সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক :
মানিক হোসেন মোল্লার ফ্রি কিক। রিয়াদুল হাসান রাফির হেড থেকে পাওয়া বল বুকের টোকায় এগিয়ে শরীরটাকে ঘুরিয়ে নিখুঁত শটে লক্ষ্যভেদ করলেন তপু বর্মন। বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে দলকে এনে দিলেন আবারও পয়েন্ট পাওয়ার স্বাদ। এবার লক্ষ্য আরও বড়, ভারতের বিপক্ষে অভিজ্ঞ এই ডিফেন্ডার চান বাছাইয়ে প্রথম জয়।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে নিজের গোল, রক্ষণ ও আক্রমণভাগের পারফরম্যান্স, ভারতের বিপক্ষে পরের ম্যাচের করণীয় নিয়ে কথা বললেন জাতীয় দলের এই ডিফেন্ডার। কাতারের দোহার জসিম বিন হামাদ স্টেডিয়ামে গত বৃহস্পতিবার ২০২২ বিশ্বকাপ ও ২০২৩ এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১-১ ড্র করে বাংলাদেশ। বাছাইয়ের ‘ই’ গ্রুপে ৬ ম্যাচে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় ড্র। পয়েন্টও ২। সবশেষ ভারতের বিপক্ষে কলকাতার সল্টলেকে ড্র করে প্রথম পয়েন্ট পেয়েছিল জেমির দল। আগামী ৭ জুন ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ১৫ জুন সবশেষ ম্যাচের প্রতিপক্ষ ওমান। তপুর ভাবনায় আপাতত ভারত ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট পাওয়া।
শেষ ২০ মিনিটে কি একটু আগ্রাসী হয়ে খেলার পরিকল্পনাই ছিল?
তপু: জুয়েল (মোহাম্মদ) ও রয়েল (মেহেদী হাসান) নামার পর আমাদের খেলায় একটা মোমেন্টাম তৈরি হয়েছিল। গতি বেড়েছিল। কোচও চেয়েছিলেন, আমরা যেন এই মোমেন্টাম ধরে রাখি। ওদেরকে চাপ দেই। এ কারণে আমরা উপরে ওঠার সাহস করেছিলাম এবং ওদের রক্ষণে চাপ ধরে রেখে গোল পেতে চেষ্টা করছিলাম।
গোল তো পেয়েও গেলেন। কিন্তু রক্ষণ পাহারা দেওয়ার মূল দায়িত্ব ছেড়ে গোল করার কথা কি ভেবেছিলেন? যেহেতু আফগানিস্তান পাঁচ ফরোয়ার্ড নিয়ে খেলছিল, রক্ষণ ওভাবে ফেলে যাওয়ার ভাবনা তাহলে এলো কীভাবে?
তপু: প্রথমত, ওটা মানিক মোল্লার ফ্রি কিক ছিল। সেট পিসের মুহূর্তে আমরা এমনিতেই উপরে উঠে গিয়ে ফরোয়ার্ডদের সঙ্গে যোগ দেই। ওদের আক্রমণভাগ অনেক শক্তিশালী হলেও ফ্রি কিক থাকার কারণে আমি ও রাফি দুজনে উপরে উঠেছিলাম। ভেবেছিলাম, ওরা ফ্রি কিক ফেরাতে ফেরাতে আমরা দুজনে রক্ষণে চলে আসতে পারব। সেট পিসের সময় এই কাজগুলো ক্লাব এবং জাতীয় দলে নিয়মিত করার কারণে উপরে ওঠা নিয়ে দ্বিতীয়বার ভাবতে হয়নি। দ্বিতীয়ত, আমরা যেকোনো মূল্যে গোল পেতে চেয়েছিলাম। শেষ দিকে ওরা একটু নিচে নেমে যাওয়ায় আমাদের উপরে ওঠার সুযোগটাও এসেছিল। দেখলাম, যেহেতু আমরা ওদেরকে চাপে রাখতে পারছি, সুযোগ নেওয়ার এটাই সময়। বুক দিয়ে এগিয়ে দুই ডিফেন্ডারের ফাঁক দিয়ে চোখের পলকে যেভাবে গোলটা করলেন, নিশ্চয় দারুণ তৃপ্ত? গোলের ওই সময়ের ভাবনা কি ছিল?
তপু: গোল পেলে সবারই খুব ভালো লাগে। তাছাড়া পিছিয়ে পড়ার পর সমতায় ফেরা গোল বলে এর আনন্দ আরও বেশি। আসলে ওই সময়ে খুব বেশি কিছু ভাবিনি। দেখলাম, সামনে যে দুজন ডিফেন্ডার আছে, ওরা চার্জ করছে না। ভাবলাম, তাহলে শট নিয়ে ফেলি (হাসি)।
এমন গোলের জন্য তো অনুশীলন লাগে। ঢাকায় বা কাতরে গিয়ে কি এমন অনুশীলন করেছিলেন?
