রাজু কুমার দে, মিরসরাই > >
মিরসরাইয়ে ক্রমশ প্রকট হচ্ছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। একদিকে নলকূপে পানি না উঠা অন্যদিকে পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক ও আয়রন থাকায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে উপজেলার সাড়ে ৩ লাখ মানুষ। ২০০২-২০০৩ অর্থবছরে এই অঞ্চলে নলকূপের পানি পরীক্ষা করা হলেও পরে ভাটা পড়ে যায়। দীর্ঘ ১৮ বছর পর পুনরায় চলতি মাস থেকে আর্সেনিক পরীক্ষার কাজ শুরু হবে বলে জানান উপজেলার সহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী কেএম সাঈদ মাহমুদ।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মিরসরাইয়ের ১৬ ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভার বিভিন্ন গ্রামের নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক রয়েছে। সর্বশেষ ২০০২-২০০৩ সালে ৭৫ হাজার ৩৬৬টি পরিবারের ৩২ হাজার ৪৮০টি সাধারণ নলকূপ পরীক্ষা করা হয়েছে। নলকূপগুলোর পানিতে গড়ে ৩৯.৭৭ মাত্রায় আর্সেনিক পাওয়া যায়। এর মধ্যে ১২ হাজার ৮৩৩টি নলকূপের প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলিগ্রামের অধিক মাত্রায় আর্সেনিক পাওয়া যায়। এসময় নলকূপগুলোকে লাল রঙ দিয়ে পানি পান না করতে সর্তক করা হয়।
সূত্র জানায়, মিরসরাই পৌরসভায় শতকরা ৬৬.৮৩, ধুম ইউনিয়নে ৫১.০৯, ওসমানপুর ইউনিয়নে ৫১.২০,ইছাখালী ইউনিয়নে ৩৯.১৭, কাটাছরা ইউনিয়নে ৪৭.৬৬, মিরসরাই সদর ইউনিয়নে ৬০.৯৬, মিঠানালা ইউনিয়নে ৩৯.৮৫, মঘাদিয়া ইউনিয়নে ৪০.৩৪, খৈয়াছরা ইউনিয়নে ৬৬.২৯, মায়ানী ইউনিয়নে ৫৬.১১ ও সাহেরখালী ইউনিয়নে ৩০.৩৬ ভাগ নলকূপে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক শনাক্ত করেছে আর্সেনিক শনাক্তকারী টিম। ওই সময় আর্সেনিক শনাক্ত হওয়া টিউবয়েলগুলোতে লাল রঙ এর দাগ দিয়ে চিহিৃত করা হয়েছিল। শনাক্ত করা হয়েছিলেন ৪০ জন রোগী। কিন্তু দীর্ঘ ১৮ বছর ওই কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ওই সময় আর্সেনিক শনাক্তকারী টিমের সদস্যরা মিরসরাইকে আর্সেনিকমুক্ত করতে ১০টি পরিবারের জন্য অর্থাৎ ৫০ জন মানুষের প্রয়োজনে ১টি গভীর নলকূপ বসানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর বিগত ১৮ বছরে মাত্র ১ হাজার ৫শত ৬১টি গভীর নলকূপ স্থাপন করতে পেরেছে। তম্মধ্যে ২০০৩ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৪৪১টি ও ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১১২০টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। হিসেব মতে উপজেলার ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৯৫০ জন মানুষের জন্য গভীর নলকূপ রয়েছে মাত্র ১ হাজার ৫শত ৬১টি।
অপরদিকে, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের সাধারণ টিউবয়েলগুলোতে উঠছে না পানি। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই অংশের পূর্ব পাশে অপরিকল্পিতভাবে নাহার এগ্রো, বিএসআরএম, সিপিসহ অসংখ্য শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। এসব শিল্প কারখানায় পানি ব্যবহার করা হচ্ছে ভূগর্ভ থেকে। ফলে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সাধারণ নলকূপে পানি উঠছে না।
এ বিষয়ে জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মকসুদ আহম্মদ চৌধুরী ও হিঙ্গুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন হারুন বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনাপাহাড় এলাকার পূর্ব পাশে বিএসআরএম কারখানার কারণে আমাদের আশপাশের বেশ কিছু গ্রামের নলকূপে পানি উঠছে না।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী কেএম সাঈদ মাহমুদ জানান, ৫০ জন মানুষের জন্য একটি গভীর নলকূপ প্রয়োজন। ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১হাজার ১২০টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকলেও চলতি মে মাস থেকে পুনরায় নলকূপের পানিতে আর্সেনিক পরীক্ষা শুরু হবে।
টপ নিউজ