অক্সিজেনের দুষ্প্রাপ্যতা লাঘবে সচেষ্ট হতে হবে

মেডিকেল অক্সিজেন একটি অপরিহার্য ঔষধ, যা গত দেড় শতাব্দীর বেশি সময় ধরে চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে। এটি একটি অত্যাবশ্যকীয় সেবা, যা স্বাস্থ্যসেবার প্রতিটি স্তরেই প্রয়োজন। সঠিক সময়ে অক্সিজেন পাওয়া না গেলে মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে, কিন্তু জীবন বাঁচানোর এই অপরিহার্য উপাদানটি এখনো সহজলভ্য করে তোলা যায়নি এবং এর প্রাপ্যতায় বৈষম্য প্রকট। বিশেষ করে বাংলাদেশসহ বিশ্বের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর ক্ষেত্রে এ সংকট প্রবল।

আইসিডিডিআর,বি আয়োজন করে বাংলাদেশ অক্সিজেন সামিট ২০২৫। যার শিরোনাম ছিল ‘ন্যাশনাল রোডম্যাপ টু সেইফ, অ্যাফর্ডেবল অ্যান্ড রিলেবল মেডিকেল অক্সিজেন ফর অল’। অর্থাৎ সবার জন্য নিরাপদ ও সহজে পাওয়া যায় এমন মেডিকেল অক্সিজেন নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় কর্মপরিকল্পনা।

সামিটে বিশেষজ্ঞরা জানান, বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৩৭৪ মিলিয়ন মানুষের একিউট মেডিকেল কন্ডিশনে ও অস্ত্রোপচারের সময় অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। যার জন্য প্রতি বছর বিশ্বে ন্যূনতম ১.২ বিলিয়ন কিউবিক মিটার মেডিকেল অক্সিজেনের দরকার হয়। এদের মধ্যে যাদের মেডিকেল অক্সিজেনের দরকার হয় তাদের মধ্যে প্রায় ৩০৬ মিলিয়ন বা ৮২ শতাংশ মানুষ-ই বসবাস করেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। তাৎক্ষণিক বা জরুরি প্রয়োজন (যেমন- অ্যাজমা, অ্যানিমিয়া, ডায়েরিয়া ইত্যাদি ) ও অস্ত্রোপচারের সময় বিপুল পরিমাণ মেডিকেল অক্সিজেন দরকার হয় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। সে হিসেবে বাংলাদেশেও অক্সিজেনের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ব্যবধান বিদ্যমান, বিশেষ করে দেশের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে যেমন জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে। এছাড়াও, জরুরি পরিস্থিতিতে অক্সিজেনের চাহিদা অনেক বৃদ্ধি পায়, যেমন কোভিড-১৯ এর সময় রোগিদের জন্য অতিরিক্ত মেডিকেল অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়, যা অনেক দেশে সংকট তৈরি করে। মেডিকেল অক্সিজেনের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা ও বিনিয়োগ করার সুফল অনেক। কেননা এর মাধ্যমে হাজার হাজার জীবন বাচানো সম্ভব।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবু জাফর খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন, ‘অক্সিজেন কেবল একটি পণ্য নয়, এটি একটি পাবলিক সার্ভিস।’ বর্তমানে অক্সিজেনকে প্রয়োজনীয় ওষুধের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। খবরটি আশাব্যাঞ্জক। কভিডের সময়ে দেখেছি অক্সিজেনের অভাবে অনেক রোগী মারা যেতে। কাজেই অক্সিজেনের চাহিদা পূরণ করতে পারলে প্রতিবছর প্রচুর রোগীকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব হবে।