নিজস্ব প্রতিবেদক »
বাংলাদেশ রাসায়ন সমিতি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি মো. জাফর আলম বলেছেন, ‘দেশে রাসায়নিক দ্রব্যের বিস্ফোরণ, অগ্নিদুর্ঘটনা বাড়ছে। এতে সম্পদের বিনাশ, মানুষের প্রাণহানি ও পরিবেশের ক্ষতিসাধন হচ্ছে। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে কয়েকটি কমিটি ঘোষণা করা হয়। কিন্ত সেই কমিটি কার্যকর ফলাফল দিতে পারে না। তার জন্য বিশেষজ্ঞ দ্বারা একটি জাতীয় কমিটি ঘোষণা করা জরুরি। প্রতিটি দুর্ঘটনা কেবল তারাই পর্যবেক্ষণ এবং মতামত প্রদান করবে। সেই কমিটি অনুসারে সংশ্লিষ্ট সংস্থা কাজ করবে।
গতকাল বুধবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা দেখেছি বিএম ডিপো দুর্ঘটনা, নিমতলি বিস্ফোরণ এবং বিভিন্ন ধরনের অগিকা- হওয়ার পর কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির সদস্যদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনো ধারণাই থাকে না। যার কারণে দীর্ঘ সময় গড়িয়ে গেলেও প্রায় সময় সঠিক কারণ, প্রতিরোধের উপায় এবং করণীয় বের করতে পারেন না। তাই এ জন্য একটি জাতীয় কমিটি দরকার। প্রতিটি দুর্ঘটনায় কেবল তারাই পর্যবেক্ষণ করবে এবং মতামত প্রদান করবে। সেই কমিটির রিপোর্ট অনুসারে সংশ্লিষ্ট সংস্থা কাজ করবে। জাতীয় কমিটি উচ্চ পর্যায়ের হতে হবে। যেখানে আন্তর্জাতিক আইন, দেশীয় আইন মানা হবে এবং বিশেষজ্ঞরা থাকবেন।
বিস্ফোরণ বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি আরও বলেন, আমাদের বাসাবাড়ি এখন তৈরি হয়েছে এয়ার কন্ডিশন সিস্টেমে। সেখানে আগের মতো ভ্যান্টিলেশন সিস্টেম নেই। যার কারণে জমাট গ্যাস আটকে থাকে। সেখান থেকে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটছে। তা দ্রুত মনিটরিং করা দরকার। সেফটি ট্যাংক পরিষ্কার করতে গিয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে। ম্যানুয়ালি সেফটি ট্যাংক পরিষ্কার করার পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। এছাড়া বাসা-অফিসে গ্যাস সংযোগ করার পর তা চেক করতে হবে। তা না করলে সেখানে লিকেজ তৈরি হয়, লিকেজ থেকে গ্যাস। পরে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
মতবিনিময় সভায় আরও বলা হয়- বিভিন্ন দুর্ঘটনা সচেতনতা এবং মানসম্মত ব্যবস্থাপনা সিস্টেমের অভাবে ঘটেছে। কেমিক্যালস গুদামজাতকরণ, স্থানান্তর ও পরিবহনে মানতে হবে আইন। সেখানে যারা কাজ করবেন তাদের প্রত্যেকের দরকার প্রশিক্ষণ। তা না হলে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব নয়। দাহ্য পদার্থ সংরক্ষণ ও সুরক্ষার পদ্ধতি, আবাসস্থলে দাহ্য গ্যাসের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। তার জন্য দরকার বিপজ্জনক কেমিক্যালস ও অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থ হ্যান্ডলিং এ স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং সিস্টেম অনুসরণ করা। কঠিন, তরল, বায়বীয় সকল প্রকার পদার্থের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত কর্মী বাহিনী দরকার। হ্যান্ডেলিং কার্যক্রমের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা দক্ষ ও শিক্ষিত ইমারজেন্সি রেসপন্স টিম প্রস্তুত থাকতে হবে। বিপজ্জনক রাসায়নিক গ্যাস, তরল যে অবস্থাতেই থাকুক না কেন, আর্ন্তজাতিক বিধি মোতাবেক পরিবাহিত হতে হবে। এলএনজি, এলপিজি, বিভিন্ন ধরনের এসিড, গ্যাসীয় পদার্থ ট্রাক ও লরিতে পরিবহনের সময় এসব পণ্যের নাম, ইউ এন নম্বর, পণ্যের বিপদ সংক্রান্ত বর্ণনা প্রতীক চিহ্ন প্রর্দশন করতে হবে।
সভা সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ রাসায়ন সমিতি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী। এছাড়া সমিতির সভাপতি মো. জাফর আলম, কেন্দ্রীয় সমিতির সদস্য ড. মো. ইদ্রিস আলী, প্রেস ক্লাবের সভাপতি সালাউদ্দীন মোহাম্মদ রেজা, সমিতির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ড. রিয়াজুল হক বক্তব্য রাখেন।