সুপ্রভাত ডেস্ক »
গাজা ও লেবাবনে সামরিক হামলা চালানোর সময় ইসরায়েল সাদা ফসফরাসের যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করেছে বলে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অভিযোগ করেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনটি বৃহস্পতিবার বলেছে, এ ধরনের অস্ত্রের ব্যবহার বেসামরিকদের গুরুতর ও দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে। খবর বিডিনিউজের।
রয়টার্স জানায়, এ অভিযোগের বিষয়ে এক মন্তব্যে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, ‘সাদা ফসফরাস আছে এমন অস্ত্র গাজায় ব্যবহার করা হয়েছে কি না, বর্তমানে আমরা সেটি অবগত নই।’
লেবাননেও ইসরায়েলি বাহিনী এই অস্ত্র ব্যবহার করেছে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এমন অভিযোগের বিষয়ে বাহিনীটি কোনো মন্তব্য করেনি।
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস গত শনিবার ইসরায়েলে আকস্মিক ব্যাপক হামলা চালায়, এতে অন্তত ১৩০০ জন নিহত হয়। এর প্রতিশোধ নিতে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজায় ব্যাপক বোমা হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এতে অন্তত ১৫০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। উত্তর সীমান্তে লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর সঙ্গেও পাল্টাপাল্টি হামলায় লিপ্ত হয়েছে ইসরায়েল।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, তারা ১০ অক্টোবর লেবানন থেকে এবং ১১ অক্টোবর গাজা থেকে ধারণ করা ভিডিও যাচাই করে দেখেছে, সেগুলোতে কামান থেকে ছোড়া গোলায় গাজা শহরের বন্দর এলাকা ও ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তের গ্রামীণ এলাকার ওপরে একাধিক সাদা ফসফরাসের বিস্ফোরণ দেখা গেছে।
মানবাধিকার গোষ্ঠীটি দুটি ভিডিওর লিঙ্ক সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে বলেছে, ‘এগুলো দেখিয়েছে, ১৫৫ মিলিমিটার সাদা ফসফরাসের কামানের গোলা ব্যবহার করা হচ্ছে। স্পষ্টতই ধুম্রজাল তৈরিতে, চিহ্নিত করতে অথবা সংকেত দিতে এগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে।
পোস্ট করা উভয় ভিডিওতেই লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তের কাছের দৃশ্য উঠে এসেছে বলে জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। গাজায় সাদা ফসফরাস ব্যবহার করার অভিযোগ করা হয়েছে যে ভিডিওগুলোর ভিত্তিতে সেগুলোর লিঙ্ক পোস্ট করেনি তারা।
সম্প্রতি ফিলিস্তিনি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর সম্প্রচারিত ভিডিওতে গাজার আকাশে পাতলা সাদা ধোঁয়ার কু-ুলি দেখা গেছে; সাদা ফসফরাসের গোলা ব্যবহারের কারণে এরকম ধোঁয়া তৈরি হয়েছে বলে দাবি করেছে তারা।
রয়টার্স জানিয়েছে, তারা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ভাষ্য স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করে দেখতে পারেনি।
২০০৮-২০০৯ সালে গাজায় আক্রমণ চালানোর সময় সাদা ফসফরাসের গোলা ব্যবহার করেছিল ইসরায়েল। তখন অনেকগুলো মানবাধিকার গোষ্ঠী দেশটির বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনেছিল। ২০১৩ সালে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছিল, তারা সাদা ফসফরাসের যুদ্ধাস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে।
যুদ্ধক্ষেত্রে ধুম্রজাল, আলোকিত পরিস্থিতি তৈরিতে, লক্ষ্যস্থল চিহ্নিত করতে অথবা শত্রুর ব্যাঙ্কার ও ভবন জ্বালিয়ে দিতে সাদা ফসফরাস বৈধভাবেই ব্যবহার করা যায়। বৈধ ব্যবহার থাকায় আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, সাদা ফসফরাসকে রাসায়নিক অস্ত্র হিসেবে নিষিদ্ধ করা হয়নি। কিন্তু এ অস্ত্রের ব্যবহার অগ্নিকা-ের পাশাপাশি মারাত্মক দগ্ধতার কারণ হতে পারে।
ইসরায়েলের সম্ভাব্য স্থল অভিযান নিয়ে সতর্কবার্তা পুতিনের
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) যদি গাজা উপত্যকায় স্থল অভিযান পরিচালনা করে, সেক্ষেত্রে বেসামরিক নিহতের সংখ্যা ‘অগ্রহণযোগ্য’ পর্যায়ে পৌঁছাবে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। শুক্রবার এক বক্তব্যে এই বার্তা দিয়েছেন তিনি।
এক সরকারি সফরে বর্তমানে সাবেক সোভিয়েত অঙ্গরাজ্য কিরগিজিস্তানের রাজধানী বিশকেকে রয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। সেখানে এক আলোচনা সভায় ইসরায়েলের সম্ভাব্য স্থল অভিযান সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আবাসিক এলাকায় ভারী অস্ত্রশস্ত্রের ব্যবহার খুবই জটিল একটি ব্যাপার এবং তার পরিণতিও হবে মারাত্মক। কারণ এই পরিস্থিতি (গাজায়) স্থল অভিযান পরিচালিত হলে সাধারণ বেসামরিক নিহতদের সংখ্যা ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছাবে এবং তা কোনোভাবেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।’ খবর ঢাকা পোস্টের।
২ বছর ধরে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি শেষে ৭ অক্টোবর শনিবার ভোররাতে ইসরায়েলে অতর্কিতে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের গাজা ভূখ-ের নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস। সর্বাত্মক এই হামলার প্রথমদিকে খানিকটা অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়লে ও শিগগিরই তা কাটিয়ে পূর্ণশক্তিতে ময়দানে নামে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী।
