নিজস্ব প্রতিবেদক »
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তায় দেশের বিভিন্ন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান জালিয়াতির মাধ্যমে মিথ্যা ঘোষণায় উচ্চ শুল্কহারযুক্ত পণ্য আমদানি করে আসছে। সুষ্ঠু পরিচালনা ও পর্যবেক্ষণের অভাবে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে এমন বিষয় উঠে আসে। এতে তিনটি মামলায় চার কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারী ও চাকলাদার সার্ভিস নামক এক সিএন্ডএফ এজেন্টের নাম উঠে আসে।
২০১৮ সালে মিথ্যা ঘোষণায় উচ্চ শুল্কহারযুক্ত পণ্য সিগারেট আমদানি ও খালাস করে জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রায় ১০৬ কোটি টাকা আত্মসাত করেছে একটি চক্র। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ৭ কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুদক।
গতকাল শনিবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ের বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত-১ এর উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বাদি হয়ে ৩টি মামলা দায়ের করেন। বিষয়টি সুপ্রভাতকে নিশ্চিত করেন দুদক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১ এর উপ-পরিচালক নাজমুচ্ছায়াদাত।
তিনি বলেন, ‘টায়ার, বোতাম, সেফটি পিন, জিপারের পরিবর্তে মিথ্যা ঘোষণায় উচ্চ শুল্কহারযুক্ত সিগারেট আমদানি ও খালাস করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে দশটি চালানে সর্বমোট ১০৫ কোটি ৯ লাখ ৯৩ হাজার ৩৭০ টাকা আত্মসাৎ করে। এতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ১২ কর্মকর্তা-কর্মচারী, আমদানিকারকসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। কমিশনের অনুমতিক্রমে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এ মামলাগুলো দায়ের করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘মামলায় অভিযুক্তগণ ২০১৮ সালের ২৪ মে থেকে একই বছরের ১৯ ডিসেম্বর অন্তর্বর্তীকালীন মধ্যে সাতটি চালানে সর্বমোট ৭২ কোটি ৮২ লাখ ৯১ হাজার ৭২৫ টাকা আত্মসাৎ করেছে। অন্য তিন চালানে ২০১৮ সালের ১১ জুন থেকে একই বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩২ কোটি ২৭ লাখ ১ হাজার ৬৪৫ টাকা আত্মসাৎ করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে এসব টাকা আত্মসাৎ করেন।’
মামলার এজহার সূত্রে জানা গেছে, মিথ্যা ঘোষণায় পাঁচটি চালানে চায়না টায়ারের পরিবর্তে উচ্চ শুল্কহারযুক্ত সিগারেট আমদানি ও খালাস করে ৫৬ কোটি ৬৮ লাখ ৫৩ হাজার ৯৭৫ টাকা সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে রাজধানীর জারার এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মাহবুবুর রহমান (৪৬), সিএন্ডএফ এজেন্ট চাকলাদার সার্ভিসের স্বত্বাধিকারী মো. হাবিবুর রহমান অপু (৫৩), গ্রাহক মো. আব্দুল গোফরান (৩৩), হামীম গ্রুপের কম্পিউটার অপারেটর মো. জহুরুল ইসলাম (২৬) ও গ্রাহক আবুল কালামকে (৩৪) আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। একই মামলায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সহকারী প্রোগ্রামার কামরুল হক, প্রাক্তন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাইফুন্নাহার জনি, প্রাক্তন রাজস্ব কর্মকর্তা মো. হাবিবুল ইসলাম, রাজস্ব কর্মকর্তা (এআইআর শাখা) সুলতান আহম্মদ, কম্পিউটার অপারেটর ফিরোজ আহমেদ, উচ্চমান সহকারী মো. আব্দুল্লাহ আল মাছুম ও অফিস সহায়ক সিরাজুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে।
৩২ কোটি ২৭ লাখ ১ হাজার ৬৪৫ টাকা সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আত্মসাতের মামলায় বোতাম ও সেফটি পিনের বদলে মিথ্যা ঘোষণায় তিনটি চালানে সিগারেট আমদানি ও খালাস করে অভিযুক্তরা। এতে রাজধানীর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সিফাত ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী মো. সালাউদ্দিন টিটো (৪৮), সিএন্ডএফ এজেন্ট চাকলাদার সার্ভিসের স্বত্বাধিকারী মো. হাবিবুর রহমান অপু (৫৩) ও গ্রাহক মো. আবুল কালামের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায়ও উঠে আসে সেই চার কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সহকারী প্রোগ্রামার কামরুল হক, রাজস্ব কর্মকর্তা (এআইআর শাখা) সুলতান আহম্মদ, কম্পিউটার অপারেটর ফিরোজ আহমেদ, উচ্চমান সহকারী মো. আব্দুল্লাহ আল মাছুম ও অফিস সহায়ক সিরাজুল ইসলামকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে।
২টি চালানে জিপার ও টায়ারের মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে উচ্চ শুল্কহারযুক্ত পণ্য সিগারেট আমদানি ও খালাস করে সরকারের ১৬ কোটি ১৪ লাখ ৩৭ হাজার ৭৫০ টাকা আত্মসাতের মামলায় মিজানুর রহমান চাকলাদার (৪৮), মফিজুল ইসলাম লিটন (৫১), আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মুভিং ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী আব্দুল হান্নান দেওয়ান (৪৮), সিএন্ডএফ এজেন্ট চাকলাদার সার্ভিসের মো. হাবিবুর রহমান অপু, গ্রাহক আব্দুল গোফরান ও হামীম গ্রুপের কম্পিউটার অপারেটর জহুল ইসলামকে আসামি করা হয়। এ মামলায় আবারও সেই চার কাস্টমস হাউসের কর্মকর্তা-কর্মচারী নাম দেখা গেছে। সহকারী প্রোগ্রামার কামরুল হক, রাজস্ব কর্মকর্তা সুলতান আহম্মদ, কম্পিউটার অপারেটর ফিরোজ আহমেদ ও উচ্চমান সহকারী আব্দুল্লাহ আল মাছুম।