সুপ্রভাত ডেস্ক
উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়ার দেরনা শহরে ভয়াবহ বন্যার পর নিখোঁজ হাজার হাজার মানুষের খোঁজে মরিয়া অনুসন্ধান বুধবার তৃতীয় দিনে প্রবেশ করেছে। ভয়াবহ এই বন্যায় হাজার হাজার মানুষ ইতোমধ্যেই নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।
এমনকি মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া বন্যার পর আরও প্রায় ১০ হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
আফ্রিকার এই দেশটির পূর্বাঞ্চলে সোমবার আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েল। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সেখানে প্রবল বৃষ্টিপাত হয় এবং পরে বৃষ্টির পানির চাপে দেরনা শহরের কাছে নদীর ওপর দেওয়া দুটি বাধ ধসে পড়ে। মূলত সেই বাঁধের পানির কারণেই সেখানে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। খবর ঢাকা পোস্টের।
রয়টার্স বলছে, বাঁধ ধসে পড়ার পর ভূমধ্যসাগরীয় শহর দেরনার এক-চতুর্থাংশ বা তারও বেশি অংশ কার্যত ধ্বংস হয়ে গেছে এবং বাসিন্দাদের পাশাপাশি সেখানকার অনেক ভবনকেও ভাসিয়ে নিয়ে গেছে পানি।
লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় কর্মকর্তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৫ হাজারের বেশি। শহরের হাসপাতালের একজন পরিচালক গত সোমবার রয়টার্সকে জানান, তার হাসপাতালে ১৭০০ মরদেহ গণনা করা হয়েছে এবং আরও ৫০০ জনকে শহরের অন্য অংশে দাফন করা হয়েছে।
এছাড়া এখনও প্রায় ১০ হাজার মানুষ নিখোঁজ বলে অনুমান করা হচ্ছে। নিখোঁজদের অনেককে বন্যার পানি সমুদ্রে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রয়টার্স বলছে, মঙ্গলবার দেরনা পরিদর্শনকারী রয়টার্সের সাংবাদিকরা হাসপাতালের করিডোরের মেঝেতে অনেক মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেছেন এবং সময়ের সাথে সাথে সেখানে আরও মৃতদেহ আনা হচ্ছিল। এছাড়া মৃতদেহ আনার সঙ্গে সঙ্গে নিখোঁজ ব্যক্তিদের আত্মীয়রাও সেগুলো শনাক্তের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ছিলেন।
মুস্তফা সালেম নামে দেরনার একজন বাসিন্দা রয়টার্সকে বলেছেন, তিনি এখনও পর্যন্ত তার পরিবারের ৩০ জন সদস্যকে হারিয়েছেন।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, বাঁধের পানির কারণে সৃষ্ট বন্যা হাজার হাজার মানুষকে সমুদ্রের দিকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। সেই বন্যাটিকে অনেকে সুনামির মতো আখ্যায়িত করেছেন। বন্যার পানির তোড়ে অনেক এলাকাই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। সমুদ্রের পানিতে যেসব মানুষ ভেসে গেছেন তাদের মরদেহ পানি থেকে উদ্ধার করতে হিমশিম খাচ্ছেন উদ্ধারকারীরা।এদিকে ভয়াবহ এই বন্যার পানিতে ডুবে বা ভেসে গিয়ে এখন পর্যন্ত ৫ হাজার ৩০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে লিবিয়ার স্বঘোষিত পূর্বাঞ্চলের সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে প্রাণহানির এ সংখ্যাটি নিশ্চিত করতে পারেনি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো।
লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিপর্যস্ত দেরনা শহরে গিয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, সেখানকার অবস্থা বেশ খারাপ।
এই পরিস্থিতিতে বুধবার সাহায্যের জন্য গাড়ির কনভয় এবং বুলডোজার বহনকারী বহু ট্রাক দেরনা শহরের দিকে রওনা দিয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। শহরটিতে এই বন্যা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। শহরের রাস্তাগুলোও কাদা এবং ধ্বংসাবশেষে ঢেকে গিয়ে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
অবশ্য লিবিয়া রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত থাকায় সেখানে উদ্ধার অভিযান পরিচালনাও বেশ জটিল কাজ হয়ে উঠেছে। লিবিযার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকার দেশটির পশ্চিমে ত্রিপোলিতে অবস্থিত।
অন্যদিকে দেরনা শহরটি পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় অবস্থিত যেখানে আরেকটি সমান্তরাল প্রশাসন কাজ করে। আর এই প্রশাসন কমান্ডার খলিফা হাফতারের লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
ত্রিপোলি-ভিত্তিক সরকারের প্রধান এবং লিবিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবদুলহামিদ আল-দাবিবাহ মঙ্গলবার বলেছেন, বন্যা নজিরবিহীন বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। এছাড়া জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট কাউন্সিলের প্রধান মোহাম্মদ আল-মেনফি।
লিবিয়ায় বন্যায় ৬ বাংলাদেশির মৃত্যু
সর্বশেষ পাওয়া তথ্যমতে ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলের প্রভাবে লিবিয়ার দারনা শহরে বসবাসরত ৬ বাংলাদেশি নাগরিক মৃত্যুবরণ করেছে। তাদের ৪ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন— রাজবাড়ি জেলার শাহীন ও সুজন এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার মামুন ও শিহাব। তবে দূতাবাসের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আরও ২ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি। এছাড়া দারনা শহরে বসবাসরত আরও কিছু সংখ্যক বাংলাদেশি নিখোঁজ থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে।