সুপ্রভাত ডেস্ক :
জন্ম হলে মৃত্যু হবে তা চিরন্তন সত্য। তবে প্রতিটি মৃত্যুর পেছনেই থাকে কোনো না কোনো ঘটনা। আবার কিছু কিছু মৃত্যু হয় রহস্যজনক। যা থেকে যায় অমীমাংসিত। তেমনি এক অমীমাংসিত মৃত্যুর রহস্য নিয়ে সাজানো হয়েছে আমাদের আজকের প্রতিবেদন।
নৃত্য সবাইকেই মুগ্ধ করে তা সবারই জানা। যদিও সেই নৃত্য কিংবা নাচ আমরা সরাসরি অথবা চলচ্চিত্রে দেখি। এক্ষেত্রে পুরুষের চাইতে নারীর নৃত্যদৃশ্য সবসময় মোহনীয় সৌন্দর্যের প্রকাশ করে। যদিও আধুনিক বিশ্বে নারীর পাশাপাশি সমানতালে নাচেন নরও! শুধু নাচের জন্যই বিখ্যাত হয়ে আছে বিশ্বজুড়ে অনেক পুরুষ!
কিন্তু নৃত্যরত নর-নারী ঢলে পড়ছে মৃত্যুর কোলে, নাচতে নাচতে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করছে পুরো শহরভর্তি লোক, তবু থামছে না! এরকম দৃশ্য কি কখনো কল্পনা করেছেন? তবে কল্পনা না করলেও এমন একটি ঘটনা ঘটেছে বাস্তবেই! ১৫১৮ সালে ফ্রান্সে ঘটেছিল এরকম এক রহস্যপূর্ণ, অথচ অমীমাংসিত ঘটনা!
১৫১৮ সালে ফ্রান্সের স্ট্রাসবার্গ শহরে সেই দিনটি ছিলো অন্য দশটি দিনের মতোই সাধারণ। কিন্তু হঠাৎই সবকিছু কি এক অসাধারণ যাদুর ছোঁয়ায় বদলে যেতে লাগলো! রাস্তায় নেমে নাচতে শুরু করলেন এক দঙ্গল মানুষ!
শুরুটা হয়েছিলো খুব স্বাভাবিকভাবেই! ফ্রাউ ত্রাফেয়া নামের এক ভদ্রমহিলা হঠাৎ শহরের রাস্তায় নেমে এলেন নাচতে নাচতে। আপাতদৃষ্টিতে এটাকে পাগলামিই বলা যায়। কিন্তু দৃশ্যপট বদলে গেল খানিক পরেই। একে একে নৃত্যরত ত্রাফোয়ার দল ভারী হতে লাগলো। একে একে তার চারপাশের সবাই যোগ দিল তার নাচে। আর খুব দ্রুতই অবস্থা চলে গেলো আয়ত্বের বাইরে।
কল্পকাহিনীর মতো শোনালেও এই ঘটনা সম্পূর্ণ বাস্তব। সেই নাচ শুরু হলো ঠিকই, শেষ হবার নাম ছিল না কোনো। একটানা ১ সপ্তাহ চলার পর, ভিন্ন জায়গা থেকে আসা আরো ৩৪ জন যোগ দিল এই নাচে। একমাসে এই সংখ্যাটা দাঁড়ালো ৪০০ জনেরও বেশি মানুষে! ৪০০ জন মানুষ একটানা একসঙ্গে শুধু নেচেই যাচ্ছেন, সম্পূর্ণ বিরতিহীনভাবে। কেন এরকম হচ্ছে কেউ জানেন না, কেউ বুঝতে পারছেন না, কোনো এক অদৃশ্য শক্তি তাদের নাচিয়ে নিচ্ছে, শুধু নেচেই যাচ্ছেন তারা!
নৃত্যের মিছিল ধীরে ধীরে মৃত্যুর মিছিলে পরিণত হয়। যখন রাস্তায় একটানা নাচতে নাচতে মারা যায় এক ডজনেরও বেশি মানুষ! এদের বেশিরভাগই মারা যায় একটানা নাচার ফলে ডিহাইড্রেশনে, স্ট্রোকে এবং ক্লান্তিতে। আশ্চর্যের বিষয়, সর্বপ্রথম নাচ শুরু করা ভদ্রমহিলা ফ্রাউ ত্রাফেয়া তখনো বেঁচে ছিলেন এবং নেচে চলেছিলেন! দীর্ঘ একমাস বিরামহীন নাচতে থাকেন তিনি। একমাস পর নৃত্যদলের শেষ মানুষ হিসেবে তিনিও মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন।
কেনো হয়েছিলো এমনটা?
ঠিক কেন এমনটা হয়েছিলো সে বিষয়ে পরিষ্কার কোনো বিশ্লেষণ এখনো পাওয়া যায়নি। মৃত্যুর কারণের নেই কোনো সঠিক তথ্য প্রমাণ। শুধু বুদবুদ হয়ে রয়েছে কিছু ধারণা।
ইতিহাসবিদ জন ওয়ালার এর ধারণা, এমনটা হয়েছিলো মূলত শহরের সব মানুষের মানসিক ভাঙনের জন্য। শহরটি ইতিমধ্যেই অনেক বেশি সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলো। শহরের মানুষেরা ক্ষুধায় কাতর ছিলো এবং রোগশোকে আক্রান্ত ছিলো শহরের বেশিরভাগ মানুষ। কাজেই তারা একসঙ্গে ভেঙে পড়েছিলো, এরকম মানসিক ভাঙনের ফলেই এক ধরনের মনোবৈকল্যের শিকার হয়ে তারা এমন নাচ শুরু করেছিল, নিজেদের অজান্তেই।
কিন্তু মানসিক ভাঙন থেকে মনোবৈকল্য একসঙ্গে সবার হবে কেন ? প্রশ্ন থেকেই যায়। আরেকটি জনপ্রিয় ধারণা হচ্ছে, এরগট ফাঙ্গাস নামে এক প্রজাতির ফাঙ্গাস এই ঘটনার জন্য দায়ী। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, এরগট ফাঙ্গাস বিষাক্ত একটি ফাঙ্গাস হওয়ার কারণে মানুষ নাচতে শুরু করবার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়াটা ছিল খুব স্বাভাবিক! এই ফাঙ্গাসের আক্রমণ মানুষকে এতক্ষণ ধরে নাচের শক্তি দিত না। তাহলে, এই ধারণাটিতেও আসলে কিছুই পরিষ্কার হয় না।
ঠিক কেন শুরু হয়েছিলো এই নাচ এবং ঠিক কি কারণে একটানা নাচতে নাচতে মৃত্যু হলো এতগুলো মানুষের, এই রহস্য আজো অজানা।
বিশেষজ্ঞরা এর নাম দিয়েছেন ড্যান্সিং প্লেগ! তবে কি এটি শুধুই একটি ছোঁয়াছে রোগ বা প্লেগ? এই ঘটনায় হয়তো বিশেষজ্ঞদের অনুমানই সঠিক, অথবা হয়তো এর পেছনে রয়েছে অমীমাংসিত কোনো রহস্য! খবর : ডেইলিবাংলাদেশ’র।
ফিচার দেউড়ি