নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »
বাংলাদেশ-মিয়ানমার তুমব্রু সীমান্তের জিরো লাইনে অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গা ও সীমান্তে বসবাসরত জনসাধারণের মধ্যে দিন দিন আতঙ্ক বাড়ছে। বাংলাদেশি বেশ ক’টি পরিবার আতঙ্কের কারণে সীমান্ত থেকে দূরে নিকটবর্তী অনেক আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সীমান্তে ব্যাপক কড়াকড়ি স্বত্বেও কিছু রোহিঙ্গা জিরো লাইন ক্রস করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া তাদের আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।
মিয়ানমার থেকে আসা গোলার বিস্ফোরণে রোহিঙ্গাদের হতাহতের ঘটনার পর শনিবার সকালে সীমান্ত এলাকায় মাইকিং করে বাসিন্দাদের নিরাপদ দূরত্বে থাকার নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
সীমান্তে বসবাসরত বাসিন্দারা জানান, থমথমে এমন পরিস্থিতির মধ্যে কঠিন সময় পার করছেন তারা। শিগগিরই এমন পরিস্থিতির উন্নতি না হলে তাদের অবস্থা শোচনীয় হবে বলে জানান।
এদিকে মিয়ানমার থেকে ছোঁড়া মর্টারশেলে সীমান্ত শূন্যরেখায় এক রোহিঙ্গা নিহতের পর শনিবার সকালেও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে দফায় দফায় বিকট গোলার শব্দ শোনা যায়। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলম দুপুর ১টার দিকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘শুক্রবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত মিয়ানমার সীমান্তে গোলাগুলি, মর্টারশেল বিস্ফোরণের পর শনিবার সকালেও গোলার বিকট শব্দ শোনা গেছে। সকাল সাড়ে ৭টার পর থেকে থেমে কয়েকটি গোলার শব্দ পাওয়া গেছে।’
এদিকে আতঙ্কে সীমান্তঘেঁষা ঘুমধুম ইউনিয়নের উত্তরপাড়া ও কোনাপাড়া এলাকার ৩৫টি পরিবার অন্য জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে এমন খবর শোনা গেলেও তা নিশ্চিত করতে পারেননি কেউ।
বেশ কয়েকবার মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যের পাহাড় থেকে ছোঁড়া মর্টারশেল বাংলাদেশের ভূখ-েও এসে পড়েছে। সবশেষ শুক্রবার রাতে তুমব্রু কোনারপাড়া সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ছোড়া মর্টারশেলে শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক যুবক নিহত হন। আহত হন রোহিঙ্গা শিশুসহ ৫ জন।
এর আগে একই দিন দুপুরে এই সীমান্তেই হেডম্যানপাড়ার ৩৫ নম্বর পিলারের ৩০০ মিটার মিয়ানমার সীমান্তের অভ্যন্তরে মাইন বিস্ফোরণে আহত হন বাংলাদেশি এক যুবক। তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলম।
২৮ আগস্ট তুমব্রু উত্তরপাড়ায় একটি অবিস্ফোরিত মর্টারশেল এসে পড়ে। সেদিনই সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার ও যুদ্ধবিমান চক্কর দিতে দেখা যায়। এরপর ৩ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারের দুটি যুদ্ধবিমান ও ফাইটিং হেলিকপ্টার থেকে ছোঁড়া দুটি গোলা ঘুমধুম ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় পড়ে। সেগুলো অবিস্ফোরিত থাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এর তিন দিন পর ফের ওই সীমান্তে ভারী অস্ত্রের বিকট শব্দ ভেসে আসে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ সীমান্তের অভ্যন্তরে মিয়ানমারের মর্টারশেল ছোঁড়ার বিষয়টি প্রয়োজনে জাতিসংঘে উত্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে শনিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা জানান।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু কোনারপাড়া সীমান্তে শুক্রবার রাতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ছোঁড়া চারটি মর্টারশেল এসে পড়ে। এতে শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক যুবক নিহত হন। আহত হয় রোহিঙ্গা শিশুসহ ৫ জন।
ওই ঘটনার এক দিন পর বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া কী হবে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘শুক্রবার একটা রোহিঙ্গা গ্রুপ মিয়ানমারের সীমানার পাশে জিরো লাইনে অবস্থান করছিল। জিরোলাইন মানে আমাদের সীমানা এবং তাদের সীমানার মাঝখানে যে একটা জিরোলাইন থাকে, সেইখানে এই ক্যাম্পটি অবস্থিত। সেই ক্যাম্পে আমরা দেখলাম গোলাবারুদের আঘাতে একজন মারা গেছে এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
‘আমরা এটার তীব্র ভাষায় নিন্দা করছি। আমরা যথাশিগগিরই তাদের এ অবস্থান পরিবর্তন করে এই গোলাবারুদ বন্ধ করার জন্য সব সময় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের ফরেন মিনিস্ট্রি এ ব্যাপারে কাজ করছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, তারা তাদের ভুল বুঝতে পারবে, তারা সংযত থাকবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ করবে না।’ আমরা শান্তিপ্রিয়। আমরা শান্তি রক্ষার্থে যা যা করার করব।’
অপরদিকে, সীমান্ত পরিস্থিতির কারণে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়েছে। শনিবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বাংলা দ্বিতীয় পত্র বিষয়ে এসএসসি পরীক্ষা উখিয়ার কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়।
ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের হল সুপার ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খাইরুল বশর মুঠোফোনে জানিয়েছেন, আমরা রাতেই প্রশাসনের নির্দেশনা পেয়ে কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এসেছি পরীক্ষার সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য। আমাদের কেন্দ্রের ৪১৯ জন পরিক্ষার্থী এখানে বাংলা ২য় পত্রের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভীন তীবরীজি বলেন, সীমান্তের বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে এসএসসি পরীক্ষার্থীবৃন্দ ও তাদের অভিভাবকদের উৎকণ্ঠা বিবেচনায় নিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাকেন্দ্রে আনা-নেওয়ার জন্য দু’টি বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অফিসার ইনচার্জ শেখ মোহাম্মদ আলী।