বিশ্বব্যাংক কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক বলেছেন, বাংলাদেশকে উচ্চ-মধ্যম আয়ের রাষ্ট্রে পরিণত করতে হলে আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ বাড়াতে হবে। আর সেক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে নেয়া বে-টার্মিনাল প্রকল্পের ব্রেকওয়াটার এবং চ্যানেল নির্মাণে দ্রুত অর্থায়ন করবে বিশ্বব্যাংক। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক জনসম্পৃক্ত বিভিন্ন প্রকল্পে বিশেষ করে প্রাইভেট সেক্টরের চাহিদা যাচাই করে অর্থায়ন করে। বে-টার্মিনাল প্রকল্পে অর্থায়নের পূর্বে সামাজিক ও পরিবেশগত ফিজিবিলিটি স্টাডির অংশ হিসেবে বেসরকারি খাতের মতামত জানতে মতবিনিময়ে মিলিত হয়েছি আমরা। ফলশ্রুতিতে এই বে-টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নৌ-যোগাযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে লজিস্টিক্স হাবে পরিণত হবে চট্টগ্রাম। পাশাপাশি চট্টগ্রামের সাথে ভারতের ভূ-বেষ্টিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলসহ ভুটান এবং নেপালের মধ্যে চলমান কানেক্টিভিটি প্রকল্পও ফলপ্রসূ হবে।
চট্টগ্রাম চেম্বার নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করতে এসে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যুবশক্তিকে দক্ষ মানবসম্পদে গড়ে তুলতে বিশ্বব্যাংকের চলমান বিভিন্ন সহযোগিতা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি চেম্বারের সাথে যৌথভাবে বিভিন্ন জ্ঞানভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও বিশ্বব্যাংকের প্রকিউরমেন্ট প্রসেসের উপর বিশেষ কর্মশালা আয়োজনের আশ্বাস প্রদান করেন।
দেশের প্রধান চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দিয়ে আন্তর্জাতিক আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ পরিচালিত হয়। চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৫টি এবং কক্সবাজারে ৩টি শিল্পাঞ্চলে বাড়ছে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ। ফলে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যকে আরও গতিশীল করতে বন্দরের নেয়া বে-টার্মিনাল এখন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে। বে-টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার অর্থনৈতিক করিডোর আরও গতিশীল হবে। সে কারণে বে-টার্মিনালের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই অঞ্চলে গড়ে ওঠা মাল্টিমোডাল যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো জোরদার করতে বিশ্বব্যাংকের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তার আহ্বান জানান চেম্বার সভাপতি। তিনি চট্টগ্রামে প্রাইভেট সেক্টরের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞানভিত্তিক গবেষণা ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ প্রদানে চিটাগাং চেম্বার ও বাংলাদেশ সেন্টার অব এক্সিলেন্স এর সাথে যৌথভাবে কাজ করারও আহ্বান জানান।
এটা এখন নিশ্চিত যে বে-টার্মিনাল চালু হলে শুধু বাংলাদেশ নয় পুরো দক্ষিণ এশিয়াতেই চট্টগ্রামের গুরুত্ব অনেক বেড়ে যাবে। তবে, বে-টার্মিনাল হলে শহরে যে গাড়ির চাপ বাড়বে সে ব্যাপারে আগাম প্রস্তুতি দরকার। বাংলাদেশে অনেক সময় ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়ার প্রবণতা আছে। বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর দেখা যায় প্রকল্পের পুরো সুফল ভোগ করা যাচ্ছে না আরও সম্পূরক কিছু কাজ না হওয়ার কারণে। যেমন, কক্সবাজার পর্যন্ত রেল চালু করার প্রকল্পের একই সঙ্গে যদি কালুরঘাটে নতুন আরেকটি সেতু নির্মাণে হাত দেওয়া হতো তাহলে পুরো সুফল পাওয়া থেকে জনগণ বঞ্চিত হতো না। কষ্টও পোহাতে হতো না। কাজেই আমরা নিবেদন করব বে-টার্মিনাল নির্মাণের শুরু থেকে যেন জলাবদ্ধতা, যাতায়াত, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি নিয়ে পূর্বপরিকল্পনা নেওয়া হয়।
এ মুহূর্তের সংবাদ