-
সমুদ্র বন্দরের পাশাপাশি মিনি বিমানবন্দরও গড়ে তোলা হবে
-
সীতাকু-, মিরসরাই, ফেনীর সোনাগাজীর পর যুক্ত হচ্ছে সন্দ্বীপ ও নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জ
-
দেশীয় শিল্পকে এগিয়ে নিতে বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে যৌথভাবে প্রকল্প নিতে উৎসাহিত করা হচ্ছে
বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। ফেনী নদীর মোহনায় সীতাকু-, মিরসরাই, সোনাগাজী, কোম্পানিগঞ্জ ও সন্দ্বীপ নিয়ে গড়ে উঠতে যাচ্ছে দেশের আগামীর অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর খ্যাত এই অঞ্চল ঘিরেই ঘুরবে অর্থনীতির চাকা। বিশাল এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। এবিষয়ে কথা হয় বেজার নির্বাহি চেয়ারম্যান পবন চৌধুরীর সাথে। কথা বলেছেন সুপ্রভাতের প্রধান প্রতিবেদক ভূঁইয়া নজরুল।
সুপ্রভাত বাংলাদেশ : দেশে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় অন্তরায় ভূমি। কিন্তু এই প্রকল্পের হাজার হাজার একর ভূমির সংস্থান কীভাবে সম্ভব হচ্ছে?
পবন চৌধুরী : প্রকৃতির এক বিশাল দান জেগে উঠা ভূমি। সাগরের বুকে ভূমি জেগে উঠছে। সেসব ভূমিতেই আগামীর অর্থনীতি বির্নিমাণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এসব ভূমি লিজ দেয়া হলে গরীবদের কোনো লাভ হয় না, জোতদাররা লাভবান হয়। তাই এখন চরের এসব ভূমিতে শিল্প কারখানা স্থাপন করে এগিয়ে নেয়া হবে অর্থনীতি এবং এতে কর্মসংস্থান হবে মানুষের।
সুপ্রভাত : যেহেতু সাগরের জেগে উঠা ভূমি তাহলে খুব কম মূল্যে উদ্যোক্তাদের কাছে বরাদ্দ দেয়া যাচ্ছে। তাই কি?
পবন চৌধুরী : আমরা পানির দামে ভূমি বরাদ্দ দিচ্ছি। এক একর জমি মাত্র এক কোটি টাকায় বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। দেশে ধানী জমিও তো এই দামে পাওয়া যায় না।
সুপ্রভাত : বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে বিনিয়োগে বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর ঝোঁক কেমন?
পবন চৌধুরী : প্রথমদিকে আমরা যেমন ভেবেছিলাম তার চেয়ে অনেক বেশি সাড়া পাচ্ছি। আর এই সাড়ার কারণে আমরা এর আয়তন বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছি। তবে বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পূর্ব দিকের (চীন, কোরিয়া, জাপান, হংকং প্রভৃতি) দেশগুলোর কোম্পানির ঝোঁক বেশি। পাশাপাশি অন্যান্য দেশের প্রতিষ্ঠানও বিনিয়োগে এগিয়ে আসছে।
সুপ্রভাত : দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে নিতে কোনো কৌশল নেয়া হচ্ছে কি-না?
পবন চৌধুরী : অবশ্যই কৌশল নেয়া হচ্ছে। কারণ বিশ্বের সেরা কোম্পানিগুলো এখানে কারখানা স্থাপন করে পণ্য উৎপাদন করলে আমাদের দেশের লাভ কী? শুধু কি কর্মসংস্থান? মোটেও না। আমরা চাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের আওতায় আমাদের দেশীয় কোম্পানিগুলো এগিয়ে আসুক এবং বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে যৌথভাবে কারখানা স্থাপন করুক। এতে প্রযুক্তি স্থানান্তর হবে এবং আমাদের দেশীয় কোম্পানিগুলো একসময় প্রযুক্তি শিখে নেবে এবং নিজেরাই পণ্য উৎপাদন করতে পারবে। এজন্য বিদেশী ও দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর যৌথভাবে কারখানা স্থাপনকে আমরা অগ্রাধিকারভাবে বরাদ্দ দিয়ে থাকি।
সুপ্রভাত : বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে মূলত বড় শিল্পগ্রুপগুলো ভূমি বরাদ্দ নিচ্ছে। এক্ষেত্রে ক্ষুদ্র কারখানার মালিকরা কোথায় যাবে? তাদের জন্য পরিকল্পনা কি?
পবন চৌধুরী : দেশী ও বিদেশী বড় শিল্পগ্রুপগুলোকে আমরা ভূমি বরাদ্দ দিচ্ছি এটি ঠিক। তবে ক্ষুদ্র শিল্পগ্রুপগুলোর জন্যও জোন রয়েছে। বিজিএমইএ এর গার্মেন্টস ভিলেজ রয়েছে, বেপজার পৃথক জোন রয়েছে- সেগুলোতে ছোটো ছোটো প্লট রয়েছে। এছাড়া বেসরকারিভাবে কিছু জোন রয়েছে, সেখানেও ক্ষুদ্র শিল্প স্থাপনের সুযোগ রয়েছে। সর্বোপরি কোনো উদ্যোক্তা যদি আমাদের কাছে এসে প্রকল্প প্রস্তাবনা করে এবং যদি তা সম্ভাবনাময় হয় তাহলে আমরা তাকেও ভূমি বরাদ্দ দিতে পারি। অর্থাৎ, সব ধরনের শিল্প স্থাপনের সুযোগ রয়েছে এই শিল্পনগরে।
সুপ্রভাত : বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কারখানা স্থাপনের কাজ করছে। দুটি প্রতিষ্ঠান উৎপাদনেও আসছে। শিল্পনগর পুরোদমে চালু হতে কতোদিন সময় লাগতে পারে?
