দেশব্যাপী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় ৮দিনের কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে ১৪ এপ্রিল থেকে। এর আগে ৭দিনের ১৮দফা বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছিল। জনগণ যদি সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতো তাহলে সংক্রমণের চূড়া কিছুটা হলেও রোধ করা সম্ভব হতো। কিন্তু তা হয়নি, যেভাবে মানুষ ঢাকা ও বড় বড় শহর ছেড়েছে তাতে সংক্রমণ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। দেশের দুইÑতৃতীয়াংশেরও বেশি জেলা ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়েছে। গত ২ দিনে মৃত্যু ৯০ এর উপরে ছিল। এখন মৃত্যু ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। মানুষ যদি বিধিনিষেধ মেনে না চলে তাহলে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্যবিদরা।
কঠোর লকডাউনের প্রথম দিন চট্টগ্রাম মহানগরীতে কিছুটা ফলপ্রসূ হওয়ার সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছিল কিন্তু দ্বিতীয় দিন থেকে সে অবস্থা আর নেই। রিকশা ও ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল বেড়েছে। শিল্প কারখানা, কিছু আবশ্যকীয় কাজ ও রমজানের কারণে হোটেল রেস্তোরাঁ কিছু সময়ের জন্য খোলা রাখা ছাড়া উপায় নেই। মানুষ যদি স্বাস্থ্যবিধি অর্থাৎ মাস্ক পরিধান ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলে যা এ সময়ের জন্য জরুরি তাহলে বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। অথচ এটিতেই আমাদের ঘাটতি প্রকট। ‘মুভমেন্ট পাস’ নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়েছে। দ্বিতীয় দিনে ঢাকায় রীতিমত যানজট তৈরি হতে দেখা গেছে। প্রবাসীদের জন্য আজ থেকে বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটির প্রয়োজন ছিল। ব্যাংক চালু থাকবে না কিনা সে ব্যাপারে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত আগে না আসায় কয়েকদিন ব্যাংকে উপচেপড়া ভিড় ছিল যা মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত ছিলোনা। প্রশাসন থেকে এ ধরণের দোটানা থাকা উচিত নয়।
মানুষকে সচেতন করার ক্ষেত্রে সরকারি প্রচারণাও কম, করোনা সংক্রমণে কিভাবে চলতে হবে, আইসোলেশন কখন প্রয়োজন সে ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করতে চসিক কিংবা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ কোন উদ্যোগও চোখে পড়ছে না। অথচ এখন দক্ষিণ আফ্রিকান ধরণের ভাইরাস বাংলাদেশে সংক্রমণ ঘটাচ্ছে, এ ব্যাপারে যে অধিক সতর্কতা প্রয়োজন মানুষ তা অনুভবই করছে না। জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল, স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান আগের মতো পাড়ায় মহল্লায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে না। অথচ এই বিপন্ন মুহূর্তে কমিউনিটি সেবা খুবই উপযোগী। ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি করে আইসোলেশনে রাখার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা, সে রকম উদ্যোগ ও চোখে পড়ছেনা। চসিক একটি আইসোলেশন সেন্টার খুলেছে। জেলা উপজেলায় এই ফিল্ড হাসপাতাল খুললে মানুষ কিছুটা হলেও সেবা পাবে। আইসিইউ সেবা পর্যাপ্ত না থাকায় অনেক রোগী মৃত্যুবরণ করেছেন। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদফতর তাদের অবহেলা ও অদক্ষতা এড়াতে পারে না। তাদের অব্যবস্থাপনার কারণে মানুষের দুর্ভোগ কষ্ট বেড়েছে। সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে পড়েছে। স্বাস্থ্যসেবার সংকট এখনো চরমে। লকডাউনে শিল্পকারখানা বা প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে, তাদের কর্মীদের আনা নেওয়ার ব্যবস্থা ঐ সব কর্তৃপক্ষ করবে বলা হয়েছে সরকারের তরফ থেকে কিন্তু এ ধরণের ব্যবস্থা দেখা যায়নি। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। এটি দুর্ভাগ্যজনক যে, বিপদ জেনেও মানুষ লকডাউনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দিচ্ছে না। এতে আমরা নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনছি। লকডাউন ফলপ্রসূ করতে নাগরিকদের দায়িত্ব বেশি নিজেদের স্বার্থে, সেই সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণকে বিধিনিষেধ মানতে বাধ্য করতে হবে লকডাউন ঢিলেঢালা হলে মহামারির যে দ্বিতীয় আঘাতটি তীব্রতা ও শক্তি নিয়ে এসেছে তা থেকে আমরা সুরক্ষা পাবনা-এ কথা মেনেই আমাদের চলতে হবে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে।
মতামত সম্পাদকীয়