সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক »
আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পরও কেউ কেউ হাল ছাড়েননি। মনের গভীরে কোথাও যেন মনে হচ্ছে, এই বন্ধন ছিন্ন হওয়ার নয়। হুয়ান লাপোর্তা নিশ্চয়ই কোনো পথ দেখাবেন। না, তেমন কিছু করেননি বার্সেলোনা সভাপতি। সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, মিথ্যে কোনো আশা জাগাতে চান না তিনি। কারণ, এরই মধ্যে লিওনেল মেসিকে নিয়ে দুটি প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে লা লিগা কর্তৃপক্ষ।
লিগ কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেওয়া ‘ফেয়ার প্লে’ ভাঙতে না চাইলে বেতন কমাতে হবে বার্সেলোনার, আগে থেকেই জানা। এরপরও তো চলছিল নতুন চুক্তিতে মেসিকে ধরে রাখার তোরজোর। বৃহস্পতিবার নতুন চুক্তিতে মেসির স্বাক্ষর মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার। সেটা হুট করেই ভেঙে যাওয়ার পর শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে লাপোর্তা জানালেন, মেসিকে নিয়ে কোনো আশা দেখাতে আসেননি তিনি।
“আমি কোনো মিথ্যে আশা জাগাতে চাই না। সমঝোতার সমাপ্তি হয়ে গেছে। চুক্তি বাস্তবায়ন করা যায়নি, লা লিগার বেঁধে দেওয়া বেতন সীমার জন্য। আমাদের কোনো মার্জিন নেই। মূলত সেটা ফেয়ার প্লের জন্য। আমাদের মূল লক্ষ্য ক্লাবকে রক্ষা করা। আমরা বার্সেলোনাকে কোনো ঝুঁকিতে ফেলতে চাইনি। এটা আমাদের জন্য খুব বেদনাদায়ক মুহূর্ত, কিন্তু নতুন ধাপ শুরু করতে আমরা অনুপ্রাণিত।”
“মেসিকে ধরে রাখতে সম্ভাব্য সব চেষ্টাই করা হয়েছে। আমি কোনো মিথ্যে আশা দেখাতে চাই না এবং ব্যাপারগুলো তাদের দিকে ঠেলে দিতে চাই না, যারা এরই মধ্যে সব কিছু করেছে। কোনো ধারণার কথা বলতে পারি না। তাদের অন্য প্রস্তাব ছিল, যেগুলো আমাদের চেয়েও ভালো কিন্তু এরপরও দেখিয়েছে, বার্সেলোনাতে খেলা চালিয়ে যেতে চায়।”
বার্সেলোনাকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না, আগেই বলেছিলেন লা লিগা প্রধান হাভিয়ের তেবাস। সেই কথাতেই অটল তিনি। লাপোর্তা জানালেন, দুটি চুক্তির প্রস্তাব গ্রহণ করেনি লিগ কর্তৃপক্ষ।
“প্রথমে আমরা একমত হই যে, চুক্তি হবে দুই বছরের, বার্সেলোনা এই সময়ের বেতন পরিশোধ করবে পাঁচ বছরে। লিও রাজি হয়। আমরা ভেবেছিলাম, ফেয়ার প্লের মধ্যেই থাকবে এই চুক্তি। কিন্তু এই পদ্ধতি লা লিগা গ্রহণ করেনি। এরপর পাঁচ বছরের চুক্তির ব্যাপারে রাজি হই, কিন্তু এটাও খতিয়ে দেখার পর তারা গ্রহণ করেনি। আমি ভেবেছিলাম, ওরা এই চুক্তির প্রস্তাবে রাজি হবে, কিন্তু হয়নি।”
“আমরা লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছিলাম। এমন একটা কারণে পারলাম না যেটা আমাদের ওপর নির্ভর করে না। আমাদের চুক্তির আনুষ্ঠানিকতা সারতে পারলাম না কারণ, আমরা ‘ফেয়ার প্লের’ বাধ্যবাধকতা পূরণ করা থেকে পিছিয়ে।”
একটা না একটা সময় তো মেসিকে ছাড়াই পথ চলতে হতো। সেই সময় একটু আগেই চলে এসেছে। বাস্তবতার জমিনে পা রেখে নতুন শুরুর দিকে মন দিয়েছেন লাপোর্তা।
“আমি রোনাল্ডের সঙ্গে গতকাল ও আজ কথা বলেছি। প্রতি মৌসুমে ত্রিশের বেশি গোল করে এমন একজনের বিকল্প পাওয়া সহজ নয়, তাকে সেই চেষ্টাই করতে হবে। আমি এখন আরও বেশি অনুপ্রাণিত, এই আকাঙ্ক্ষা নিয়ে যে নতুন এই ধাপ হবে আরও জাঁকজমকপূর্ণ।”
“স্কোয়াডের অনুভূতি অদ্ভূত, নিশ্চিতভাবে ওরা ব্যথিত। তবে ওরা পেশাদার এবং বার্সেলোনাকে সাফল্যের পথে নিয়ে যেতে ওদের প্রতিভা দেখানোর এটা একটা সযোগ। ওরা এরই মধ্যে বুঝতে পারছে নতুন যুগ আসছে এবং দেখাতে হবে যে ওরা অসাধারণ পেশাদার যারা নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করে।”
বার্সেলোনায় ক্লাবটির ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়ের না থাকা নিয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেননি স্কোয়াডের কোনো খেলোয়াড়। তবে বিষয়টি তারা জানেন না এমন নয়। বার্সেলোনা প্রধান নিজেই ফোন করে জানিয়েছিলেন তাদের। মেসিবিহীন দলকে এগিয়ে নিতে অধিনায়ককে হতে বলেছেন কাণ্ডারী।
“গতকাল আমি ফোনে অধিনায়কদের সঙ্গে কথা বলেছি। এটা বার্সেলোনার ইতিহাসের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। খেলোয়াড়দের বলেছি, বার্সেলোনার ইতিহাসে এটা নতুন একটা পর্যায়। মেসিকে ছাড়াই আমাদের জিততে হবে সর্বোচ্চ নিবেদন ও পেশাদারিত্ব দিয়ে।”
“অধিনায়কদের কাছ থেকে সর্বোচ্চটা চেয়েছি। বলেছি, ওরা শক্তিশালী একটি দলই পাবে। নতুন এই ধাপে অধিনায়কদের নেতৃত্ব দিতে হবে। নিজেদের প্রতিভা দেখাতে তরুণ খেলোয়াড়দের ওদেরই স্বাগত জানাতে হবে। আমরা অনেক ধাপ পেরিয়ে এসেছি, এখন আমাদের সামনে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ, নেতৃত্ব ও সাফল্যের পথে সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়ার।”