা-চট্টগ্রামে অনতি অতীতে এ রকম অনেক বহুতল ভবনে আগুন লাগার দৃষ্টান্ত রয়েছে। ফলে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি দ্বারা ফায়ার সার্ভিস বিভাগকে সুসজ্জিতকরণের কোনো বিকল্প যে নেই তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট।
আমাদের প্রত্যাশা, এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টমহল জনআকাক্সক্ষার বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে ভেবে দেখবে এবং ত্বরিৎ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে পদক্ষেপ নিতে এগিয়ে আসবে।
মতামত সম্পাদকীয়