বন্দরে পণ্য আনা নেয়ার পুরো কাজটি সমন্বয় করে থাকেন ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারগণ। ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারদের দক্ষতার ওপর আমদানি বা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান কতো দ্রুত পণ্য হাতে পাবে তা নির্ভর করে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্য সমন্বয়ে জটিলতার মুখোমুখি হয়ে থাকেন ফ্রেইট ফরোয়ার্ডাগণ। এবিষয়ে সুপ্রভাতের সাথে কথা হয় বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডাস আসোসিয়েশনের (বাফা) প্রেসিডেন্ট কবির আহমেদের।
সুপ্রভাত বাংলাদেশ : বর্তমানে পণ্য পরিবহনে প্রধান সমস্যা কী?
কবির আহমেদ : বর্তমানে পণ্য পরিবহনে প্রধান সমস্যা হলো কনজেশন। কখনো জাহাজ আবার কখনো কনটেইনার কনজেশনে দীর্ঘসূত্রিতা হয় পণ্য পরিবহনে। আর এই দীর্ঘসূত্রিতায় অন্যতম কারণ কাস্টমস ক্লিয়ারিং। কাস্টমস ক্লিয়ারিংয়ে বিভিন্ন দপ্তর থেকে সার্টিফিকেট আনতে হয়, এতে দীর্ঘসূত্রিতা বেড়ে যায়।
সুপ্রভাত: তাহলে এই দীর্ঘসূত্রিতা কি আগামীর বন্দর বলে খ্যাত বে টার্মিনালেও থাকবে?
কবির আহমেদ : প্রকৃতপক্ষে দীর্ঘসূত্রিতার অন্যতম কারণ পদ্ধতিগত। কাগজে কলমে সব ঠিক থাকলো কিন্তু বাস্তব প্রয়োগে পদ্ধতিগত ত্রুটি থাকলে তা কখনো ফলপ্রসূ হবে না। তাই আমরা আগামীর বন্দর বলে খ্যাত বে টার্মিনালে যাতে পদ্ধতিগত ত্রুটি না থাকে সেজন্য কাজ করছি। বে টার্মিনাল হলে আমাদের কাজে দক্ষতা বাড়বে এবং আমদানিকারকরাও দ্রুত পণ্য পাবে।
এছাড়া বিদ্যমান চট্টগ্রাম বন্দর থেকে শিক্ষা নিয়ে অতি দ্রুত শর্ট টাইম, মিট টাইম এবং লং টাইম পরিকল্পনা নিয়ে বে টার্মিনাল কাজ এগিয়ে নেওয়া যেতে পারে। এতে বন্দরের ওপর চাপও কমবে।
সুপ্রভাত : বে টার্মিনালকে কীভাবে দেখতে চান?
কবির আহমেদ : একটা ভিশন নিয়ে বে টার্মিনাল নির্মাণ করা হলে দেশের সুনাম তথা ব্যবসায়ীরা উপক্রিত হবে। দেশে বিদেশী বিনিয়োগকারীরাও আকৃষ্ট হবে। কারণ বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের আগে প্রধানত চারটি বিষয়ে নজর দেয়। তার মধ্যে বন্দর অন্যতম। বিনিয়োগকারীরা তাদের আমদানি-রপ্তানি পন্যের চালান দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিবহনের নিশ্চয়তা চায়। বহির্বিশ্বে বন্দর শুধু মাত্র টার্মিনাল অপারেটর। পণ্য খালাস বন্দরের কাজ নয়।
সুপ্রভাত : তাহলে কীভাবে পণ্য খালাস হবে?
কবির আহমেদ : পণ্য খালাসের কাজটি মূলত ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারগণ করে থাকে। তাহলে বে টার্মিনালের ভেতরে ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারদের জন্য একটি শেড নির্মাণের জায়গা দেয়া যেতে পারে। সেখানে সব পণ্য রাখা হলে এবং ক্লায়েন্টদের কাছে সহজে পণ্য পৌঁছে দেয়া যাবে। এছাড়া পণ্য চুরির অপবাদ থেকেও মুক্ত হওয়া যাবে।
যেহেতু এলসিএল পণ্য ১০০% ফ্রেইট ফরোয়াডার্রা নিয়ন্ত্রণ করে, তাই তাদের হাতে ছেড়ে দেওয়া অথবা যৌথভাবে পরিচালনা করা যেতে পারে। তৈরী পোশাকে রপ্তানির প্রায় পুরোটাই ক্রেতা বিক্রেতার দোড় গোড়ায় পৌঁছে দিতে হয় ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারদের। তাই বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারদের নিজস্ব বন্ডেড ওয়্যার হাউজের ব্যবস্থা করতে হবে।
সুপ্রভাত : মোংলা ও পায়রা বন্দর রয়েছে। আগামীতে মাতারবাড়িও হচ্ছে। এতে পণ্য পরিবহন সুবিধায় চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব কি কমতে পারে?
কবির আহমেদ: অবস্থানগত বিবেচনায় চট্টগ্রাম বন্দর এমন একটি বন্দর যার অবদান কখনো কমবে না। চট্টগ্রাম বন্দরের নিজের প্রয়োজনেই বে টার্মিনাল বাস্তবায়ন করতে হবে।