হামলার প্রথম দিকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলের বিভিন্ন সামরিক-বেসামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হাজার হাজার গ্রেনেড ছুড়েছে হামাস। জবাবে গাজায় গত ৬ দিন বিমান হামলা চালিয়েছে আইডিএফের বিমান বাহিনী এবং এই সময়সীমায় অন্তত ৬ হাজার বোমা ফেলা হয়েছে উপত্যকায়।
গাজায় বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বেড়ে প্রায় সাড়ে চার লাখ: জাতিসংঘ
অধিকৃত গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলায় চার লাখ ২৩ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। তারা ইসরায়েলি সামরিক হামলার কারণে বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয়ের কার্যালয় (ইউএনওসিএইচএ) জানিয়েছে, গাজায় বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা গত বৃহস্পতিবারের চেয়ে ৮৪ হাজার ৪৪৪ জন বেড়েছে। এখন গাজায় বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা চার লাখ ২৩ হাজার ৩৭৮ জন।
ইউএনওসিএইচএ গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি মানুষের জন্য সাহায্য চেয়েছে। মানুষের ‘জরুরী প্রয়োজন’ মিটাতে ২৯৪০ লাখ ডলারের সাহায্য আবেদন করেছে তারা।
ইউএনওসিএইচএ জোর দিয়ে বলেছে, আরও ১২ লাখ মানুষকে সাহায্য করার জন্য অনুদান প্রয়োজন। তারা বলেছে, সাহায্য সংস্থাগুলোর অরক্ষিত ফিলিস্তিনিদের চাহিদা পূরণের পর্যাপ্ত সম্পদ নেই।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজার ৫০ হাজার অন্তঃসত্ত্বা নারী প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা ও সুপেয় পানি পাচ্ছে না।
শনিবার থেকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত গতকাল পর্যন্ত সপ্তম দিনে গড়িয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের হামলার পর গাজা উপত্যকা অবরুদ্ধ করে সেখানে টানা বোমাবর্ষণ করছে ইসরায়েলি বাহিনী।
১১ লাখ বাসিন্দাকে সরে যেতে বলেছে ইসরায়েল
গাজা শহরের প্রায় ১১ লাখ বাসিন্দাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উত্তরাঞ্চলের নগরীটি ছেড়ে ফিলিস্তিনি ছিটমহলটির দক্ষিণাঞ্চলে চলে যেতে বলেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী।
গাজা ভূখ-ের সীমান্তে ট্যাংক জড়ো করেছে ইসরায়েলি বাহিনী, শিগগিরই তারা সেখানে স্থল হামলা শুরু করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত শনিবার ভোরে হামাসের ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলাটি চালানোর পর থেকে সপ্তাহজুড়ে গাজায় ব্যাপক বোমাবর্ষণ করেছে ইসরায়েল। এতে ১৫০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে গাজার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইওভ গ্যালান্ট বলেছেন, এখন সময় যুদ্ধের।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, আসছে দিনগুলোতে তারা গাজা শহরে ‘উল্লেখযোগ্য মাত্রায়’ তৎপরতা চালাবে আর শুধু পরবর্তী ঘোষণা দেওয়ার পরই কেবল বেসামরিকরা শহরটিতে ফিরতে পারবেন।
জাতিসংঘ বলেছে, তাদের বিবেচনায় ‘ধ্বংসাত্মক মানবিক পরিণতি’ ছাড়া এ ধরনের স্থানান্তর সম্ভব নয়।
জাতিসংঘের মুখপাত্র স্তিফেন দুজারিক এক বিবৃতিতে বলেছেন, “এই ধরনের কোনো আদেশ যদি নিশ্চিত হয় তাহলে জাতিসংঘ জোরালোভাবে তা বাতিলের আবেদন জানায়, কারণ এটি ইতোমধ্যেই শোচনীয় হয়ে ওঠা অবস্থাকে বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে রূপান্তর করতে পারে।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান গাজাবাসীদের প্রতি ইসরায়েলের আগাম সতর্কবার্তার নিয়ে জাতিসংঘের এই প্রতিক্রিয়াকে ‘লজ্জাজনক’ বলে বর্ণনা করেছেন।
এদিকে হামাসের এক কর্মকর্তা বলেছেন, গাজায় বিষয়ে এই সতর্কবার্তা একটি ‘ভুয়া প্রচারণা’। গাজা শহরের বাসিন্দাদের ‘এর খপ্পরে না পড়ার’ আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে, ইসরায়েলে চালানো ফিলিস্তিনি হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া হামাসকে নির্মূল করার প্রত্যয় জানিয়েছে ইসরায়েল, কিন্তু ওই হামলার সময় হামাস বহু ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের বন্দি করে গাজায় রেখে দেওয়ায় সেখানে স্থল হামলা চালানো খুব ঝুঁকিপূর্ণ হবে।
ইসরায়েলের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম কান বলেছে, ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের হামলায় ইসরায়েলে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ১৩০০ ছাড়িয়ে গেছে।
ওই হামলার পর থেকে ২৩ লাখ বাসিন্দার ভূখ- গাজাকে পুরোপুরি অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। সেখানে খাদ্য, পানি ও বিদ্যুতের মতো নিত্য প্রয়োজনীয় সরবরাহও বন্ধ করে দিয়েছে তারা। জ্বালানির অভাবে গাজার একমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটি (আইসিআরসি) বলেছে, গাজার হাসপাতালগুলোতে জ্বালানি চালিত জরুরি জেনারেটরগুলো আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী (ডব্লিউএফপি) সতর্ক করে বলেছে, গাজায় খাবার ও পানযোগ্য পানির সরবরাহ বিপজ্জনকভাবে কমে গেছে।