সুপ্রভাত ডেস্ক »
চট্টগ্রামের সীতাকু-ে অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনায় তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। মঙ্গলবার প্রতিবেদনটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক রাকিব হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনা বাংলাদেশে প্রথম। গত এক দশকে সারা পৃথিবীতে এ ধরনের কয়েকটি ঘটেছে। কমিটি গঠনের পর আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন বিশেষজ্ঞকে অন্তর্ভুক্ত করেছি। তারাসহ আমরা সবাই কয়েকবার মিলিত হয়েছি এবং একাধিকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি।
‘সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের কিছু অবহেলা এবং কিছু ঘাটতি ছিল। সবমিলিয়ে এ ধরনের ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে এজন্য আমরা প্রতিবেদনে ৯ দফা সুপারিশ করেছি। এর মধ্যে জেলা প্রশাসন কিছু সুপারিশ বাস্তবায়ন শুরু করেছে। কিছু সুপারিশ মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করবে। আগামী ২০ মার্চ চট্টগ্রামের সব অক্সিজেন প্ল্যান্ট মালিকদের নিয়ে আমরা কর্মশালা করব।’
‘প্রতিবেদন সিলগালা অবস্থায় রয়েছে- এজন্য এর বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না। মন্ত্রণালয়ে পৌঁছানোর পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে বিস্তারিত জানানো হবে’ -যোগ করেন রাকিব হাসান।
চট্টগ্রামের সহকারী বিস্ফোরক পরিদর্শক এস এম সাখাওয়াত হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সীমা প্ল্যান্টে শুধু অক্সিজেন উৎপাদনের অনুমতি ছিল। কিন্তু তাদের কারখানায় আমরা কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রোজেনের সিলিন্ডার পেয়েছি। এসবের কোনও অনুমতি ছিল না। তারা অদক্ষ লোক দিয়ে কারখানা চালাতেন বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে।
জানা গেছে, গত ৪ মার্চ সীতাকু-ের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কদমরসুল কেশবপুর এলাকার সীমা অক্সিজেন লিমিটেডে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। এতে সাতজন নিহত এবং ৩৩ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।এ ঘটনায় ওইদিন ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন।
এদিকে বিস্ফোরণের ঘটনায় ৬ মার্চ রাতে সীতাকু- থানায় মামলা দায়ের হয়। বিস্ফোরণে প্রাণ হারানো আব্দুল কাদের মিয়ার স্ত্রী রোকেয়া বেগম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এতে আসামি করা সীমা অক্সিজেন লিমিটেডের এমডি মো. মামুন উদ্দিন (৫৫), পরিচালক পারভেজ হোসেন (৪৮) ও আশরাফ উদ্দিন বাপ্পি (৪২), ম্যানেজার আব্দুল আলীম (৪৫), প্ল্যান্ট অপারেটর ইনচার্জ সামসুজ্জামান শিকদার (৬২), প্ল্যান্ট অপারেটর খুরশিদ আলম (৫০), সেলিম জাহান (৫৮), নির্বাহী পরিচালক মো. কামাল উদ্দিন, অ্যাডমিন অফিসার গোলাম কিবরিয়া, অফিসার শান্তনু রায়, সামিউল, সুপারভাইজার ইদ্রিস আলী, সানা উল্লাহ, সিরাজ উদ-দৌলা, রাকিবুল ও রাজীবকে।
মামলার এজাহারে বাদী রোকেয়া বেগম উল্লেখ করেন, তার স্বামী ১০-১৫ দিন আগে ফোনে একবার বলেছিলেন, ‘কারখানায় অর্থের অভাবে অভিজ্ঞ, দক্ষ কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের ছাঁটাই করছে। বর্তমানে যারা কাজ করছে তারা অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ। আল্লাহই জানে, কখন কী দুর্ঘটনা ঘটে যায়।’ একথা শুনে তারা খুব চিন্তিত ছিলেন। এর মধ্যে ৪ ফেব্রুয়ারি অজ্ঞাত কারণে কারখানার অক্সিজেন কলামে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। পরে খবর পেয়ে বাদী তার স্বামীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেখতে পায়। সেখানে তার স্বামী কিছুক্ষণ চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যান।
এজাহারে তিনি আরও উল্লেখ করেন, কারখানা মালিক ও আসামি হওয়া কর্মকর্তারা যথাযথ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। তারা বিপজ্জনকভাবে গ্যাস উৎপাদন, রিফিল ও সরবরাহ করতেন। তারা তাৎক্ষণিকভাবে দুর্ঘটনা মোকাবিলা করার মতো প্রশিক্ষিত জনবল রাখেননি। এতে করে বিস্ফোরণে তার স্বামীসহ সাতজন মারা যান। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দ-বিধির ৩০৪ (ক), ৩৩৭, ৩৩৮ ও ৪২৭ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। খবর ঢাকাপোস্ট।
জানা গেছে, গত বছরের ৪ জুন রাতে সীতাকু-ের কদমরসুল এলাকায় অবস্থিত বিএম ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকা- ঘটে। আগুন লাগার ঘণ্টা খানেকের মধ্যে সেখানে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। এরপর টানা ৮৬ ঘণ্টা আগুন জ্বলতে থাকে। একপর্যায়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ওই দুর্ঘটনায় আশপাশে থাকা ফায়ার সার্ভিসকর্মী ও শ্রমিকসহ ৫১ জন নিহত হন। এছাড়া আহত হন প্রায় দুই শতাধিক। পাশাপাশি ১৫৬টি আমদানি-রপ্তানি কনটেইনার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।