সর্বজনীন পেনশনের নতুন যুগে প্রবেশের মধ্য দিয়ে কল্যাণ রাষ্ট্রের পথে আরও একধাপ অগ্রসর হলো বাংলাদেশ। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ পেনশন কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার কথা। এ জন্য ‘ইউপেনশন’ নামের একটি ওয়েবসাইটও তৈরি করা হয়েছে। এরই মধ্যে পেনশনের বিধিমালার গেজেটও প্রকাশ করা হয়েছে। নতুন এই স্কিমে দেশের ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সের যেকোনো নাগরিক যুক্ত হতে পারবেন। মোট চার ধরনের স্কিমে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট হারে অর্থ জমা দিয়ে মেয়াদান্তে বাড়তি মুনাফাসহ তা ফেরত পাওয়া যাবে। এটা অনেকটা সরকারি পেনশনের মতো। এতদিন সরকারি চাকরির বাইরে থাকা চাকরিজীবীদের এ নিয়ে আক্ষেপ ছিল। এই স্কিম চালু হওয়ায় এবার তাদের আক্ষেপ করতে হবে না। স্কিমগুলো হলো প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা। প্রবাস স্কিমে মাসে ১০ হাজার টাকা জমা করে প্রবাসীরাও এ সুবিধায় যুক্ত হতে পারবেন।
বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য রয়েছে প্রগতি কর্মসূচি। সুরক্ষা স্কিম হচ্ছে অনানুষ্ঠানিক খাত অর্থাৎ স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য আর সমতা স্কিম হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে ৫০ বছরের বেশি বয়সীরাও যেকোনো ধরনের পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। যদিও তাঁদের পেনশন কর্মসূচিটি কী হবে, তা এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি।
প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক যাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নেই, তাঁরা পাসপোর্টের ভিত্তিতে নিবন্ধিত হতে পারবেন। নিম্ন আয়ের মানুষের স্কিম সমতায় অংশগ্রহণকারীদের মাসিক চাঁদার অর্ধেক দেবে সরকার। সমতা কর্মসূচিতে একজন অংশগ্রহণকারীকে মাসে দিতে হবে ৫০০ টাকা, এর বিপরীতে সরকার দেবে আরও ৫০০ টাকা। এভাবে কেউ যদি ৪২ বছর ১ হাজার টাকা করে জমা দেন, তাহলে মেয়াদ শেষে তিনি মাসে পেনশন পাবেন ৩৪ হাজার ৪৬৫ টাকা করে।
বিধিমালায় বলা হয়েছে, পেনশনের চাঁদা জমা দিতে হবে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে। আর জমা দেওয়া যাবে অনলাইন ব্যাংক, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান এবং তফসিলি ব্যাংকের যেকোনো শাখার মাধ্যমে।
চালু হলে এটি হবে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সমতা স্কিম যেখানে একজন ৫০০ টাকা জমা করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সরকারের পক্ষ থেকে আরও ৫০০ টাকা জমা করা। এত জনসংখ্যার দেশে সব নাগরিককে পেনশনসুবিধার অধীনে আনা খুব সহজ কাজ নয়। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা, আন্তরিক ও সাহসের প্রশংসা করতেই হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দারিদ্র্যমুক্ত একটি সমৃদ্ধ দেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। এই কর্মসূচি সে ক্ষেত্রে একটি বড় অবদান রাখবে। কোটি মানুষের অবসর জীবনকে স্বচ্ছলভাবে কাটাতে ভূমিকা রাখবে। আশা করব সরকারের এই মহতী উদ্যোগ সকলের প্রচেষ্টায় সফল হবে।