সিসা দূষণ থেকে শিশুদের রক্ষায় উদ্যোগ নিন

বাংলাদেশের জন্য একটি উদ্বেগজনক খবর দিয়েছে ইউনিসেফ। তারা জানিয়েছে, সিসা দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে চতুর্থ; যাদের মধ্যে সাড়ে তিন কোটির বেশি শিশুর রক্তে ব্পিজ্জনক মাত্রায় ক্ষতিকর এ ভারী ধাতুর উপস্থিতি আছে। মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক জাতীয় কর্মশালায় এসব তথ্য তুলে ধরেছে জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ। সিসাসহ শিশুদের ক্ষতি করে এমন ভারী ধাতুর উৎস সম্পর্কে ধারণা বাড়াতে এবং সিসাদূষণ কমাতে সরকারি ও বেসরকারি খাতের অংশীজনদের সম্পৃক্ত করার বিষয়ে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
এতে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে শিশুদের রক্তে উদ্বেগজনক মাত্রায় সিসার উপস্থিতি, সিসার উৎস ও দূষণের উপায়গুলো দেখানো হয়।
কর্মশালায় বলা হয়, দ্রুত নগরায়ণ ও শিল্পায়ন পরিবেশে ভারর ধাতুর দূষণ বাড়িয়েছে। এর ফলে বাতাস, পানি, মাটি, খাবার, খেলনা, রঙ ও রান্নার সামগ্রীর মাধ্যমে শিশুদের বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে আসার ঝুঁকি বেড়েছে। ফলে স্থায়ীভাবে তারা স্নায়বিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছে।
এরআগে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর, বি) এর সঙ্গে ইউনিসেফ খুলনা, টাঙ্গাইল, পটুয়াখালী ও সিলেট জেলায় ৯৮০ এবং ঢাকায় ৫০০ শিশুর রক্ত পরীক্ষা করে সবার রক্তে সিসার উপস্থিতি পায়। এর মধ্যে চার জেলায় ৪০ শতাংশ এবং ঢাকায় ৮০ শতাংশ নমুনায় প্রতি ডেসিলিটার রক্তে ৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি সিসা পাওয়া যায়, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত ন্যূনতম মাত্রার চেয়ে বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারী ধাতু বিশেষ করে সিসা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের ওপর বেশি প্রভাব ফেলে; যেটি স্থায়ী হয়। এর ফলে শিশুদের মস্তিষ্ক বিকাশের সময়সীমা কমে যায় এবং প্রায় সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে বয়স্কদের হৃদরোগ দেখা দেয়, গর্ভবতী নারীদের অনাগত শিশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুস্পষ্ট আইন বিশেষ করে বেসরকারি খাতের সঠিক ও কার্যকরি পদক্ষেপের মাধ্যমে এ দূষণ প্রতিরোধ করা সম্ভব মন্তব্য করে তিনি বলেন, সেটা করা গেলে এ দূষণের ফলে ভুক্তভোগী নারী ও শিশুদের যে অতিরিক্ত খরচ ও ভোগান্তি হয়, সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে যে বাড়তি খরচ হয়ে থাকে, সেটা অনেকাংশে কমানো সম্ভব হবে।
আমাদের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে খবরটি উদ্বেগজনক। কারণ এদেশে শিল্পকারখানা স্থাপনের সময়ে অনেক বাধ্যবাদকতা মানা হয় না। শিল্পকারখানা আর মানুষের বসতি পাশাপাশি গড়ে উঠেছে। এরফলে শিল্পদূষণ থেকে পরিত্রাণের উপায়ও খুব সংকীর্ণ। কাজেই সরকার তথা শিল্প এবং পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে কঠোর ভূমিকা না নিলে সামনে বিপন্নকর পরিস্থিতি তৈরি হবে।