নিজস্ব প্রতিবেদক »
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ছয় তলায় বার্ন ইউনিটের সামনে শুয়ে আছে ৪২ বছর বয়সী অগ্নিদগ্ধ খোকন বসাক। শরীরের উপরের অংশ পুড়ে যাওয়ায় সেখানে ব্যান্ডেজ লাগানো আছে। যন্ত্রণায় কাতর খোকনের শরীরের শ্বাসনালীসহ পুড়েছে ২০ শতাংশ।
কাছে গিয়ে জানা যায়, পরিবারের সবাইকে হারানোর শোক তাকে খুবলে ধরেছে। যে সন্তানের ডাকে ঘুম থেকে ওঠে তিনি নিজেকে বাঁচিয়ে নিলেন, সেই সন্তানকে আগুন থেকে মৃত উদ্ধারের যন্ত্রণায় তিনি কাতর।
অগ্নিকা-ের ঘটনা নিয়ে দগ্ধ খোকন বসাক বলেন, দুই শিশু সন্তানের ডাকে ঘুম ভাঙার পর দেখি আমার ঘর জ্বলছে। এরপর তাদেরসহ বাবা-মা ও স্ত্রীকে নিয়ে জড়ো হই বারান্দায়। তখন ঘরের সব ক’টি রুম পুড়ছে। আগুন নেভানোর চিন্তায় আমি বের হয়ে যাই। বাইরে গিয়ে পাগলের মতো চেঁচিয়েছি। কাউকে পাইনি। আগুন এতো বেড়ে গিয়েছিলো যে কাউকে আর বের করতে পারছিলাম না। নলকূপের পানি দিয়ে নেভানোর অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমি একা আর পারিনি। চোখের সামনে আমার পুরো পরিবার জ্বলে মরেছে ওই বারান্দায়।
কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘আমিতো বাঁচতাম না। আমার ছোট মেয়ে শায়ন্তী চিৎকার করে বলছিলো, ‘বাবা আগুন, বের হও, বের হও।’ আমার মেয়ের চিৎকারে আমার ঘুম ভাঙে। আমি বের হয়ে বেঁচে যাই। কিন্তু আমার মেয়েকে বের করতে পারিনি। আমার বাবা, মা, স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে সবাই পুড়ে গেছে। কাউকে বাঁচাতে পারিনি।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ২ টার দিকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পারুয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মহাজন পাড়ায় এই ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। বসতঘরে একটি মাত্র দরজা এবং প্রচুর পরিমাণ লাকড়ি থাকায় অগ্নিকা-ে মারা যান কাঙ্গাল বসাক (৭০), ললিতা বসাক (৬০), লাকী বসাক (৩২), সৌরভ বসাক (১২), শায়ন্তী বসাক (৪)। আর ২০ শতাংশ আগুনে পুড়ে বেঁচে যান সিএনজি অটোরিকশা চালক খোকন বসাক। তার বাম হাত, বুক ও পিঠ পুড়ে গেছে। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, তার শ্বাসনালীর কিছু অংশও পোড়া গেছে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে চিকিৎসা নিতে এলেও বন্ধের দিন হওয়ায় চিকিৎসকদের দেখা মিলছে না বলে জানিয়েছেন খোকনের স্বজন টিপলু বসাক।
তিনি বলেন, আগুনে পুরো পরিবার পুড়ে যাওয়া খোকন দগ্ধ শরীর নিয়ে আহাজারি করছিল। এক পর্যায়ে খোকনও আগুনে ঝাপিয়ে পড়ার চেষ্টা করে। আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে দেরি হওয়ায়, আমরাও কিছু করতে পারিনি। পরে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের সহযোগিতায় দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। মেডিক্যালে আনার পর খোকনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বলেছে, শ্বাসনালীও কিছুটা পুড়েছে। কিন্তু বন্ধের কারণে আজকে (শুক্রবার) কোনো ডাক্তার তাকে দেখতে আসেনি।’
রাঙ্গুনিয়া ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা কামরুজ্জামান সুমন বলেন, বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ২ টার দিকে আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি খোকন বসাক দগ্ধ অবস্থায় বেরিয়ে আসেন। কিন্তু ঘর থেকে বের হওয়ার দরজা একটা হওয়ায় অন্যরা বের হতে পারেনি। তারা সেখানেই পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায়। লাকড়ির চুলা থেকেই আগুনের সূত্রপাত ঘটে বলে ধারণা করছি।’