সুপ্রভাত স্পোর্টস ডেস্ক »
লিটন দাস ও মোহাম্মদ নাঈম শেখ এনে দিলেন ভালো শুরু। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ও নুরুল হাসানের শেষ দিকের দ্রুত রান। তাতে লড়াইয়ের পুঁজি পেল বাংলাদেশ।
নিউজিল্যান্ড দলের অধিনায়ক ল্যাথাম অভিজ্ঞদের একজন। তিনিই ভোগান টাইগারদের। এক প্রান্ত আগলে লড়াই করেন। কিন্তু তার আপ্রাণ চেষ্টাও ব্যর্থ হয় সতীর্থদের কারণে। ল্যাথামের ব্যাটিং ম্যাচের শেষ ওভারেও বেশ রোমাঞ্চ ছড়িয়েছে।
শুক্রবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে নিউজিল্যান্ডকে ৪ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ওভারে ৬ উইকেটে ১৪১ রান সংগ্রহ করে স্বাগতিকরা। জবাবে ৫ উইকেটে ১৩৭ রান করে থামতে হয় কিউইদের।
মিরপুরের উইকেট বিচারে এদিন বেশ বড় লক্ষ্যই পেয়েছিল কিউইরা। তাছাড়া, আগের ম্যাচেই ৬০ রানে অলআউট হয়েছিল দলটি। এদিন লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা একদম ভালো হয়নি সফরকারীদের। দলীয় ১৮ রানেই দুই ওপেনার বিদায় নেন। রাচিন রবীন্দ্রকে বোল্ড করে ফেরান সাকিব আল হাসান। আর টম ব্লান্ডেলকে স্টাম্পিংয়ে ফাঁদে ফেলেন শেখ মেহেদী হাসান।
তবে তৃতীয় উইকেটে উইল ইয়াংকে সঙ্গে নিয়ে দলের হাল ধরেন অধিনায়ক ল্যাথাম। ৪৩ রানের দারুণ একটি জুটি গড়ে টাইগার শিবিরে ভীতি বাড়াচ্ছিলেন তারা। এ জুটি ভাঙেন সাকিব। শর্ট থার্ড ম্যানে দারুণ এক ক্যাচ ধরেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।
এরপর অবশ্য নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট হারাতে থাকে নিউজিল্যান্ড। বিপজ্জনক কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমকে ফেরান নাসুম আহমেদ। অভিজ্ঞ হেনরি নিকোলস শিকার হন শেখ মেহেদীর। ফলে ৯২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ভীষণ চাপে তারা।
তবে এক প্রান্তে অনড় থাকেন ল্যাথাম। ছোট ছোট জুটিতে দলের শেষ ভরসা হয়ে থাকেন তিনি। পাশাপাশি রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টাও চালিয়ে যান। কিন্তু সতীর্থরা সে অর্থে সাহায্য করতে পারেননি তাকে। তাই লক্ষ্য থেকে দূরেই থামতে হয় নিউজিল্যান্ডকে।
টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটিতে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৫ রান করে অপরাজিত থাকেন লাথাম। ৪৯ বলে ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান তিনি। এছাড়া ইয়াংয়ের ব্যাট থেকে আসে ২২ রান। শেষ দিকে ম্যাককনকির ব্যাট থেকে আসে অপরাজিত ১৫ রান। বাংলাদেশের পক্ষে ৪ ওভার বল করে মাত্র ১২ রানের খরচায় ২টি উইকেট পান শেখ মেহেদী। ২টি শিকার সাকিবেরও।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ দলের বড় সংগ্রহের ভিত গিরে দেন দুই ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম ও লিটন দাস। ৫৯ রানের জুটি গড়েন তারা। মন্থর উইকেটে দেখে শুনেই ব্যাট করতে থাকেন তারা। পাওয়ার প্লেতে আসে ৩৬ রান। জুটির হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেন ৮.৩ ওভারে। যদিও ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ভাঙতে পারতো ওপেনিং জুটি। শর্ট মিড উইকেটে সহজ ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন লিটন। কিন্তু সে সুযোগ লুফে নিতে পারেনি নিউজিল্যান্ড।
তবে ওপেনিং জুটিটা হতে পারতো আরও বড়। অফস্টাম্পের বেশ বাইরে রাখা রাচিন রবীন্দ্রর বল টেনে এনে বোল্ড হয়ে যান লিটন। পরের বলে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলে মুশফিকুর রহিমকেও তুলে নেন রবীন্দ্র। পরপর দুই বলে উইকেট হারানো বাংলাদেশকে চাপমুক্ত করতেই হয়তো উইকেটে নেমেই আগ্রাসী ঢঙ্গে খেলার চেষ্টা করেন সাকিব আল হাসান। প্রথম ছয় বলে ১২ রান তুলে নেওয়া এ ব্যাটসম্যান আউট হন ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে। যদিও তার ক্যাচ হাত থেকে ফসকে গিয়েছিল অভিষিক্ত বেন সিয়ার্সের। তবে দ্বিতীয় দফায় লুফে নেন এ পেসার।
এরপর নাঈমকে নিয়ে দলের হাল ধরেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। ৩৪ রানের জুটিও গড়েছিলেন। লং অনের উপর দিয়ে শট খেলতে গিয়ে রবীন্দ্রর তৃতীয় শিকারে পরিণত হন নাঈম। পাঁচ নম্বরে নেমে খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি আফিফ হোসেনও। ফলে কিছুটা চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সপ্তম উইকেটে নুরুল হোসেন সোহানকে নিয়ে সে চাপ সামলে মাহমুদউল্লাহ। ৩২ রানের দারুণ এক জুটিতে দলকে লড়াকু পুঁজি এনে দেন এ দুই ব্যাটসম্যান।
দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৯ রানের ইনিংস খেলেন নাঈম। ৩৯ বলে ৩টি চারের সাহায্যে এ রান করেন তিনি। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ৩৭ রান করে অপরাজিত থাকেন। ৩২ বলে ৫টি চারে ইনিংস সাজান তিনি। ২৯ বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৩ রান আসে লিটনের ব্যাট থেকে। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে ২২ রানের খরচায় ৩টি উইকেট নিয়েছেন রবীন্দ্র।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৪১/৬ (নাঈম ৩৯, লিটন ৩৩, মুশফিক ০, সাকিব ১২, মাহমুদউল্লাহ ৩৭*, আফিফ ৩, সোহান ১৩; প্যাটেল ১/২০, ম্যাককনকি ১/২৪, বেনেট ১/৩২, ব্রেসওয়েল ০/৩০, রবীন্দ্র ৩/২২, সিয়ার্স ০/১১)
নিউজিল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৩৭/৫ (ব্লান্ডেল ৬, রবীন্দ্র ১০, ল্যাথাম ৬৫*, ইয়াং ২২, ডি গ্র্যান্ডহোম ৮, নিকোলস ৬, ম্যাককনকি ১৫*; মেহেদী ২/১২, নাসুম ১/১৭, সাকিব ২/২৯, মোস্তাফিজ ০/৩৪, মাহমুদউল্লাহ ০/৭, সাইফ ০/৩৬)।
ফল: বাংলাদেশ ৪ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা: মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (বাংলাদেশ)।
সিরিজ: পাঁচ ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে।