স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের #
মোহাম্মদ নাজিম:
করোনার দুঃসময়ে আর্থিক কষ্টের ছোবলে দৈনন্দিন জীবনে রীতিমতো বেগ পোহাতে হচ্ছে মানুষকে। আক্রান্তের শঙ্কা আর ভীতির মুখে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মানুষ ব্যবহার করছেন সুরক্ষা সামগ্রী। ফলে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে চিকিৎসাসামগ্রী কেনার হিড়িক। এ সুযোগে অবাধে বিষাক্ত ক্যামিকেল আর নি¤œমানের সুরক্ষাসামগ্রী নগরের অলি-গলিতে সয়লাব হয়ে পড়েছে, গড়ে উঠেছে নাম-বেনামে কারখানা। অধিক চাহিদার মুখে এসব তরল সুরক্ষাসামগ্রী শোভা পাচ্ছে ফার্মেসিতে।
মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর এসব ভেজাল সুরক্ষা সামগ্রী এখন নগর ছাড়িয়ে চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোতেও হারহামেশা চোখে পড়ছে। অনেকেক্ষেত্র অসাধু ব্যবসায়ীরা এক্ষেত্রে ব্যবহার করছেন বিভিন্ন উন্নতমানের ওষুধ কোম্পানির লোগো। যার ফলে সুনাম ক্ষুণœ হচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানির।
নগরীর ব্যস্ততম মুরাদপুর, জিইসি, দুই নম্বর গেইট, আগ্রাবাদ, দেওয়ানহাট, জামালখান, কাজির দেউড়িসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় নকল ও ভেজাল সুরক্ষা সামগ্রী বিক্রি হরদম চোখে পড়ে। ভ্রাম্যমাণ ভ্যান ছাড়াও বিভিন্ন বিক্রয় প্রতিনিধ ঘুরে ঘুরে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, স্যাভলন, হারপিক, হ্যাক্সিসল মানুষের দ্বারে পৌঁছে দিচ্ছেন। আকারভেদে এসব সুরক্ষাসামগ্রী ২০ থেকে ৪০, ৬০ থেকে ৯০ টাকা ধরে নাম নিচ্ছেন বিক্রেতারা। অপরদিকে কোনো ধরনের প্রেসক্রিপশন আর চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ওষুধ বিক্রির কারণে ভুগতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
আগ্রাবাদ মোড়ে একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করতেন মো. রহিম। করোনায় আর্থিক অনটনে পড়ে রহিম ভ্যানে তরল সুরক্ষা সামগ্রী বিক্রি করছেন। সুরক্ষাসামগ্রীর বিক্রির কোনো অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও ভেজাল আর নকল সুরক্ষা সামগ্রী বিক্রি করে চালাচ্ছেন সংসার। সুপ্রভাতকে রহিম জানান, কোম্পানি লোক এসে এসব পণ্য দিয়ে যান। ক্ষেত্রবিশেষে পণ্যের দাম একেক রকম। আর কোনো রকম যাচাই-বাছাই ছাড়াও মানুষ প্রয়োজনে দ্বারস্থ হচ্ছে এসব পণ্যে।
ভেজাল করোনা সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা: আবু সৈয়দ মোহাম্মদ ইমতিয়াজ হোসাইন সুপ্রভাতকে বলেন, ভেজাল ও নকল সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহারে চর্মরোগসহ ক্যান্সারও হতে পাড়ে। কারণ এসব ভেজাল পণ্য বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি হচ্ছে বলে সংবাদ মাধ্যমে জানতে পেরেছি।
এদিকে ল্যাব টেস্ট ছাড়া সয়লাব এসব তরল সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহারের ফলে ত্বকে বিভিন্ন ক্ষতিকর উপসর্গ ছাড়াও ক্যান্সার হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হোসাইন মোহাম্মদ ইমরান সুপ্রভাতকে বলেন, বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি এসব ভেজাল ও নকল করোনা সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করলে এলার্জিসহ বিভিন্ন রোগ হতে পারে। সাধারণ মানুষ এসব পণ্য ক্রয় করার সময় ভালো করে দেখে ও যাচাই-বাছাই করে ভালো কোম্পানির পণ্য ক্রয় করতে হবে।
বাজার ছড়িয়ে পড়া তরল সুরক্ষাসামগ্রীর বোতলের মুখে উৎপাদনের তারিখ আর নাম সর্বস্ব কারখানার সন্ধানে নামে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। মানুষের চাহিদাকে পুঁজি করে সক্রিয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও কারখানা খোঁজ পানান তারা। অভিযানের মুখে গত (সোমবার (২৯ জুলাই)) নগরীর দেওয়ানহাট এলাকার মধ্যম সুপারিপাড়ায় এ.আর চট্টলা কেমিক্যাল যান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো: উমর ফারুক। চার ঘণ্টার একটানা অভিযানে দেখা যায় বিভিন্ন সুরক্ষা সামগ্রী বানাতে ক্ষতিকর কেমিক্যাল প্রায় শ’খানেক ড্রামে রিজার্ভ করে রাখা হয়েছে। কারখানার মালিক রাশেদ নিজের হাতে ক্যামিস্ট ও ল্যাব ছাড়াই এসব মিশ্রণ করে বোতলজাত ও মোড়কের কাজ করছেন। এরপরে বাজারজাত করছেন নগরের বিভিন্ন প্রান্তে। পরে তাকে ৬ মাসের কারাদ- ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদ- দেয়। এর আগেও রিয়াজউদ্দিন বাজার ও হাজারীলেইনে প্রতিষ্ঠানটির ক্ষতিকর ও নকল সুরক্ষা সামগ্রী জব্দ ও ধ্বংস করা হয়। এরপরেও থেমেই নেই এসব কোম্পানির দৌরাত্ম্য। উৎপাদন আর বিতরণ চালিয়ে যাচ্ছেন সমানতালে।
বেসরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা সুপ্রভাতকে বলেন, করোনার মধ্যেও ঝুঁকি নিয়ে আমাদের অফিসসহ যাবতীয় কাজে ঘর থেকে বের হতে হচ্ছে। সুরক্ষাসামগ্রী ছাড়াও নিত্যনৈমিত্তিক ওষুধের দাম আগের চেয়ে বাড়তি। দাম সহনীয় রাখতে আমরা প্রশাসনের পজিটিভ অ্যাকশন আশা করছি।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক সুপ্রভাতকে বলেন, অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু নকল ও ভেজাল সুরক্ষাসামগ্রী জব্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি ওই কোম্পানির জব্দকৃত পণ্য ধ্বংস করা হয়েছে।