নিজস্ব প্রতিবেদক »
একসাথে ইফতার শেষে বন্ধুর ফোন পেয়ে পঞ্চাশ টাকা নিয়ে বেরিয়েছিল আমার ছেলে। তারপর রাত সাড়ে আটটার দিকে ওর এক বন্ধু ফোন করে বলে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে আসতে। এসে দেখি আমার ছেলে গ্লাসবন্দি লাশ পড়ে আছে। অশ্রুসিক্ত চোখে এসব বলছিলেন গত শুক্রবার রাতে চেরাগীপাহাড় এলাকায় খুন হওয়া আসকার বিন তারেক ইভানের (১৮) পিতা ছৈয়দ মো. তারেক।
জানা গেছে, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিকে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বড়ভাই-ছোটভাই দ্বন্দ্বে বেশ কিছুদিন ধরে বিক্ষিপ্ত মারামারির ঘটনা ঘটেছিল নগরের চেরাগী পাহাড় এলাকায়। এর জের ধরে গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় ছুরিকাঘাতে আসকার বিন তারেক ইভানের মৃত্যু হয়।
ইভান বিএফ শাহীন কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তিন ভাই বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয় ছেলে।
নগরের এনায়েত বাজার বাটালী রোডের জমির ম্যানশনে পরিবারের সাথে থাকতেন।
ঘটনার পর চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে কথা হয় আসকারের পিতা, আত্মীয় ও বন্ধুদের সাথে। এসময় পিতা ছৈয়দ মো. তারেককে বাকরুদ্ধ অবস্থায় দেখা যায়। তিনি বলেন, ‘আমার তিন সন্তানের মধ্যে ইভান ছিল মেঝ। সে পড়াশোনায়ও ছিল মেধাবী। রোজাও সব রেখেছিল। তার সাথে আগে কোনো দিন কারো সাথে বিবাদ হয়েছে এমন শুনিনি।’ তার দাদা মো. কামাল ইভানের হত্যাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেছেন।
এ সময় কথা হয় ইভানের কয়েকজন বন্ধুর সাথে। তাদের মধ্যে একজনের মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। তবে তারা কেউ এ বিষয়ে মুখ খুলেনি। তাদের মধ্যে একজন বলেন, ‘কিছু নেশাগ্রস্ত ছেলে তাদের উপর আক্রমণ করেছে। মারধরের একপর্যায়ে ইভানকে ছুরিকাঘাত করে। পরে তাকে উদ্ধার করে আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে তারা চমেক হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে।’
পাঁচলাইশ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ছাদেকুর রহমান সুপ্রভাতকে জানান, ‘চেরাগী পাহাড় এলাকায় ছুরিকাঘাতে আহত অবস্থায় এক কিশোরকে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
ইভান খুনের ঘটনায় হত্যামামলা দায়ের হয়েছে বলে জানান কোতোয়ালী থানার পুলিম পরিদর্শক (তদন্ত) চৌধুরী রেজাউল করিম। তিনি সুপ্রভাতকে বলেন, ‘এ ঘটনায় সৌভন দেব (১৭) নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। তাছাড়া আটজনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। এতে অজ্ঞাতনামা আরও ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলা তদন্ত চলছে। অপরাধীদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’