মাদকের নীল দংশন : করোনার মধ্যেও মাদক কারবার বেড়েছে

করোনাকালে কঠোর বিধিনিষেধ সত্ত্বেও দেশে মাদকের কারবার থেমে নেই বরং সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যায় ২০২০ সালে করোনার মধ্যে যেসব মাদকদ্রব্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে তা পূর্ববতী বছরের তুলনায় বেশি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সূত্রমতে, ২০২০ সালে ৩ কোটি ৮৪ লাখ ইয়াবা বড়ি, ১৩ লাখ ৩৭ হাজার ফেনসিডিল উদ্ধার হয়েছে। ২০১৯ সালে উদ্ধার হয়েছে ৩ কোটি ৪৪ লাখ ইয়াবা বড়ি, ৯ লাখ ৭৮ হাজার বোতল ফেনসিডিল। এছাড়া গাঁজা, আফিম, কোকেনও উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ, র‌্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা মহামারিতে মাদকসেবীদের চাহিদা যেন বেড়ে গেছে। অভিনব কৌশলে মাদক ঢুকছে দেশে, জরুরি পণ্য পরিবহনের ট্রাক, অ্যাম্বুলেন্স, লাশবাহী গাড়ি, নারী ও শিশুর শরীরে বা পোশাকের ভেতরে, শরীরের গোপন স্থানে, মাছের পেটে, সবজির মধ্যে, লঞ্চ, নৌকা, ট্রলারের গোপন স্থানসহ নানা কৌশলে মাদক কারবারিরা মাদক আনছেন। পত্রিকান্তরে প্রকাশ আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে গাঁজা, বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ফেনসিডিল, টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা ঢুকছে। সরকার মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেও মাদক কারবারি এবং ব্যবহারকারীরা যেন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। মামলাও কম হয়নি।

গতকাল শনিবার দেশে পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবস। জাতিসংঘ ঘোষিত এবারের প্রতিপাদ্য ‘মাদক বিষয়ে হই সচেতন, বাঁচাই প্রজন্ম, বাঁচাই জীবন।’

সম্প্রতি আরো ভয়ংকর মাদক আইস, এল এস ডির খোঁজ পাওয়া গেছে। ধনী ও মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুণ থেকে বস্তির কিশোর-তরুণেরাও মাদকের কারবার  ও সেবনে জড়িয়ে পড়েছে। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেভাবে মাদক সেবন বাড়ছে তা পরিবার ও দেশের জন্য হতাশাজনক।

একটি জাতীয় দৈনিকের মতে দেশে অনলাইন মাদক ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠেছে। কথা হলো, দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী  এবং সরকারের নানা সংস্থা থাকা সত্ত্বেও কিভাবে ভয়ংকর সব মাদক দেশে ঢুকতে পারছে। যে পরিমাণ মাদক আটক হচ্ছে তার বহু বেশি মাদকদ্রব্য মাদকসেবীদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। মামলা হচ্ছে, আটকও হচ্ছে, কিন্তু মাদকের কারবার কমছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন,  প্রশাসনের সাথে গোটা সমাজকে মাদকের বিরুদ্ধে জাগাতে না পারলে মাদক নির্মূল করা কঠিন হবে। মাদক কারবারের যারা গড ফাদার তারা আমাদের সমাজে, রাজনীতি বলয়ের মধ্যে ঢুকে আছে। লুণ্ঠন পুঁজি, কালো টাকা, সরকারি সম্পদ, সম্পত্তি দখল করা বড় অপরাধীরা আমাদের যুব সমাজকে মাদকাসক্ত, অপরাধী, সন্ত্রাসী বানাচ্ছে।

মাদকের চাহিদা কমিয়ে আনতে ডোপটেস্ট বিধিমালা বিভিন্ন দফতরে পাঠানো হয়েছে মর্মে জানান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক আহসানুল জব্বার। তিনি ডোপটেস্টের পরিধি বাড়াতে গাড়ি চালক, চাকরিতে প্রবেশকারী এবং  প্রয়োজনে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ডোপটেস্ট করানো যেতে পারে মর্মে সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন।

সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, সংগঠন, রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, পেশাজীবী সকলকেই সর্বনাশা মাদকের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ যুদ্ধে নামতে হবে। মাদকের নীল দংশনে যারা জর্জরিত, সর্বনাশের খাদের কিনারে যারা বসে আছে, তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্ব।