বিস্ফোরণের নেপথ্যে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড

smart

২৬ কন্টেইনারে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ছিল : চবক চেয়ারম্যান

২৪ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বড় দুর্ঘটনা : বিকডা চেয়ারম্যান

ভূঁইয়া নজরুল »

হাটহাজারীর ঠান্ডাছড়িতে উৎপাদিত হয়েছিল ‘দুর্ঘটনার জন্য দায়ী’ সেই হাইড্রোজেন পার অক্সাইড। স্মার্ট গ্রুপের মালিকানাধীন সেই কারখানার নাম আল রাজী কেমিক্যাল কমপ্লেক্স। সেই কারখানায় উৎপাদিত সেই রাসায়নিক পদার্থ রপ্তানির লক্ষ্যে নিয়ে আসা হয় সীতাকুণ্ডের কদমরসুলে নিজেদের অপর প্রতিষ্ঠান বিএম কন্টেইনার ডিপোতে। সেই ডিপোতে শনিবার রাত ১১টায় কন্টেইনার ডিপোর ২৪ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঘটলো ভয়াবহ এই দুর্ঘটনা।

এই দুর্ঘটনা আমাদের জন্য বিশাল একটি ধাক্কা উল্লেখ করে ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) চেয়ারম্যান নুরুল কাইয়ুম খান, ১৯৯৯ সালে কন্টেইনার ডিপো চালু হওয়ার পর এধরনের বড় দুর্ঘটনা কখনো ঘটেনি। এর আগে ছোটো-খাটো দুর্ঘটনা হলেও তা ছিল সামান্য।

কিন্তু দুর্ঘটনার জন্য যে হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের কথা বলা হচ্ছে এসব রাসায়নিক পদার্থ কি আরো ডিপোতে রয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে নুরুল কাইয়ুম খান বলেন,‘ বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো রয়েছে ১৯টি। এসব ডিপোর অনেকে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড রপ্তানির জন্য ডিপোতে এনে জমা করে। অনেক বছর ধরে তা হয়ে এলেও এই ডিপোতে দুর্ঘটনা কেন ঘটলো তা বুঝা যাচ্ছে না। তবে দুর্ঘটনা হতেই পারে, এটাই স্বাভাবিক।’
আগুনে নেভাতে ব্যস্ত ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানান, ছোটো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তারা পানি দিচ্ছিল। কিন্তু পানির দেয়ার কিছুক্ষণ পরই কন্টেইনার বিস্ফোরিত হয়। একটার পর একটা কন্টেইনার বিস্ফোরণে আগুনে নেভাতে নিয়োজিত ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উড়ে যায়।

বিস্ফোরণ হলো কেন?

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানান, কন্টেইনারে যে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ছিল তা তাদেরকে জানানো হয়নি। কন্টেইনারে প্লাস্টিকের জারে থাকা হাইড্রোজেন পার অক্সাইড পানির সংস্পর্শে আসার পর জারিত হয়ে গ্যাসীয় পদার্থে পরিণত হয় এবং তাপমাত্রা বেড়ে যায়। কন্টেইনারের ভেতরে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার পর গ্যাসের চাপে তা বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন,‘ ২৬টি কন্টেইনারের রাসায়নিক পদার্থ হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ছিল। কন্টেইনার বিস্ফোরিত হওয়ার পর লোহার তৈরি কন্টেইনারের পাতগুলো প্রবল বেগে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং মানুষ হতাহত হয়।’
তিনি আরো বলেন, ৫০০ মিটারের একটি টিন শেডের নিচে রাখা কন্টেইনারগুলোতে এসব হাইড্রোজেন পার অক্সাইড দাহ্য পদার্থগুলো ছিল।

১০ হাজার একক কন্টেইনার রাখার ধারণক্ষমতা থাকলেও গত শনিবার বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ৪ হাজার ২০০ একক কন্টেইনার ছিল। এরমধ্যে ৩০০০ ছিল খালি কন্টেইনার, রপ্তানি পণ্যভর্তি ছিল ৮০০ কন্টেইনার এবং আমদানি পণ্যভর্তি ছিল ৪০০ কন্টেইনার ছিল বলে বিএম বিএম কন্টেইনার ডিপো কর্তৃপক্ষ জানায়।

আগুন নেভানো গেল না কেন?

শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে আগুন লাগার পর বিস্ফোরণ হয় রাত ১১টার দিকে। কিন্তু গতকাল দিনভর পর্যন্ত জ্বলছিল আগুন। কিন্তু আগুন নেভানো যায়নি কেন? ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানান, হাইড্রোজের পার অক্সাইড পানি দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়। এবিষয়ে কথা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইসমাঈল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন,‘ এসব রাসায়নিক পদার্থ নেভানোর জন্য এক ধরনের স্প্রে ব্যবহার করতে হয়। মেটাল পাউডার সম্বলিত সেসব স্প্রে আগুন নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এসব কন্টেইনারে যে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ছিল তা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের আগে থেকে জানানো হয়নি।’

হাইড্রোজেন পার অক্সাইড কি কাজে লাগে?

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন,‘বাংলাদেশের অনেক কোম্পানি হাইড্রোজেন পার অক্সাইড বিদেশে রপ্তানি করে থাকে। বিস্ফোরিত এসব হাইড্রোজেন পার অক্সাইড রপ্তানির উদ্দেশ্যে তাদের ( স্মার্ট গ্রুপ) অপর প্রতিষ্ঠান থেকে আল রাজী কেমিক্যাল কমপ্লেক্স থেকে এখানে আনা হয়েছিল।’

হাইড্রোজেন পার অক্সাইড লোসন, টুথপেস্টসহ ফার্মেসির বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয় উল্লেখ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রসায়নের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইসমাঈল হোসেন বলেন,‘পরিষ্কারক পণ্য তৈরিতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ব্যবহৃত হয়। এছাড়া গার্মেন্টসে এবং ওয়াশিং প্ল্যান্টে কাপড়ের রং পরিবর্তন করতেও তা ব্যবহৃত হয়ে থাকে।’