নিজস্ব প্রতিবেদক »
প্রচ- গরমের মধ্যে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে অতিষ্ঠ চট্টগ্রামের বাসিন্দারা। এরমধ্যে জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ে মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। এতে টেলিযোগাযোগ সেবায় বিঘ্ন ঘটছে। বিশেষ করে মোবাইল ইন্টারনেট ও খুদে বার্তা পাঠাতে সমস্যা হচ্ছে বলে গ্রাহকেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে জানিয়েছেন। কিছু ক্ষেত্রে কল করতেও আগের চেয়ে বেশি সময় লাগছে বলে অনেকে জানান।
মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (এমটব) বলছে, বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে এমন সমস্যা হচ্ছে। সাময়িক সময়ের জন্য টেলিযোগাযোগ সেবা বিঘ্নিত হতে পারে। গ্রাহকদের সাময়িক অসুবিধার জন্য এমটবের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে।
টেলিযোগাযোগ নির্বিঘ্ন রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বেজ ট্রান্সিভার স্টেশন (বিটিএস), যা মোবাইল টাওয়ার নামে পরিচিত। কোনো কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে জেনারেটর দিয়ে ২ থেকে ৫ ঘণ্টা বিটিএস চালু করা যায়। কিন্তু দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকলে তখন জেনারেটর দিয়েও বিটিএসের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হয় না।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) তথ্যানুযায়ী, জাতীয় গ্রিডের পূর্বাঞ্চলে (যমুনা নদীর এপার) বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দেয়। এতে মঙ্গলবার বেলা ২টা ৫ মিনিটে দেশজুড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এরপর থেকে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও সিলেট অঞ্চলের বিস্তৃত এলাকায় বিদ্যুৎ চলে যায়।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম বলেন, আমরা এখনো জানি না ঠিক কোথায় সমস্যা বা বিপর্যয় ঘটেছে। তবে কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। শুধু যে চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ নেই তা নয়। দেশের বিভিন্ন এলাকায় এ মুহূর্তে বিদ্যুৎ নেই। আর জাতীয় গ্রিড বিপর্যয় হলে সব জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। কখন আসবে তা এখনো বলতে পারছি না।
দেশের মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং নিয়ে তিনি বলেন, বেশ কয়েকদিন ধরে বেশি লোডশেডিং চলেেছ। এটি মূলত গ্রিড লাইনের সমস্যার কারণে হচ্ছে। আশুগঞ্জ থেকে গ্রিডলাইন চালু করতে হয়েছে। বর্তমান আমাদের জেনারেশন কম। এই মুহূর্তে চট্টগ্রামে লাগবে ১১০০ মেগাওয়াট জেনারেশন, সেখানে আমাকে বরাদ্দ দিয়েছে ৮০০ মেগাওয়াট। এই মুহূর্তে ৩০০ মেগাওয়াট ঘাটতি আছে।
তার মতে, নগরীর বিভিন্ন জায়গায় লোডশেডিং হওয়ার কারণ হচ্ছে বিদু্যুতের সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনের ত্রুটি। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুতের সরবরাহ পাওয়া গেলেও পুরনো সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন সেই লোড নিতে পারছে না। এ কারণে প্রায়ই লাইনে ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। সেটি মেরামত করতে গিয়েই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়। তিনি জানান, খুব শিগগির পুরাতন সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনের সংস্কার কাজ শুরু হচ্ছে।
চট্টগ্রামের রাহাত্তারপুল এলাকার পোলট্রি ফার্ম মালিক জয়নব এগ্রোর স্বত্বাধিকারী জসিম উদ্দিন বলেন, এমনিতে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে গোটা জেলায় জনদুর্ভোগ, পাশাপাশি শিল্পকারখানাগুলোতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অলরেডি কয়েকটি মুরগি ফার্ম বন্ধ করে দিয়েছি। দিনে ৫/৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। ব্যবসায়ে অনেক লোকসান হয়েছে। লোডশেডিংয়ের কারণে গ্রিড বির্পযয় হলেও অবাক হচ্ছি না। এমনিতেই তো সারাদিন বিদ্যুৎ থাকে না।
নাসিরাবাদের গার্মেন্টস ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান শাওন বলেন, ভ্যাপসা গরমের মধ্যে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় নগরবাসী চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। সন্ধ্যেয় বৃষ্টি হওয়াতেই একটু শীতলতা অনুভব করলেও ব্যবসায়ীরা, কলকারখানা, ক্ষুদ্রশিল্পের ভীষণ ক্ষতি হচ্ছে। দিনে ও রাতে পাঁচ ঘণ্টা করেও বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না।
দক্ষিণ চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন বলেন, গরমে জীবন যায় যায় অবস্থা। একদিকে বিদ্যুৎ নেই, অন্যদিকে অত্যধিক গরমের কারণে ব্যাহত হ”েস্বাভাবিক কাজকর্ম। ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ায়ও বিঘœ ঘটছে।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী মোহসিন আলী বলেন, লোডশেডিং এখন নিয়মিত ব্যাপার হয়ে গেছে। সাধারণ জনগণের সমস্যায় এখন কারো কোন মাথাব্যাথা নেই। শুনলাম, বিদ্যুতের পাওয়ার গ্রিডের বির্পযয় অথচ কর্তৃপক্ষ জানে না কোন লাইনে সমস্যা। আবার চট্টগ্রামের কিছু স্থানে সন্ধ্য্যয় বিদ্যুৎ এলেও অধিকাংশ এলাকায় আসেনি।