পবন চৌধুরী : মিরসরাই ও সোনাগাজী নিয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর প্রতিনিয়ত সম্প্রসারিত হচ্ছে। দেশী-বিদেশী অনেক প্রতিষ্ঠান কারখানা নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। আবার অনেকে ভূমি বরাদ্দের জন্য প্রকল্প নিয়ে আমাদের কাছে আসছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। তাই চলমান এই নির্মাণ কার্যক্রম শেষ হয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর পুরোদমে সচল হতে আরো ১০ বছর লাগতে পারে।
সুপ্রভাত : আপনি সম্প্রসারণের কথা বলছেন। প্রকল্পটি কোন দিকে সম্প্রসারণ হতে পারে?
পবন চৌধুরী : আমরা শিগগিরই দক্ষিণে সীতাকু-ের সীমানা চূড়ান্ত করবো। এছাড়া পশ্চিমে সন্দ্বীপ এবং উত্তর-পশ্চিমে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ পর্যন্ত এর আওতা বাড়তে পারে। সন্দ্বীপে ১৩ হাজার একর এবং কোম্পানীগঞ্জে ১৫ হাজার একর জমি বেজার আওতায় আনা হচ্ছে।
সুপ্রভাত : তাহলে দেখা যাচ্ছে ফেনী নদী, ছোটো ফেনী নদী এবং বঙ্গোপসাগরকে ব্যবহার করে পুরো এলাকার পরিকল্পনা করা হচ্ছে-
পবন চৌধুরী : প্রকৃতপক্ষে পুরো এলাকাটিই নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে। আমরা মিরসরাইয়ের সাথে সোনাগাজীর যোগাযোগের জন্য তিনটি পৃথক সেতু এবং সন্দ্বীপের জন্য সমুদ্রপথ ব্যবহার করবো। একইভাবে কোম্পানিগঞ্জকেও আমাদের নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসবো। এসব এলাকায় জলপথ, সড়কপথের পাশাপাশি রেলপথেরও নেটওয়ার্ক রাখা হয়েছে।
সুপ্রভাত : পণ্য আমদানি-রপ্তানি এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামের সাথে এই শিল্পনগরের মানুষের দ্রুত যাতায়াতের জন্য কী ব্যবস্থা রাখা হয়েছে ?
পবন চৌধুরী : পণ্য আমদানি-রপ্তানির জন্য মিরসরাইয়ে একটি সমুদ্রবন্দর গড়ে তোলা হচ্ছে। সমুদ্র বন্দরের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ হয়ে এখন সেটি বাস্তবায়ন পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া সোনাগাজীতে একটি মিনি বিমানবন্দরও গড়ে তোলা হবে।
সুপ্রভাত : চট্টগ্রাম বন্দর ও শিল্পনগরের সাথে পণ্য পরিবহন কীভাবে হবে?
পবন চৌধুরী : সাগরপার দিয়ে চার লেনের একটি সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে মিরসরাই অংশে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলীয় বেড়িবাঁধ কাম সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ। পর্যায়ক্রমে তা সীতাকু- হয়ে ফৌজদারহাট পর্যন্ত আউটার রিং রোডের সাথে যুক্ত হবে। আর এতে চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে রোড নেটওয়ার্ক তৈরি হয়ে যাবে।
সুপ্রভাত : প্রকল্প এলাকার ভেতরে অনেকগুলো খাল রয়েছে। এসব খাল কি থাকবে?
পবন চৌধুরী : অবশ্যই খালগুলো থাকবে। খালগুলোকে ড্রেজিং করে আরো গভীর করা হবে। এসব খাল দিয়ে কারখানার পণ্যগুলো সাগরে স্থানান্তরণ সহজ হবে। একইসাথে পানির প্রবাহও ঠিক থাকবে।
সুপ্রভাত : পুরো জোনটি উপকূলীয় এলাকা। তাই সুপেয় পানির সমস্যা প্রকট হতে পারে। এই সমস্যার সমাধান কীভাবে করবেন?
পবন চৌধুরী : ২০২৫ সাল নাগাদ প্রকল্পে দিনে ৩৪ কোটি লিটার পানির প্রয়োজন হবে। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে তা বাড়বে। পানি সমস্যা নিরসনের জন্য আমরা চট্টগ্রামের মোহরায় চট্টগ্রাম ওয়াসার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। এছাড়াও প্রকল্প এলাকায় গভীর নলকূপের মাধ্যমে এবং ফেনী নদী, ছোটো ফেনী নদীর পানি ও মহামায়া লেক থেকে পানি নেয়া ছাড়াও পানি শোধনাগার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।