আজ শুভ বিজয়া দশমী। দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড়ো ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার সমাপ্তি ঘটবে দেবী দুর্গার প্রতিমা নিরঞ্জনের মাধ্যমে। পাঁচদিনব্যাপী ধর্মীয় উৎসব এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে অত্যন্ত অনাড়ম্বরভাবে উদযাপিত হয়েছে। দর্শনার্থীদের ম-পে দলবদ্ধভাবে প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা ছিল। করোনার মতো মহামারি থেকে রক্ষা পেতে পূজার্থী নরনারী দেবী দুর্গার কাছে প্রার্থনা জানিয়েছেন। বাঙালি সনাতন সম্প্রদায় লোকাচার আর সামাজিকÑসংস্কৃতির মাধ্যমে দুর্গোৎসবকে ইহ জাগতিকতার অনন্য অনুষ্ঠানে রূপ দিয়েছে। দেশের সর্বত্র নির্বিঘেœ দুর্গাপূজা সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে। সুশৃঙ্খল ও সম্প্রীতির সাথে পুজার অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে।
সনাতন শাস্ত্রীয় মতে, রাজ্যহারা রাজা সুরথ রাজ্য পুনরুদ্ধারে মেধসমুনির পরামর্শে বসন্তকালে দেবী দুর্গার পূজা করেছিলেন, আমাদের দেশে এটি বাসন্তী পূজা নামে পরিচিত। শ্রী রামচন্দ্র রাবন বধ এবং সীতা উদ্ধারে দেবী দুর্গার আরাধনা করেছেন শরৎকালে দেবীর অকাল বোধন করে। শরৎকালে এই পূজার আয়োজন করা হয় বলে এটি শারদীয় দুর্গাপূজা হিসেবে অভিহিত। তবে এবার পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে হেমন্তকালে শাস্ত্রীয় বিধিনিষেধের কারণে। অশুভ শক্তির প্রতীক অসুরকে সংহার করে দেবী দুর্গা জগতে শান্তি ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠা করেন। এর একটি প্রতীকী তাৎপর্যও আছে। সকল অন্যায়, অশুভ শক্তিকে পরাভূত করে সম্প্রীতি, শান্তি ও নিরাপদ জীবন প্রতিষ্ঠা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব হোক।
দুর্গাপূজার সময় প্রকৃতিতে নির্মল আর অনাবিল সৌন্দর্য বিরাজ করে। কাশফুলের শুভ্রতা আর শিউলি ঝরা সকাল গ্রামীণ প্রকৃতিকে আরো মোহময় করে তোলে। গ্রামীণ আবহে দুর্গাপূজায় লোকসমাজের আনন্দ বহুগুণ বেড়ে যায়। শহরÑগঞ্জের মানুষ এই সময় শেকড়ের টানে গ্রামে ফিরে আসে। সকল ধর্মের মানুষ এ কয়দিন সম্প্রীতির মাধ্যমে শাশ্বত বাঙালি জীবনের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।
শারদীয় দুর্গোৎসব আমাদের অর্থনীতি ও নানা মাত্রার সামাজিকÑসাংস্কৃতিক বিকাশও ঘটায়। ব্যবসা বাণিজ্যে গতি আসে। তবে করোনার কারণে এবার মানুষের আনন্দÑবিনোদনে কিছুটা হলেও ভাটা পড়েছে। বাংলাদেশের সমাজÑসংস্কৃতি এই ধর্মীয় উৎসবে মানবিক উজ্জ্বলতা লাভ করে।
প্রত্যেক ধর্মেই আছে শুভ আর কল্যাণের বার্তা, মানুষ যখন নিজের ধর্ম পালনের পাশাপাশি মানবধর্ম পালন করে তখনই ধর্ম পরিপূর্ণতা লাভ করে। গড়ে ওঠে মানবিক সমাজ। করোনার এই ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে এক শ্রেণির দুর্বৃত্ত নানা দুষ্কর্ম আর অপরাধে লিপ্ত, নারী ও শিশুর প্রতি অত্যাচার নির্যাতন বেড়ে চলেছে। তবে এটা সত্য যে দানবের আস্ফালন চিরস্থায়ী নয়, তার বিনাশ অনিবার্য। দেশের মানুষ দানবের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলে অশুভ আর অন্যায়ের শক্তি পরাজিত হবে।
আমরা আশা করি সকল ধর্মের মানুষ ন্যায়বোধ ও মানবধর্মের দর্শনে উজ্জীবিত হয়ে দেশ ও জনগণের সমৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করবে। তবেই দেশ গৌরবের আসনে অধিষ্ঠিত হবে।
শুভ বিজয়া দশমী উপলক্ষে আমরা সনাতন সম্প্রদায়ের সকলকে শুভেচ্ছা জানাই।
মতামত সম্পাদকীয়