সুপ্রভাত ডেস্ক »
বান্দরবানের রোয়াংছড়ির সদর ইউনিয়নের খামতাম পাড়ায় পাহাড়ি দুই সশস্ত্র গোষ্ঠীর গোলাগুলিতে আটজন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে রোয়াংছড়ির খামতাম পাড়া থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। স্থানীয়রা বলছেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি সশস্ত্র দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।
তাদের দাবি, বৃহস্পতিবার রাতে পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস সংস্কার) সদস্যদের গোলাগুলি হয়। পরে শুক্রবার সকালে সেখানে গিয়ে জলপাই রঙের পোশাক পরিহিত আট জনের মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন তারা। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহগুলো উদ্ধার করে।
তারা বলছেন, মূলত ওই এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে পুলিশ বলছে, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কেএনএফ ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) মধ্যে এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।
দুপুরে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা পুলিশ। এতে জেলা পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘পাহাড়ের দুটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। ওই এলাকায় মূলত ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) আধিপত্য বেশি। আধিপত্য নিয়েই কেএনএফের সঙ্গে তাদের গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।’
আট মরদেহ নেওয়া হয়েছে মর্গে
এদিকে কেএনএফ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছে, তাদের সাত সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। নিহত সাত সদস্য হলেন- ভান দু বম, সাং খুম, সান ফির খাং বম, বয়রেম বম, জাহিম বম, লাল লিয়ান বম ও লালঠা জার বম। তবে নিহত আরেক জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। খবর বাংলাট্রিবিউন।
পুলিশ সুপার বলেন, ‘কী নিয়ে এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে, তা তদন্ত না করে বলা যাচ্ছে না। আমরা তদন্ত করছি। পাহাড়ে যৌথ অভিযান চলছে। এর মধ্যেই এই ঘটনা। এই যৌথ অভিযান চলবে। ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
রোয়াংছড়ি থানার ওসি আবদুল মান্নান বলেন, ‘খামতাম পাড়া এলাকা থেকে আট জনের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহগুলো বান্দরবান সদর হাসপাতাল মর্গে আনা হয়েছে।’
বাড়িঘর ছেড়েছেন স্থানীয়রা
নিরাপত্তার অভাবে পাড়ার ১৭৫টি পরিবার রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে অবস্থান নিয়েছেন।খামতাম পাড়ার কারবারি মানিক খিয়াং বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ওই সময় ভয়ে অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে চলে যায়। এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক পরিবার বাড়ি ছেড়ে বলে জেনেছি। এর মধ্যে অনেকে আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে।’
রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উ হ্লাং মং মার্মা বলেন, ‘উপজেলা সদরের বম কমিউনিটি সেন্টারে ৪০ জন নারী ও শিশু এসে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।’
রোয়াংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খোরশেদ আলম বলেন, ‘ওই পাড়ায় ১৭৫টি পরিবার আতঙ্কে রোয়াংছড়ি রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের দেখভাল করছে উপজেলা প্রশাসন। তাদের খাবারসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে খোঁজ রাখা হচ্ছে। ওই এলাকা শান্ত হলে তাদের ফেরত পাঠানো হবে।’
ঘটনার পরপরই খামতাম পাড়া এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার। তিনি বলেন, ‘ওই এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কতজন এলাকা ছেড়েছে তার তথ্য আমাদের কাছে নেই। আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি। পাহাড়ের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।’