বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) করা ‘বাংলাদেশ শিক্ষা পরিসংখ্যান-২০২৩’ এর খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চার বছরের ব্যবধানে দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে। তবে একই সময়ে কারিগরি, মাদ্রাসা ও ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষার্থী বেড়েছে। দেশের মাধ্যমিক থেকে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান সংগ্রহ, সংকলন ও বিতরণ করে সরকারি সংস্থা ব্যানবেইস।
কী কারণে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী কমেছে, তার কারণ বিশ্লেষণ করেনি ব্যানবেইস। তবে কর্মকর্তাদের কারও কারও ধারণা, করোনা পরিস্থিতিতে অনেক শিক্ষার্থী সাধারণ ধারার পড়াশোনা ছেড়ে ভিন্ন ধারায় গেছে। করোনা সংক্রমণের কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে দীর্ঘ ১৮ মাস পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়। এ কারণে শিক্ষায় বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। ব্যানবেইসের তথ্য মতে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর আগের বছর ২০১৯ সালে দেশে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ছিল ৯২ লাখের বেশি, যা ২০২৩ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৮১ লাখ ৬৬ হাজার। এই শিক্ষার্থীরা দেশের ১৮ হাজার ৯৬৮টি বিদ্যালয়ে পড়ে। মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫৫ শতাংশই ছাত্রী। অবশ্য মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছাড়াও স্কুল অ্যান্ড কলেজ অর্থাৎ যেখানে উচ্চমাধ্যমিকের পাশাপাশি মাধ্যমিক স্তরেও পড়ানো হয়, সেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক লাখ ৮০ হাজারের মতো বেড়েছে।
চার বছরের ব্যবধানে সরকারের অধীনে থাকা মাদ্রাসাগুলোতে (দাখিল ও আলিম ধারার মাদ্রাসা) আড়াই লাখের বেশি শিক্ষার্থী বেড়েছে। বর্তমানে মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষার্থী ২৭ লাখ ৫৮ হাজারের বেশি। এর মধ্যে ছাত্রী প্রায় ৫৪ শতাংশ।
এখানে ইতিবাচক তথ্যটি হচ্ছে, কারিগরি শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বেড়েছে। তার অন্যতম কারণ হলো, সরকার কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্ব দিচ্ছে এবং বিদেশে দক্ষ জনশক্তির চাহিদা থাকা। এর ফলে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। বর্তমানে ৫ হাজার ৩৯৫টি (এর মধ্যে ৫৮৮টি সরকারি মাত্র ) কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোট শিক্ষার্থী প্রায় সাড়ে ৭ লাখ। চার বছর আগে যা ছিল ৭ লাখের চেয়ে কিছুটা কম। ওই সময় কারিগরি প্রতিষ্ঠান ছিল ২ হাজার ৩০৯টি। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যায় সমতা এলেও কারিগরিতে ছাত্রীদের হার এখনো অনেক কম। কারিগরিতে যত শিক্ষার্থী পড়ে, তার মধ্যে ২৯ শতাংশের মতো ছাত্রী।
এ প্রতিবেদনে সরকারি মাদ্রাসার তথ্য দেওয়া হলেও কওমি মাদ্রাসার কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। অথচ সেখানে সরকারি মাদ্রাসার দ্বিগুণ শিক্ষার্থী পড়ে বলে মনে করেন অনেকে। এখন সরকারকে ভাবতে হবে মূলধারার শিক্ষায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে কেন। যেখানে দেশে জনসংখ্যা বাড়ছে, শিক্ষার হার বাড়ছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আয়তন ও সুবিধা বাড়ছে সেখানে শিক্ষার্থী কমবে কেন। সরকার কারিগরি শিক্ষা বিস্তারে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে তবে তা যথেষ্ট নয়। আরও বৃদ্ধি করতে হবে। একটি আধুনিক ও কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারলে দেশের উন্নয়নের যাত্রাপথ বাধাগ্রস্ত হবে।
এ মুহূর্তের সংবাদ