সুপ্রভাত বিনোদন ডেস্ক »
মাদক মামলায় কারাগারে চিত্রনায়িকা পরীমণি। এই নায়িকার আরও একটি পরিচয়- তিনি ছিলেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সদস্য। এমনকি সংগঠনটির সক্রিয়দের একজন পরী।
ফেসবুকে পরীমণির করা ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগের পর তিনি প্রকাশ্যে জানান, শিল্পী সমিতি নেই তার পাশে। আর এর পরপরই মাদক কাণ্ডে গ্রেফতার হন পরী। এতেই তার বিরুদ্ধে পুরো বেঁকে বসে চলচ্চিত্র শিল্পীদের ‘কল্যাণে’ কাজ করা এই সমিতি।
৪ আগস্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে পরী আটকের তিন দিনের মধ্যে সংবাদ সম্মেলন ডেকে তার সদস্যপদ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের সঞ্চালনায় এসময় বিবৃতি পাঠ করেন সভাপতি মিশা সওদাগর। আর ঠিক পাশে বসে ছিলেন দুই সহ-সভাপতি রুবেল ও ডিপজল।
কাকতালীয় বিষয় হলো, মামলা ও গ্রেফতারের ঘটনায় পরীর বিরুদ্ধে করা এ সংবাদ সম্মেলনের মধ্যমণিদের অন্যতম রুবেল ও ডিপজলের বিরুদ্ধেই হয়েছে একাধিক মামলা।
২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে গ্রেফতার হন ডিপজল। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র। দুর্নীতি দমন কমিশন ডিপজল ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধেও মামলা করেছিল। ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে সিগনাল ভঙ্গ করে পুলিশকে মারধরের ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। রাজনৈতিক দল বিএনপির হরতালে গাড়ি পোড়ানোর মামলায়ও তাকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তবে এসব মামলা বানোয়াট ভিত্তিহীন ও শেষ হয়েছে বলে দাবি তার।
অন্যদিকে, ২০১৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি, এক জমি একাধিকবার বিক্রির অভিযোগে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রুবেলসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা দায়ের হয়। জামিনে থাকা চিত্রনায়ক রুবেলের দাবি, পরিস্থিতির শিকার তিনি।
আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্তভার পড়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ওপর। বাদীর নারাজিতে আদালত মামলা তদন্তের নির্দেশ দেন সিআইডিকে।
বিষয়টি নিয়ে ২৩ আগস্ট কথা হয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘ডিপজল ভাই তো একসময়ে সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি তো নিয়ম জানেনই। আর রুবেল ভাইয়ের বিরুদ্ধে যে মামলা চলমান, তা আমি জানি না। বা আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ দেয়নি। যদি কেউ দিতেন, আমরা আমাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতাম।’
পরপর দুইবারের নির্বাচিত এ সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘শুধু মামলা নয়, শিল্পীকে গ্রেফতার হতে হবে। পাশাপাশি সেটা যদি সমিতির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে তবেই আমরা সাময়িকভাবে তার সদস্যপদ স্থগিত করবো। যেটা পরীমণির ক্ষেত্রে হয়েছে।’
এদিকে, মামলা শুধু রুবেল বা ডিপজল নয়, হয়েছিল সমিতির সাতবারের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আহমেদ শরীফের বিরুদ্ধেও। চেক জালিয়াতির মামলায় ২০১৮ সালের এপ্রিলে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
তাকে তিন মাসের কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা জরিমানা করেন আদালত। সেসময়েও চেয়ারে ছিলেন সমিতির বর্তমান সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানই। তবে আহমেদ শরীফের বিরুদ্ধে তেমন কোনও পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি তাদের।
এক্ষেত্রেও বিষয়টি নিজের গোচরে নেই জানিয়ে সিদ্ধান্তের বিষয়ে জায়েদ বলেন, ‘শিল্পী সমিতির সিদ্ধান্ত জায়েদ খান একা নেন না। মিশা সওদাগরও না। পরীমণির বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে সেটা কমিটির ২১ জন সদস্যের। এমনকি আমরা আমাদের সিনিয়র শিল্পী আলমগীর, ইলিয়াস কাঞ্চন, সোহেল রানাসহ সবার সঙ্গে কথা বলে নিয়েছি।’
তিনি মনে করেন, বিষয়টি এখন ব্যক্তিগত আক্রমণের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাকে চেপে ধরতেই সমিতিকে কাঠগড়ায় নেওয়া।