নিজস্ব প্রতিনিধি, মিরসরাই :
নদী মাতৃক দেশ বাংলাদেশে বর্ষা আসলে বেড়ে যায় মাছ ধরার চাহিদা। সে সাথে বেড়ে যায় মাছ ধরার ফাঁদের চাহিদা। মিরসরাইয়ে ক্রমশ বাড়ছে মাছ ধরার ফাঁদ চাঁইয়ের চাহিদা।
উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ও ২ পৌরসভার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাছ ধরার ফাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে চাঁই। এছাড়া ডুব জাল, বাঁশের তৈরি অন্যান্য সরঞ্জামও বিক্রি হচ্ছে দেদারসে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রত্যেক বছর বর্ষার মৌসুম আসলে মাছ ধরার ফাঁদ বিক্রির ধুম পড়ে যায়। তবে চাহিদা আগের তুলনায় কমেছে। কৃষি জমি, খাল, বিল কমে যাওয়া এখন মাছ ধরার আগের মতো জায়গা নেই। এছাড়া জমিতে রাসায়নিক সার প্রয়োগে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে দেশীয় মাছ।
খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় থেকে মিরসরাই উপজেলার বারইয়ারহাট বাজারে চাঁই বিক্রি করতে আসা ব্যবসায়ী নুরম্ন মিয়া জানান, প্রত্যেক বছর বর্ষার মৌসুম এলে তিনি বিভিন্ন উপজেলায় ঘুরে ঘুরে চাঁই বিক্রি করে থাকে। এটি তাদের আদি পেশা। আগে প্রতিটি ছোট চাঁই বিক্রি করতেন ৪০-৬০ টাকা। চাঁই তৈরির সরঞ্জামের দাম বেড়ে যাওয়া এখন বিক্রি করেন ৮০-১২০ টাকা। আকার ভেদে প্রতিটি চাঁই ৬০-৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে।
উপজেলার ধুম ইউনিয়নের মোবারক ঘোনার আজিম উদ্দিন জানান, আগে প্রতিবছর বর্ষাকালে চাঁই তৈরির ধুম পড়ে যেত। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে নারী পুরম্নষ সবাই মিলে তৈরি করতো মাছ ধরার চাঁই। এসময় পুরম্নষরা বাইরের কাজ বন্ধ করে শুধু চাঁই তৈরিতে ব্যসত্ম থাকতো। চাঁই তৈরিতে ব্যবহার করা হয় এক ধরনের বাঁশ। যাকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় মুলি বাঁশ। চাঁই তৈরি কঠিন কাজ হলেও পুঁজি কম হওয়ায় ভালো দাম পাওয়া যায়। আকার ভেদে প্রতিটি চাঁই ৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিরসরাইয়ে ১৬টি ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে চাঁই তৈরি করা হতো। বিশেষ করে চর এলাকার গ্রামগুলোতে চাঁই তৈরির ধুম পড়ে যায়। বর্ষা আসার আগেই চাঁই তৈরি কারিগর উপজেলার বিভিন্ন বাজার থেকে মুলি বাঁশ সংগ্রহ করতো। এসব চাঁই স্থানীয় মিঠাছড়া, বড়তাকিয়া, বড়দারোগারহাট, নিজামপুর, কমরালি, বারইয়ারহাট, করেরহাটসহ প্রায় প্রতিটি বাজারে বিক্রি করা হয়ে থাকে। অনেকে মাথায় করে ফেরি করে চাঁই বিক্রি করে থাকে। তবে আগের সেই জৌলশ এখন আর নেই। এখন উপজেলার গুটি কয়েক গ্রামে চাঁই তৈরি হয়ে থাকে। এর কারণ হিসেবে পূর্ব হিঙ্গুলী গ্রামের চাঁই তৈরিকারক মুন্নি বেগম বলেন, এখন মুলি বাঁশ সহজে পাওয়া যায় না। তাছাড়া খাল বিলে দেশীয় মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া ক্ষতিকর কারেন্ট জালের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই গ্রামের মানুষ চাঁইয়ে বদলে ব্যবহার করছে ক্ষতিকর কারেন্ট জাল।