সুপ্রভাত ডেস্ক »
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘রাষ্ট্র ও সমাজের ভালো ঘটনা ও সাফল্যের সংবাদ এড়িয়ে যাওয়া বুদ্ধিবৃত্তিক অন্যায়।
তিনি গতকাল বিকেলে রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) আয়োজিত ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দশ উদ্যোগ : বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রার মাইলফলক’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দুর্বলতা হচ্ছে আমরা আমাদের উন্নয়নটা চোখে দেখি না, দেখলে বলি না, বলতে অনেক সময় লজ্জা পাই। আমরা সমালোচনা পছন্দ করি।’ খবর বাসসের।
‘সমালোচনা অবশ্যই থাকবে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সমালোচনাহীন ‘মনোটোনাস সোসাইটি’ বা একঘেঁয়ে সমাজ নয়, আমরা একটি বহুমাত্রিক সোসাইটিতে বসবাস করি। সে জন্য সমালোচনা থাকতে হবে কিন্তু সমালোচনার পাশাপাশি দেশটা যে বদলে গেলো, প্রতিটি মানুষের ভাগ্যের চাকা যে বদলে গেলো -সে কথাটাও তো বলতে হবে। সেটি না হলে তো মানুষের সামনে ঠিক চিত্র পরিস্ফুটন করা হয় না এবং আমার বিবেচনায় সেটি এক ধরণের বুদ্ধিবৃত্তিক অপরাধ। আমরা যেন সেই অপরাধ না করি।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমি সাংবাদিকদের অনুরোধ জানাবো- সমালোচনার পাশাপাশি সাফল্যটাও যেনো উঠে আসে, আজকে দেশ যে বদলে গেছে সেই সত্য বিষয়টি যেন মানুষের সামনে আমরা তুলে ধরি।’
‘পৃথিবীর কোনো সরকার, সে আজ থেকে একশ’ কিম্বা পাঁচশ বছর আগের হোক, বা আজ থেকে শত বছর পরের হোক, কোনো সরকার দাবি করতে পারবে না যে আমি শতভাগ নির্ভুল কাজ করেছি বা করবো উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘কাজ করলে ভুল হবে। সে ভুলের অবশ্যই সমালোচনা থাকতে হবে, সে ভুল শুধরে নেওয়ার জন্য প্রচেষ্টা থাকতে হবে। সেই ভুলটাকে অনেক বড় করে না দেখে সেটাকে তুলে ধরা এবং একইসাথে সাফল্যটাকেও তুলে ধরা দরকার।’
গোলটেবিল আলোচনার বিষয়ের গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ‘কসমেটিক উন্নয়নে’ বিশ্বাস করেন না। তিনি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নে বিশ্বাস করেন। টেকসই উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদী, বিষয়ভিত্তিক, ইস্যুভিত্তিক পরিকল্পনা প্রয়োজন। সে কারণেই তিনি দশ বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।’
ড. হাছান বলেন, পৃথিবীর সবচাইতে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত যার নিত্যসঙ্গী, মাথাপিছু কৃষিজমি সর্বনিঘ্ন, আয়তনের দিক দিয়ে পৃথিবীর ৯২তম হওয়া সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ ধান ও মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয়, সবজি উৎপাদনে চতুর্থ, আলু উৎপাদনে সপ্তম এবং খাদ্যশস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কোনো যাদুর কারণে নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যাদুকরী নেতৃত্বের কারণেই এসব অনন্য অর্জন সম্ভবপর হয়েছে।
শতবর্ষী বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ প্রণয়ন, দেশব্যাপী ১০০ শিল্পাঞ্চল গড়ার পরিকল্পনা, স্বাধীনতার সময়ে দেশের জিডিপিতে শিল্পখাতের ৬ শতাংশ অবদানকে ৩৫ শতাংশে উন্নীত করা, সারাদেশে শতভাগ বিদ্যুৎ, গ্রামে গ্রামে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ও ডিশ এন্টেনার সংযোগ-এই বদলে যাওয়া বাংলাদেশের কথা সাংবাদিকরা তুলে ধরবেন -প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তথ্যমন্ত্রী।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক প্রধান বক্তা, জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, বিদ্যুৎ বিভাগের পাওয়ার সেল মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন, আশ্রায়ণ প্রকল্পের (দ্বিতীয় পর্যায়) যুগ্ম সচিব আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনায় দশ উদ্যোগভুক্ত আশ্রায়ণ, শিক্ষা সহায়তা, আমার বাড়ি আমার খামার, ডিজিটাল বাংলাদেশ, কমিউনিটি ক্লিনিক ও শিশু বিকাশ, বিনিয়োগ বিকাশ, পরিবেশ সুরক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, সবার জন্য বিদ্যুৎ, নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন।
বাসসের বিশেষ সংবাদদাতা মাহফুজা জেসমিনের সঞ্চালনায় দশ উদ্যোগ সংশ্লিষ্ট এটুআই প্রকল্পের এনালিস্ট উপসচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন, কমিউনিটি বেজড হেলথ কেয়ার প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আসিফ ইকবাল, নারী উদ্যোক্তা ফাহমিদা খান, আঁখি সিদ্দিকা, গণমাধ্যম প্রতিনিধি কাজী রফিক, মাঈনুল আলম, উম্মুল ওয়ারা সুইটি, রাজু আহমেদ, মোহসিনুল করিম লেবু, রাবেয়া বেবি, মরিয়ম মনি সেঁজুতি এবং বাসসের পক্ষে রুহুল গণি জ্যোতি, মধুসূদন মন্ডল, খায়রুজ্জামান কামাল প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।