সুপ্রভাত ডেস্ক :
মানুষের শারীরিক নানান রোগ সারাতে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। তবে রোগ সারাতে সঠিক রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কেও জানতে হয়। নইলে সঠিক চিকিৎসা দেয়া সম্ভব নয়। তাইতো শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য মানুষ বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করে। মানুষ বৈজ্ঞানিক ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান খোঁজার চেষ্টা করে। বৈজ্ঞানিক এই পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কোনো মানুষের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলা মোটেও সঠিক নয়। আর না এতে কেউ রাজিও হবে। তাইতো মানুষের পরিবর্তে কোনো প্রাণীকে বেঁছে নেয়া হয়। আর এই পরীক্ষার আশানুরূপ ফল পাওয়ার আগ পর্যন্ত ‘সাবজেক্ট’ হিসেবে কাজ করতে পারে এমন কনো জীবন্ত প্রাণীকেই পছন্দ করা হয়। আর জীবন্ত এ প্রাণীটি হলো ইঁদুর।
আপনি কি কখনো চিন্তা করে দেখেছেন যে, পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কেন ইঁদুরকেই বেঁছে নেয়া হয়? চলুন তবে আজ জেনে নেয়া যাক এর কারণগুলো-
ইঁদুর ছোট প্রাণী। এদেরকে খুব সহজেই পরিচালনা ও পরিবহণ করা যায়। এছাড়া এরা পরীক্ষা চালিয়ে যেতেও সাহায্য করে। কল্পনা করে দেখুন একটি জিরাফ বা একটি হাতিকে ইনজেকশন দেয়ার কথা। সম্ভবত এটা ক্ষুদ্র ইঁদুরের তুলনায় খুব একটা সহজ হবে না।
এছাড়া ইঁদুর তুলনামূলক ভাবে নিরীহ প্রাণী। পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় প্রাণীটিকে বিভিন্ন প্রকার অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে চাপ দেয়া হয়, যা হতে পারে অনেক বেশি বিরক্তিকর বা উত্তেজক। যদি আপনি ইঁদুরকে বিরক্ত করেন তাহলে সে খুব বেশি হলে আপনার আঙ্গুলে কামড়ে দেবে। অন্যদিকে যদি আপনি সিংহ কে ধারালো কিছু দিয়ে খোঁচা দেন, তাহলে গবেষক হিসেবে আপনার দিনটি খুবই খারাপ যাবে।
ইঁদুরের প্রজনন ক্ষমতা দুর্দান্ত। অন্য প্রাণীদের তুলনায় এরা খুব দ্রুত বংশবৃদ্ধি করতে পারে। এরা খুব কম সময় বেঁচে থাকে। অর্থাৎ এরা নতুন প্রজন্মের জন্য স্থান ছেড়ে দেয়। এজন্য খুব কম সময়ের মধ্যে বিভিন্ন জেনারেশনে পরীক্ষা করা সম্ভব হয়।
মানুষের সঙ্গে ইঁদুরের বৈশিষ্ট্যের লক্ষণীয় মিল পাওয়া যায় বলে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় ইঁদুর ব্যবহার করা হয়। কড়ংযষধহফ ঝপরবহপব গঁংবঁস এর মতে, ইঁদুরের ৯০ শতাংশ জিন আশ্চর্যজনক ভাবেই মানুষের সঙ্গে মিলে যায়। একারণেই মানুষের বিভিন্ন প্রকার জিনের মিথস্ক্রিয়ার প্রকৃতির পরীক্ষার জন্য মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে ইঁদুর। এছাড়াও মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের সঙ্গেও ইঁদুরের অঙ্গের বা তন্ত্রের মিল পাওয়া যায়। এজন্যই মানুষের শরীরে বিভিন্ন প্রকার ওষুধের প্রভাব নির্ণয় করা যায়।
আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে, এরা জিনগত ভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। এদের নির্দিষ্ট জিনকে বন্ধ করে বা খুলে রাখা যায় এবং এর ফলে কি পরিবর্তন হয় তা পর্যবেক্ষণ করা যায়। বিপরীত জিন সম্বলিত এই প্রকার ইঁদুরকে ‘নকআউট ইঁদুর’ বলা হয়। কিভাবে নির্দিষ্ট জিন নির্দিষ্ট রোগের জন্য দায়ী তা নির্ণয়ে এই প্রকার ইঁদুর ভীষণ ভাবে কাজে দেয়। আরেক ধরণের ইঁদুর আছে যাদের ট্রান্সজেনিক ইঁদুর বলা হয়। বাহির থেকে উঘঅ এদের শরীরে প্রবেশ করানোর পরে প্রজনন করানো হয়। মানুষের যন্ত্রণাদায়ক রোগের ম্যাপিং মডেল তৈরিতে সাহায্য করে এই ইঁদুর। খবর : ডেইলিবাংলাদেশ’র।