নিজস্ব প্রতিবেদক, রাঙামাটি »
উপজেলা সম্মেলনের চারমাস পর জেলা থেকে ঘোষিত আংশিক কমিটির চার নেতা পদ খোয়ালেন মাত্র দুই ঘণ্টাতেই! রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর। এর ১৩০ দিন পর ৮ মে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল জব্বার সুজন এবং সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ চাকমা সাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রফিকুল ইসলাম সুমনকে সভাপতি, মো. নিজামউদ্দিন ফরহাদকে সাধারণ সম্পাদক, সাইথোয়াই অং চৌধুরী ও মনবীর তঞ্চঙ্গ্যাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে চার সদস্যের উপজেলা কমিটি। ঘোষণার সাথে সাথেই জেলা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারাসহ অন্যান্য ইউনিট নেতারাও অভিনন্দনের জোয়ারে ভাসাতে শুরু করেন নতুন নেতাদের। কিন্তু মাত্র দুই ঘণ্টা পরেই জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ চাকমা ফেসবুকেই এক লাইনের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান- ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কাপ্তাই উপজেলা শাখা কমিটি স্থগিত করা হলো।’
এ বিষয়ে প্রকাশ চাকমার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন- ‘আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবেই কমিটি ঘোষণা করেছিলাম, এদের ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সুপারিশও ছিলো। কিন্তু কমিটি ঘোষণার পর জানলাম যে, সভাপতি-সম্পাদক একজনও নিয়মিত ছাত্র নয়, যা আমাদের গঠনতন্ত্রের ব্যত্যয়। ফলে আমরা আমাদের অভিভাবক দীপংকর তালুকদারের নির্দেশে কমিটি স্থগিত করেছি। তারা যদি প্রমাণ করতে পারে যে, তারা নিয়মিত ছাত্র তবে তাদের কমিটি পুনর্বহাল হবে, নতুন নতুন সিদ্ধান্ত হবে।’
তবে মজার ব্যাপার হলো কমিটি ঘোষণার প্রেসবিজ্ঞপ্তি ফেসবুকে আপ করা হয় জেলা সভাপতি আব্দুল জব্বার সুজনের ফেসবুক ওয়াল থেকে আর কমিটি স্থগিতের প্রেস বিজ্ঞপ্তি জানানো হয় সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ চাকমার ফেসবুক ওয়াল থেকে। দুজনের কেউই পৃথক দুটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের পাঠাননি বলে নিশ্চিত করেছেন অন্তত ১০ জন দায়িত্বশীল গণমাধ্যম কর্মী। তবে কমিটি ঘোষণার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সাক্ষর আছে সভাপতি-সম্পাদক দুজনেরই। কমিটি স্থগিত করার ১০ ঘণ্টা পরেও সোমবার সন্ধ্যা ছয়টা অবধি সভাপতি সুজনের ফেসবুক টাইমলাইনে কমিটি স্থগিতের কোন আপডেট ছিল না, বরং সেখানে তখনো ঘোষিত কমিটির প্রেস বিজ্ঞপ্তিটিই ঝুলছিলো।
স্থগিত কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুমন বলেন, ‘ছাত্রলীগের প্যাডে সভাপতি-সম্পাদকের সাক্ষরে কমিটি ঘোষিত হয়েছে। সেই কমিটি যদি জেলা সেক্রেটারি ফেসবুকে প্রেসবিজ্ঞপ্তি দিয়ে বাতিল করে দেন, সেটা কি করে হয়? এটা আমাদের বিরুদ্ধে একটা সুগভীর ষড়যন্ত্র।’
নিজে ২০০৯ সালে এসএসসি পাশ করেছেন জানিয়ে সুমন বলেন, আমার পড়াশুনায় একটা গ্যাপ পড়েছে, আমি কর্ণফুলি কলেজ থেকে এইচএসসি দিয়ে খারাপ করেছিলাম, এরপর এখন উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয়ে পড়ছি সেকেন্ড সেমিস্টারে।’ সাধারণ সম্পাদক নিজামউদ্দিন ফরহাদ রাঙামাটিতে কোথাও পড়াশুনা করছেন,তবে ঠিক কোথায় সেটা সুনির্দিষ্টভাবে জানেন না জানিয়ে দুই সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অংসুচাইন চৌধুরীর পুত্র সাইথোয়াই অং চৌধুরী চট্টগ্রাম শহরের প্রিমিয়ার বিশ^বিদ্যালয়ে এবং মনবীর তঞ্চঙ্গ্যা কর্ণফুলি কলেজে পড়াশুনা করছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। সুমন উপজেলা ছাত্রলীগের বিগত কমিটির সহসভাপতি ছিলেন বলে জানান তিনি।
স্থগিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. নিজামউদ্দিন ফরহাদ জানান, আমি ২০১১ সালে কাপ্তাই বিদ্যুৎ উন্নয়ন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এএসসি পাশ করে রাঙামাটি সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছি এবং বর্তমানে উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি আছি। আমাদের গঠনতন্ত্রে স্পষ্ট বলা আছে, যে কোন অনুমোদিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী হলেই ছাত্রলীগ করতে পারবে। এখন তারা কেনো আমাদের অছাত্র বলছে আমরা বুঝতে পারছি না। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য রাতেই জেলা সভাপতি ও সম্পাদককে ফোন করেছিলাম, তারা আমাদের ফোন ধরেননি।’
ঘোষিত কমিটির মত বাতিল করার প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সভাপতির সাক্ষর না থাকা প্রসঙ্গে জেলা সম্পাদক প্রকাশ চাকমা বলেন, সুজন (সভাপতি) এর সাথে রাতেই আমার কথা হয়েছে, সে শহরে না থাকায় দুইজনের সাক্ষরে করা যায়নি।’ মাত্র দুই ঘণ্টাতেই কমিটি ঘোষণা ও স্থগিত হওয়ার বিয়ষটি সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা তো আসলে জানতাম না যে তারা নিয়মিত ছাত্র নয়। কমিটি ঘোষণা করার পরই জেনেছি। তাই এই ভুল বোঝাবুঝি।’
এই বিষয়ে কথা বলার জন্য যোগাযোগ করা হলে জেলা সভাপতি আব্দুল জব্বার সুজন ফোন ধরেননি।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর গত সাত বছরেও আর সম্মেলন হয়নি। ফলে নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ সংগঠনটির তৃণমূল নেতাকর্মীরা। শুধু জেলাতেই নয়, বিভিন্ন উপজেলায়ও নতুন নেতৃত্ব আসার সুযোগ তৈরি না হওয়ায় আছে ক্ষোভ।