চবি সংবাদদাতা »
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শাখা ছাত্রলীগের দুই সিনিয়র নেত্রীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে দুই জুনিয়র নেত্রীর বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশনেত্রী খালেদা জিয়া হলে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ নেত্রী প্রভোস্ট বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ভুক্তভোগীরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ও শাখা ছাত্রলীগের উপ ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক সাজমুন নাহার ইষ্টি ও ছাত্রলীগের উপ স্কুল শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সংস্কৃত বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী শিমু আরা সীমা।
অপরদিকে অভিযুক্ত শাখা ছাত্রলীগের উপ তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক তাসফিয়া জাসারাত নোলক ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ ও উপ কৃষি শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক নির্জনা ইসলাম নাট্যকলা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী।
জানা গেছে, তাসফিয়া জাসরাত নোলক ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং বগি ভিত্তিক উপগ্রুপ বিজয়ের অবাঞ্ছিত নেতা মোহাম্মদ ইলিয়াসের অনুসারী। সম্প্রতি চবি ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা ইলিয়াসের বিরুদ্ধে মাদক সরবরাহের অভিযোগ তুলে আজীবন ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান। পাশাপাশি তাকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা।
সূত্র জানায়, ছাত্রলীগ নেত্রী সাজমূল নাহার ইষ্টি ও তার রুমমেট নির্জনা দেশনেত্রী খালেদা জিয়া হলের ২০৩ রুমের আবাসিক শিক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার বিকেলে কোনো একটি বিষয়ে সীমা ও ইষ্টির সাথে নোলক ও নির্ঝনার কথা কাটাকাটি হয়। ওইদিন রাত ৮টার দিকে নির্জনা ও ইস্টি রুমে অবস্থান করছিলেন। এসময় সীমাও সেখানে ছিলেন। এমন সময় নোলক হুট করে তাদের রুমে প্রবেশ করে।
এসময় নোলককে হুটহাট নক না করে রুমে তাদের রুমে প্রবেশ করতে বারণ করেন ইষ্টি। বারণ করার কারণে নির্জনা ও নোলক ইষ্টির সাথে তর্কে জড়ায়। এরপর ইষ্টি নির্জনার মা ও নোলকের বাবাকে এ বিষয়ে ফোন করে জানালে নোলক আবার তার রুমে এসে ইষ্টির সাথে আবার তর্কে জড়ায়। তর্কাতর্কি থেকে হাতাহাতির পর্যায়ে চলে গেলে আগে থেকে রুমে থাকা ছাত্রলীগের উপ স্কুল শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সংস্কৃত বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী শিমু আরা সীমা তাদের থামানোর চেষ্টা নোলক ও নির্জনা তার উপরও চড়াও হয় এবং তাকেও শারীরিকভাবে হেনস্তা করে।
একপর্যায়ে বিষয়টি জানাজানি হলে সিমা আরা শিমুর অনুসারীরা তাসফিয়া জাসারাত নোলকের বহিষ্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। পরে হল প্রভোস্ট ও প্রক্টরিয়াল বডির আশ্বাসে তারা হলে ফিরে যান।
এ বিষয়ে শিমু আরা সীমা বলেন, আমি সিনিয়র হিসেবে তাদের থামানোর চেষ্টা করেছিলাম। এসময় নোলক ও তার বান্ধবী আমার উপর চড়াও হয়ে আমাকেও শারীরিকভাবে হেনস্তা করে।
এ বিষয় ভোক্তভোগী ছাত্রলীগ নেত্রী ইষ্টি জানান, নোলক হুটহাট আমার রুমে ঢুকে পড়ে। এভাবে রুমে না আসতে বলায় নোলক ও তার বান্ধবী নির্ঝনা, যে কিনা আমার রুমমেট আমার সাথে খারাপ আচরণ করে। এ বিষয়ে আমি নির্জনার মা ও নোলকের বাবাকে ফোনে জানাই। এরপর নোলক আবারো আমার রুমে এসে গালাগালি করে। শিমু আপু তাকে থামানোর চেষ্টা করলে সে তাকেও চড় মারে। পরে হলের অন্য শিক্ষার্থীরা আমাদের উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে জানার জন্য অভিযুক্ত নোলককে ফোন করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে প্রথমে প্রথমে ফোন কেটে দেন। পরে আবারো ফোন করা হলে তাকে উলটো মারধর করে হাত মাথায় রক্তাক্ত করা হয়েছে বলেন জানান তিনি। এটুকু বলে কথা শেষ না করে সবার ফোন রিসিভ করতে তিনি বাধ্য না বলে আবারো ফোন কেটে দেন।
এদিকে বাকি ৩ জনের ব্যাপারে আগে কোনোপ্রকার অভিযোগ না থাকলেও নোলকের ব্যাপারে আগে থেকেই বিভিন্ন অভিযোগ ছিল বলে জানিয়েছেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া হলের প্রভোস্ট ড. মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম সোহেল। তিনি বলেন, ইষ্টি ও নির্জনা ও সীমার ব্যাপারে আমাদের কাছে পূর্বে কোন অভিযোগ না থাকলেও নোলকের বিরুদ্ধে প্রক্টর অফিস থেকে আমাদের কাছে আগেই থেকেই অভিযোগ ছিল। সে আইন না মেনে অনেক রাতে পর্যন্ত বাইরে থাকে এবং এ ব্যাপারে নোলকোর বাবাকেও ইনফর্ম করেছে প্রক্টর অফিস।
এ সময় হল প্রভোস্ট আরো বলেন, নিয়ম অনুযায়ী একটা হলবুক মেইন্টেইন করি। নোলক রাত করে হলে আসে, তাকে মৌখিকভাবে এ বিষয়ে আগে সতর্ক করেছিলাম।
ছাত্রীদের এই মারামারির বিষয়ে প্রভোস্ট বলেন, ২০৩ নম্বর রুমের আবাসিক শিক্ষার্থী ইষ্টি ও নির্ঝনার মধ্যে সিট নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। এর জেরে নোলক তাদের রুমে যায় এবং তর্কাতর্কি করে। এক পর্যায়ে তা হাতাহাতিতে রূপ নেয়। এ ঘটনায় যার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হবে তাকে হয়তো হল থেকে বের করে দেয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, ‘ঘটনা যেহেতু হলে ঘটেছে তাই হল প্রভোস্টকে বিষয়টি দেখতে বলেছি। ঘটনাস্থলে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরাও গিয়েছিলেন। শিক্ষার্থীরা প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে তা খতিয়ে দেখা হবে। অভিযুক্তের সংশ্লিষ্টতা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।
প্রসঙ্গত বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন আগে অভিযুক্ত তাসফিয়া জাসারাত নোলককে মাদকদ্রব্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের পাশ থেকে রাত ১২টার দিকে হাতেনাতে ধরেন প্রক্টরিয়াল বডি। পরে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে।