চট্টগ্রাম বন্দর
ভূঁইয়া নজরুল >>
চট্টগ্রাম বন্দরের এক ও দুই নম্বর জেটির মুখে পলি ও পলিথিনের স্তূপে কমে গেছে নদীর গভীরতা। নদীর তলদেশে ২০ ফুট গভীর পর্যন্ত পলিথিনের স্তূপ। আগ্রাবাদ বক্স কালভার্ট দিয়ে নগরীর সব বর্জ্য ও পলিথিন গিয়ে ওই স্থানেই জমা হওয়ায় জেটি দুটি পরিত্যক্ত প্রায়। আগামীর বন্দর বলে খ্যাত দক্ষিণ কাট্টলী থেকে ইপিজেড পর্যন্ত সাগর পাড়ের বে টার্মিনালের মধ্যদিয়ে রয়েছে ৬টি খাল। তাহলে কি বে টার্মিনালেও চোখ রাঙাচ্ছে নগরের বর্জ্য পলিথিন? সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকেও পলিথিন বর্জ্য থেকে নগরবাসীকে রক্ষা করতে সিটি করপোরেশনকে প্রকল্প গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
এখন এ পলিথিনের ভাবনা বে টার্মিনালেও পড়েছে। প্রথম দিকে কারো নজরে না এলেও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) বর্তমান চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান তা শনাক্ত করেছেন। প্রথম দিকে তা ভাবনায় এলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) আউটার রিং রোড নির্মাণের সময় সমন্বয় করে স্লুইস গেট নির্মাণ করা যেতো। এখন দক্ষিণ কাট্টলী রাসমনি ঘাট থেকে ইপিজেড পর্যন্ত ৬টি খালের মুখে ইতিমধ্যে স্লুইস গেট বসানো হয়ে গেছে। তাহলে কি এসব গেট দিয়ে নগর বর্জ্য ও পলিথিন গিয়ে বে টার্মিনাল দিয়ে বের হবে?
এ প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, ‘মোটেও না। বে টার্মিনালের ভেতর দিয়ে কোনো খাল সাগরে পতিত হতে দেয়া যাবে না। যদি দেয়া হয় তাহলে বে টার্মিনালের জেটিগুলোর চিত্র চট্টগ্রাম বন্দরের এক ও দুই নম্বর জেটির মতো হতে পারে। এতে হুমকির মুখে পড়তে পারে বে টার্মিনাল।’
তাহলে এই ছয় খালের পানি কিভাবে সাগরে মিলিত হবে? এ প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ একটি খালের মাধ্যমে এসব খালের পানি সাগরের সাথে যুক্ত করা হবে। খালটি পর্যাপ্ত চওড়া করা হবে। একইসাথে খালের মুখে সাগর প্রান্তে একটি স্লুইস গেট থাকবে যাতে সাগরের পানি খাল দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে। একইসাথে নগরী থেকে পানিগুলো যে পয়েন্টে এই খালের সাথে যুক্ত হবে সেখানে নেট সিস্টেম থাকবে পলিথিন ও বর্জ্য পৃথকীকরণের জন্য।’
কিন্তু সাড়ে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ বে টার্মিনাল এলাকার এই ছয় খালের পানি একসাথে কিভাবে করা যাবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন,‘আমরা এজন্য একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেবো। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি সার্ভে করে এসব পানি কিভাবে ড্রেনেজ করা যায় এর একটি ডিজাইন দেবে। সেই ডিজাইন অনুযায়ী কাজ করব।’
এদিকে সিডিএ’র স্লুইস গেটের ডিজাইন অনুযায়ী পানি বে টার্মিনাল দিয়ে সাগরের সাথে যুক্ত হওয়ার কথা। এ বিষয়ে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন,‘ দক্ষিণ কাট্টলী রাসমনি ঘাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত আউটার রিং রোডটি কিন্তু উপকূলীয় বেড়িবাঁধ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। শহর রক্ষা এই বাঁধটি যাতে রক্ষা পায় সেজন্য আমরা রিং রোড থেকে সাগরের দিকে ১০০ মিটার পরে গিয়ে বে টার্মিনালের নির্মাণের ছাড়পত্র দিয়েছিলাম। কিন্তু একটি নির্ধারিত অংশে এই দূরত্ব না মেনে রিটেনিং দেয়াল নির্মাণ করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে এমন কোনো ডিজাইন করা যাবে না, যাতে আমাদের শহর রক্ষা বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একইসাথে বে টার্মিনালে যাতে পলি বা পলিথিন না জমে সেটিও ভাবনার বিষয়।’
তিনি আরো বলেন, আমাদের দক্ষ পরামর্শক টিম রয়েছে। আগামী ৫০ বছরের পানি নিষ্কাশনের তথ্য পর্যালোচনা করে স্লুইস গেটের ডিজাইন করা হয়েছে। তাই বন্দরের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনে আমাদের সহায়তা নিতে পারে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, নগরী থেকে পানি বের হওয়ার রাস্তা রাখতে হবে। অন্যথায় পানি আটকে জলাবদ্ধতা মারাত্নক রূপ নিতে পারে। পানি নিষ্কাশন নিয়ে সকল সংস্থা সমন্বয়ের মাধ্যমেও সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ কাট্টলী রাসমনি ঘাট থেকে ইপিজেড পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় বে টার্মিনাল নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সাগরের ভেতরের দিকে এ এলাকায় তিনটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এরমধ্যে একটি করবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং অপর দুটি করা হবে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে বিদেশি প্রতিষ্ঠান। এই বে টার্মিনালকে বলা হচ্ছে আগামীর বন্দর। এখানে ১২ মিটার ড্রাফটের যেকোনো দৈর্ঘ্যরে জাহাজ দিন রাত ২৪ ঘণ্টা ভিড়তে পারবে।