সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক »
চোখ ভয়ঙ্কর রকমের লাল! ছলছল পানি! চট্টগ্রামের টাওয়ার ইন হোটেলের কনফারেন্স কক্ষে ব্যাপক কোলাহল। সংবাদকর্মীদের আনাগোনায় খালি নেই এক ইঞ্চি জায়গাও। পরিস্থিতি শান্ত হচ্ছে না দেখে তামিম ইকবাল নিজেই এগিয়ে আসলেন, ‘আচ্ছা ভাই আওয়াজ কম করেন। আমার জন্য বলাটা সহজ হবে।’ তামিমের কথা শোনে কে? এক পর্যায়ে তামিম আবার বলেন, ‘ভাইয়া আমি উঠে চলে যাবো?’ একটু শান্ত হতে তামিম কথা শুরু করলেন, দিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে তামিম ততক্ষণ পর্যন্ত স্বাভাবিকই ছিলেন। যখনি বাবার কথা বলতে গেছেন, তখন আর নিজেকেই ধরে রাখতে পারলেন না। মাথা নিচু করে কেঁদেছেন অঝোরে। পাশে থেকে একজন এগিয়ে দেন টিস্যু। কোলাহলপূর্ণ হলে নেমে এসেছে পিনপতন নীরবতা। তামিমের কান্না পরিস্থিতি বেদনাবিদুর করে তোলে!
নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে কথা বলতে গিয়ে আবার কান্নায় ভেঙে পড়েন তামিম। দফায় দফায় বাবার কথা বলতে গিয়ে বারবার চোখ ভিজিয়েছেন চোখের জলে। অবশেষে ভেঙে ভেঙে তামিম বলেন, ‘আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানাতে হবে আমার, যেটা আমার মনে হয় আপনাদের প্রাপ্য। আমি সবসময় একটা কথা বলেছি যে, খেলাটি আমি খেলেছি (কান্না)! সবসময় বলেছি, ক্রিকেট খেলি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য। নিশ্চিত নই, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই ১৬ বছরে আমি তাঁকে গর্বিত করতে পেরেছি কি না…।’
শুধু বাবা নয়, চাচা আকবর খান, ছোট বেলার কোচ তপনের কথা আসতেই ভেঙে পড়েন তামিম, ‘আরও অনেককে ধন্যবাদ জানাতে হবে আমার। সবচেয়ে ছোট চাচা, যিনি মারা গেছেন, আকবর খান উনার হাত ধরেই আমার প্রথম ক্রিকেট বলের টুর্নামেন্ট খেলা। তাঁর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে তপন দা নামে একজন কোচ আছেন, যিনি ছোটবেলা থেকে (কান্না আবারও) তাঁর কাছে ছোটবেলা থেকে অনুশীলন করেছি। তাকে ধন্যবাদ জানাই।’
যে সময়ে তামিম অবসরের ঘোষণা দিচ্ছিলেন ঠিক তার ২৪ ঘণ্টা আগে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম ওয়ানডের টস করেছিলেন। ম্যাচ শেষে রাতেই অবশ্য তিনি অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন দুপুর ১২টায়। যেটি পরে দেড় ঘণ্টা পিছিয়ে দেওয়া হয়। কালো টি-শার্ট, মাথায় ক্যাপ পরা তামিম অবসরের ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘আমি খুব বেশি বড় করব না। ছোট রাখার চেষ্টা করব। বুধবার আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচটিই আমার শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। এই মুহূর্তেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছি।’
‘এটার পেছনে হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না। এটা নিয়ে ভাবছিলাম আমি… এটার ভিন্ন ভিন্ন কারণ আছে, যেটা আমার মনে হয় না এখানে বলার দরকার আছে। এটা না যে হুট করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বেশ কিছুদিন ধরেই কথা বলছিলাম, এমনকি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলছিলাম। আমার মনে হয়েছে, আমার সরে দাঁড়ানোর ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের উপযুক্ত সময় এটিই’ -আরও যোগ করেন তামিম।
আফগানদের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে এমন পরিস্থিতির সূত্রপাত। তামিম জানিয়েছেন তিনি শতভাগ ফিট নন। প্রথম ম্যাচ খেলে তিনি দেখতে চান। এই বক্তব্য নিয়ে অনেক জলঘোলা হয়। ক্ষিপ্ত হন বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। এরপর এলো এই ঘোষণা। শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচে তাঁর ব্যাট থেকে আসে ২১ বলে ১৩ রান। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ হারে ১৭ রানে। নিজেদের বাড়ির মাঠে শেষটা রাঙাতে পারলেন না। বিদায় নিলেন অশ্রুজলে, মনে অনেক কষ্ট রেখে।
তামিম বলেন, ‘আমার আসলে বেশি কিছু বলার নেই। আমি চেষ্টা করেছি, সত্যিই নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি (কান্না), হয়তো আমি যথেষ্ট ভালো ছিলাম না, তবে যখনই মাঠে নেমেছি, নিজের শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’
‘আরও অনেক কিছু আছে অনেক কিছু বলতে চাই আসলে। তবে আপনারা যেমন দেখছেন, কথা বলতে পারছি না। আশা করি, আপনারা এই পরিস্থিতিকে সম্মান করবেন (কান্না), কথা বলার জন্য পরিস্থিতিটা সহজ নয়। বিশেষ করে, এত বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার পর যখন ছেড়ে দিচ্ছি, কাজটা সহজ নয়। আশা করি, আপনারা তা অনুধাবন করবেন। আমি দুঃখিত যে এত শর্ট নোটিশে আপনাদেরকে ডাকা হয়েছে। সব সংবাদমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানাই’ -আরও যোগ করেন তামিম। তামিম চান তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিয়ে যাতে আর কোনো আলোচনা না হয়, ‘এর চেয়ে বেশি কিছু আর বলার নেই। একটাই অনুরোধ করব যে, আমার টপিক এখানেই শেষ করে দিন। অন্তত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য।’