সুপ্রভাত ডেস্ক :
মাইলের পর মাইল দিগন্ত জুড়ে ফুটছে নয়নাভিরাম লাল শাপলা। প্রতিদিন অসংখ্য প্রকৃতিপ্রেমীরা এই লাল শাপলার বিল এক নজর দেখার জন্য দূর দূরান্ত থেকে এসে ভীর জমাচ্ছেন আগৈলঝাড়ার নিন্মাঞ্চল বাগধা এলাকায়। বলছি বরিশালের আগৈলঝাড়ায় বিলাঞ্চলের কথা। অনেকে আবার বন্ধু বান্ধব পরিবার পরিজন নিয়ে লাল শাপলার বিলে ছোট ডিঙ্গি নৌকা ভাড়া করে নৌকা ভ্রমণ করে মনের তৃপ্তি মেটাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাগধা গ্রামে বিলের মাইলের পর মাইল শুধু লাল শাপলা আর লাল শাপলা। এ যেন এক লাল শাপলার রাজ্য। তবে অনেকে পিরোজপুর, ভান্ডারিয়া, নলছিটি, কাউখালি, ইন্দ্রের হাট থেকে লোকজন এসে বড় ট্রলারে করে লাল শাপলা তুলে নিয়ে যাচ্ছে তাদের এলাকায় বিক্রি করার জন্য।
বর্ষা থেকে শরতের শেষ পর্যন্ত বিলাঞ্চলের জলাশয়ে ও নিচু জমিতে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয় লাল শাপলা। এই শাপলা মানুষের খাদ্য তালিকায় আবহমানকাল থেকে যুক্ত রয়েছে। কয়েক বছর আগেও বর্ষা এবং শরতের সকালে দিগন্ত জোড়া খাল-বিলে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকত লাল শাপলা। তবে অধিক ফলনের লক্ষ্যে জমিতে অধিক মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ, জলবায়ু পরিবর্তন, খাল-বিল ও জলাশয় ভরাটের কারণে আগৈলঝাড়া উপজেলার বিলাঞ্চল থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে লাল শাপলা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দোলন চন্দ্র রায় সাংবাদিকদের জানান, শাপলা দুই রংয়ের হয়ে থাকে- লাল ও সাদা। এর মধ্যে সাদা ফুল বিশিষ্ট শাপলা সবজি হিসেবে ও লাল রঙ্গের শাপলা ওষুধি গুণে সমৃদ্ধ।
সাধারণ শাক-শবজির চেয়ে এর পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। শাপলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। শাপলায় ক্যালসিয়ামের পরিমাণ আলুর চেয়ে সাতগুণ বেশি।
তিনি আরো জানান, লাল শাপলা চুলকানি ও রক্ত আমাশয়ের জন্য বেশ উপকারী। প্রতি ১০০ গ্রাম শাপলায় রয়েছে খনিজ পদার্থ ১.৩ গ্রাম, ফাইবার ১.১ গ্রাম, খাদ্যপ্রাণ ১৪২ কিলোগ্রাম, ক্যালোরি-প্রোটিন ৩.১ গ্রাম, শর্করা ৩১.৭ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৭৬ মিলিগ্রাম।
আবার শাপলার ফল দিয়ে চমৎকার সু-স্বাদু খৈ ভাজা যায়। এই ফলটি গ্রামগঞ্জে ঢ্যাপের খৈ নামে পরিচিত। মাটির নিচের মূল অংশকে (রাউজোম) আঞ্চলিক ভাষায় শালুক বলে।
নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে খাল-বিল-ঝিল-হাওড়-বাঁওড়-পুকুরের পানি যখন কমে যায় তখন গ্রাম গঞ্জের লোকজন জমি থেকে শালুক তোলে। শালুক খেতেও বেশ সুস্বাদু।
গ্রাম-গঞ্জে একসময় অভাবী সংসারে শালুক সিদ্ধ করে দিনের খাবার হিসেবেই গ্রহণ করা হতো। শালুক আমাশয়ের জন্য খুবই উপকারী সবজি। সহজলভ্য হওয়ায় গ্রামের মানুষ প্রতিদিনই শাপলা খাদ্য হিসাবে গ্রহণ আসছে।
আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা গ্রামের কৃষক যাদব সরকার জানান, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশ্বিন মাসে উপজেলার বাগধা, খাজুরিয়া, চাঁদত্রিশিরা, বারপাইকা, আমবৌলা, পয়সারহাট, আস্কর, নাঘিরপাড়সহ বিভিন্ন জলাশয়ে শাপলা ফুঁটে থাকে। তবে আগৈলঝাড়া উপজেলার প্রত্যন্ত বিলাঞ্চল বিশেষ করে বাগধা এলাকায় এখনো ফুটছে নয়নাভিরাম লাল শাপলা। বিলের পর বিল এই শাপলা দেখতে নৌকায় চরে বিলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রকৃতি প্রেমীরা। অনেকে আবার শাপলা বিক্রি করে জীবিকাও নির্বাহ করে আসছেন। খবর : ডেইলিবাংলাদেশ’র।
ফিচার দেউড়ি