তপু: যেহেতু ডিফেন্ডার, মূল দায়িত্ব তো রক্ষণ সামলে রাখা। ওটার অনুশীলনের ফাঁকে আমি গোলের অনুশীলনও করি। বিশেষ করে যখন আমরা নিজেদের মধ্যে ৩০/৪০ মিটার মাঠ তৈরি করে চার বনাম চারজন করে ম্যাচ খেলি, তখন সবসময় আমার মধ্যে গোল করার প্রবণতা থাকে। পোস্টে প্রচুর শট নেই। এ কারণেই গোলটা পাওয়া সহজ হয়েছে।
আফগানিস্তানের জালে এমন শট তো আক্রমণভাগের কাউকে তেমন একটা নিতে দেখা গেল না।
তপু: দলের সিনিয়র খেলোয়াড় হিসাবে অনুশীলনে কিন্তু আমি ফরোয়ার্ডদের সবসময় বলি গোলমুখে প্রচুর শট নিতে। আমার মনে হয়, যদি পাঁচটা শট নেওয়া হয়, তাহলে একটা-দুটো গোল হতেও পারে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে মতিন (মিয়া), জুয়েল, রয়েল ওরা ভালো খেলেছে কিন্তু তেমন একটা শট নিতে পারেনি। অথচ, ওরা প্রত্যেকে প্রিমিয়ার লিগে ভালো করেছে। গোল পেয়েছে। এমনকি, অনুশীলনের সময়ও ওরা পোস্টে প্রচুর শট নিয়েছে।
আমরা যেহেতু বার্সেলোনা বা ইউরোপের দলগুলোর মতো নই। আমরা এখনই পারব না বক্সে গিয়ে বা বক্সের আশপাশে গিয়ে প্রচুর পাস দেওয়া-নেওয়া করে শতভাগ নিশ্চিত হয়ে পোস্টে শট নিতে। আমাদেরকে তাই সুযোগ পেলেই কাছ থেকে হোক, দূর থেকে হোক শট নিতে হবে, যাতে প্রতিপক্ষের গোলরক্ষক নার্ভাস হয়ে যায়। যাই হোক, ভারত ম্যাচের আগে আমাদের হাতে বেশ সময় আছে। ওদেরকে বলব, পোস্টে শট নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে।
ভারত ম্যাচের ভাবনা কি? ওদের বিপক্ষে এর আগে ড্র আছে। এবার নামবেন আফগানিস্তানকে রুখে দেওয়ার বাড়তি আত্মবিশ্বাস নিয়ে।
তপু: আমরা আগেও বলেছি, ভারত ও আফগানিস্তান আমাদের সমমানের দল। যদি আমাদেরকে সরাসরি এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের পরের ধাপে যেতে হয়, তাহলে এদের বিপক্ষেই পয়েন্ট পেতে হবে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে পেয়েছি। এবার ভারতের বিপক্ষে পুরো ৩ পয়েন্ট পেতে হবে।
আফগান ম্যাচের ড্র আমাদের আত্মবিশ্বাস যে অনেক বাড়িয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ওদের বিপক্ষে আমরা জিততেও পারতাম। আর হ্যাঁ, ভারতের বিপক্ষে আমরা সবসময় ভালো খেলি। একটা জেদ নিয়ে খেলি। এটা শুধু ফুটবল নয়; দেখবেন, ক্রিকেট, হকি সব খেলাতেই ভারতের বিপক্ষে আমাদের একটা জেদ কাজ করে। কলকাতার সল্টলেকে রক্ষণের একটু মনোযোগের ঘাটতিতে গোল খেয়েছিল বাংলাদেশ। আফগানিস্তান ম্যাচেও গোল হজম করতে হয়েছে একই কারণে।
তপু: আসলে ডি-বক্সে ছোট একটা ভুল করলেও সেটা বড় ভুল হয়ে যায়। আফগানিস্তান ম্যাচেও সেটা হয়েছে। তা না হলে ওই গোলটা আমরা হয়ত খেতাম না। ডিফেন্সের সিনিয়র খেলোয়াড় হিসেবে সতীর্থদের কাছে আমার চাওয়া থাকবে, এই ছোটখাট ভুলগুলো যেন না হয়। ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচ ভেবে নিয়ে ভারতের বিপক্ষে জয়ের জন্য নামব আমরা। কোচও নিশ্চিয় এই বিষয়গুলো ডিফেন্ডারদের বলবেন।
রক্ষণে নতুন সতীর্থ কাজী তারিক রায়হানের খেলায় কতটুকু সন্তুষ্ট?
তপু: ডেব্যু ম্যাচে ও যেভাবে খেলেছে, আমি খুশি। ওকে সেটা বলেছিও। ওকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল রাইট-ব্যাকে। চেষ্টা করেছে ওর দিকটা সামলানোর। আমার মনে হয় যতটুকু করেছে, ভালো করেছে।
দেশে অনুশীলন করেছেন প্রচন্ড গরমে। কাতারেও একই আবহাওয়ায়। খেলছেন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মাঠে। কোনো পার্থক্য?
তপু: দেশে আমরা যে গরমের মধ্যে অনুশীলন করেছি, তাতে খুবই লাভ হয়েছে। এখানে এসেও গরমে অনুশীলন করছি। নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি, এতে করে আমাদের স্ট্যামিনা অনেক বেড়েছে এবং সেটা আপনারা আফগানিস্তান ম্যাচে দেখতেও পেয়েছেন। ৭০ মিনিট ওদের আক্রমণের ঝড় সামলেছি কিন্তু দম ফুরায়নি আমাদের। বরং শেষ ২০ মিনিট ওদের উপর আধিপত্য করেছি। ঘুরে দাঁড়িয়ে ড্র করেছি।