নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি »
খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রকল্প’র আওতায় বিনামূলের ৯৫৪টি সোলার প্যানেল বিতরণ কার্যক্রমে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিলো ২ নম্বর বাটনাতলী ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহিম, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আব্দুল মমিন, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মানিক ত্রিপুরা ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মহরম আলীসহ স্থানীয় একটি চক্রের বিরুদ্ধে। বিনামূল্যের সোলার প্যানেল দিতে তারা ৩ থেকে ৬ হাজার টাকা নিয়েছেন সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে। গত দেড় মাস ধরে বিতরণের জন্য আনা ৯৫৪টি সোলার প্যানেল তালাবদ্ধ অবস্থায় ছিল বাটনাতলী ইউনিয়নের ছুদুরখীল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে। যা পাহারার জন্য দুজন গ্রাম পুলিশও নিযুক্ত ছিলো।
এদিকে অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি জানাজানির এক পর্যায়ে মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) বিকেলে স্কুলে পড়ে থাকা ৯৫৪টি সোলার প্যানেল নিয়ে যায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। ফলে দীর্ঘদিন ধরে আশায় থাকা উপকারভোগীদের মধ্যে আবার হতাশা দেখা দিয়েছে। উপকারভোগীদের কেউ কেউ বলছেন,‘ টাকাও গেল, সোলারও গেল’।
সুবিধাভোগী ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে, ২১ মার্চ বাটনাতলী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ৬৪ জন, ২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ১৩৯জন, ৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ১৬৯জন ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ২৮৩ জন, ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ২৪৫জন এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ৫৪জনসহ সর্বমোট ৯৫৪ জনের নামের তালিকানুযায়ী সোলার প্যানেল বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করতে ঐ এলাকার ছুদুরখীল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে আসেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা ও ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল আলম চৌধুরী। তাখন টাকার বিনিময়ে তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্তির বিষয়টি জানতে পেরে বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত করে তারা চলে যায় এবং উপকারভোগীদের কাছ থেকে নেয়া টাকা ফেরত দেয়ার নির্দেশনা প্রদান করেন। কিন্তু এ নির্দেশনা অমান্য করে প্রস্তাবিত তালিকার অনুকূলে স্বামীর পরিবর্তে স্ত্রীর, বোনের পরিবর্তে ভাই ও ভাইয়ের পরিবর্তে বোনের নাম অন্তর্ভুক্ত করে নতুন তালিকা করা হচ্ছে এমন গুঞ্জণ উঠে। আর এ ক্ষেত্রে পুনরায় তাদের কাছ থেকে ৫শ থেকে ১ হাজার টাকা নেয়ার খবরে স্থানীয়ভাবে বিষয়টি সমালোচনার জন্ম দেয়।
সোলার প্যানেল ফেরত নেয়ায় হতাশা প্রকাশ করে ঐ এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির আলী জানান, আমি নিজেও বিনামূল্যের সোলার পেতে ৩ হাজার টাকা দিয়েছি। তবে এতদিন আশা ছিল সোলার পাব, কিন্তু আজ দেখছি কর্তৃপক্ষ সোলারগুলো নিয়ে যাচ্ছে। ‘টাকাও গেল, সোলারও গেল কিনা সেটাই বুঝতে পারছি না’।
উপকারভোগীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত থাকা তুলাবিল এলাকার আকতার হোসেন, গোরখানা এলাকার মো.গিয়াস উদ্দিন ও ছুদুরখীল এলাকার মোহাম্মদ আলী হতাশা প্রকাশ করে বলেন, বহুদিন ধরে এ এলাকার মানুষ সৌর বিদ্যুতের আলোতে আলোকিত হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের শেষ মূহুর্তে সোলার বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত করে তা নিয়ে গেল। এখন এলাকার মানুষ সোলার আদৌ পাবে কিনা সেটাও জানি না। এ নিয়ে মেম্বার চেয়ারম্যানরা কিছু বলছে না।
এ বিষয়ে ২ নম্বর বাটনাতলী ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহিম জানান, সোলারের ব্যাটারিগুলো দীর্ঘদিন পড়ে থাকলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই কর্তৃপক্ষ সেগুলো নিয়ে গেছে। যা পরবর্তীতে তাদের সুবিধামত সময়ে বিতরণ করা হবে।
এ বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রমা উন্নয়ন বোর্ডের সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্পের কনসালটেন্ট হাসান শাহ রিয়ার জানান, দীর্ঘদিন ধরে সোলারের ব্যাটারিগুলো পড়ে থাকলে সেগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় সোলার গুলোনিয়ে যাচ্ছি। তাছাড়া লংগদুসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় আমাদের বিনামূল্যের সোলার বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এখানে ফেলে না রেখে সেসব উপজেলায় বিতরণ করা হবে। তবে বাটনাতলী ইউনিয়নে সোলার বিতরণ করা হবে কিনা এ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এখানে সোলার বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে কিন্তু বাতিল করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ স্থগিত আদেশ প্রত্যাহার করে যেকোনো সময়ে পুনারয় বিতরণ কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারে।