রাজিব শর্মা »
নিত্যপণ্যের উর্ধ্বগতির বাজারে স্বস্তি বার্তা নিয়ে এসেছে শীতকালীন শাকসবজি। ইতোমধ্যে নগরীর বাজারগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ এসেছে শীতের শাকসবজি। ক্রেতাদের চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বা যোগান বাড়তি থাকায় প্রায় সবজির দাম কমেছে বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর রিয়াজউদ্দিন ও বক্সিরহাট কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন আলু, মুলা, শিম এবং বেগুনের দাম কেজিতে ৫ থেকে ২০ টাকা কমেছে। তবে ভরা মৌসুমেও শসা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা আর পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে। অন্যদিকে অপরিবর্তিত রয়েছে মাছ, মাংস এবং ডিমের দাম।
শশা, টমেটো ও গাজরের দাম অপরিবর্তিত থাকার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলেরিয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক বলেন, বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ শাকসবজি এসেছে। যার কারণে অধিকাংশ সবজির দাম কমেছে। কেবল শসা ও টমেটোর দাম বেশি। এ সবজি দুটো বেশি দামে কেনা হয়, তাই বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে।
বক্সিরহাটের সবজি ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘শীতকালে সাধারণত বিভিন্ন অনুষ্ঠান থাকার কারণে কাঁচামরিচ, শশা, গাজর ও টমেটোর চাহিদা বেশি। যার কারণে অনান্য সবজির দাম কমলেও এসব সবজি কমছে না।’
অন্যদিকে ভোক্তাদের অভিযোগ, ‘এ বছর শীতকালে যথেষ্ট সবজি বাজারে এসেছে। কিন্তু অন্যান্য বছরের মতো তেমন দাম কমছে না। বরং দাম অনেক বেশি।’
রিয়াজউদ্দিন বাজারে আসা ক্রেতা আজমল হোসেন বলেন, ‘আজকেও শিম কিনতে হয়েছে ৪৫ টাকা কেজিতে। মাঝারি মানের ফুলকপি কিনতে হয়েছে ৩৫ টাকা করে। এখন সবজির মৌসুম; যেভাবে দাম কমবে বলে আশা করছিলাম সেভাবে কমছে না।’
নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিকেজি পুরোনো আলু বিক্রি হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজিতে। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ২৫ টাকা কেজিতে। আর নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজিতে। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা কেজিতে।
এক সপ্তাহ আগে ৪৫-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকা কেজিতে। ৫০ টাকা কেজির শিম বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা কেজিতে। ৩০-৪০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া মুলা বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকা কেজিতে। ৮০ টাকা কেজির বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজিতে। পটল ও লতির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজিতে। আর ৩০ টাকা কেজির পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকা কেজিতে। পেঁয়াজসহ পাতা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজিতে। তবে শসা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে। পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৭০-৯০ টাকা কেজি।
অন্যদিকে কাঁচামরিচের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ১৫ টাকা বেড়েছে। এ সপ্তাহে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজিতে। যা সপ্তাহ আগেও ছিল ৩০ টাকা কেজি। ঢেঁড়সের কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, করলা ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং গাজর বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজিতে।
এছাড়া প্রতি পিস লাউ ৩০ থেকে ৪০ টাকা, আকারভেদে ফুলকপি ৩০-৩৫ টাকা, বাঁধাকপি ৩০-৪০ টাকা এবং লালশাক ও মুলাশাক প্রতি আঁটি ১০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
কাজির দেউড়ি, বক্সির হাট মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাঙ্গাস মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজিতে। আকারভেদে গলদা চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৭০০-১১০০ টাকা কেজিতে। মাঝারি মানের রুই ও মৃগেল মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩২০ টাকায়। বড় রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩৫০ টাকায়। পুঁটি মাছ ২৫০ টাকা, কাতল মাছ ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা, শিং মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৪০০ টাকা, টাকি মাছ ৪০০ টাকা, বড় সাইজের রূপচাঁদা ৭০০-৮০০ টাকা, বোয়াল ৬৫০-৭০০ টাকা, এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা এবং এক কেজির কম ওজনের ইলিশ ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাংসের বাজার ঘুরে দেখা গেছে,ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৬৫ টাকা কেজিতে। দেশি মুরগি কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা। অন্যদিকে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ৮৫০-৯০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, মাংসের বাজার গত দুই মাস ধরে অপরিবর্তিত রয়েছে। যা আর কমার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করেন তারা।
অন্যদিকে পাইকারি বাজারে ডজনপ্রতি ১১৪ টাকা ও খুচরা বাজারে ১২০ টাকায় মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ ৪০ টাকা হালিতে। দেশি মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকা ও আমদানি করা মসুর ডাল (তুরস্ক/কানাডা) ১০০ থেকে ১০৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে কেজিতে। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকা কেজিতে।