সুপ্রভাত ডেস্ক »
গ্লাসগোতে কপ-২৬ জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন শনিবার পর্যন্ত গড়িয়েছে। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে চলা বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে (কপ ২৬) বেশ কিছু বিষয়ে অসন্তোষ থাকলেও শেষ মুহূর্তে মতৈক্য হয়েছে। নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পর শনিবার রাতে চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হয়। দেশগুলো মতৈক্যে পৌঁছালেও অনেক দেশের মধ্যেই গভীর অসন্তোষ রয়েছে।
গ্লাসগোতে প্রায় ২০০টি দেশের কূটনীতিকরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলিকে সহায়তা করার জন্য আরও পদক্ষেপের ব্যাপারে মতৈক্য পৌঁছান। কিন্তু শেষ মুহুর্তে চুক্তি সম্পন্ন হলেও জলবায়ু সংকট ঘিরে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
চূড়ান্ত চুক্তিতে কয়লার ব্যবহার কমানো বা ‘ফেজ ডাউন’ করার ভাষাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর আগে সেখানে বন্ধ করা বা ‘ফেজ আউট’ করার কথা ছিল। ভারতের পক্ষ থেকে এ পরিবর্তনের আহ্বান জানানো হয়েছিল।
সুইজারল্যান্ডের প্রতিনিধি সিমোনেটা সোমারুগা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার নিয়ে ভাষা পরিবর্তনের নিন্দা করেছেন। সোমারুগা বলেন, ‘আমাদের ফেজ ডাউন প্রয়োজন নয়, আমাদের প্রয়োজন ফেজ আউট করা।’
অসন্তোষ থাকলেও চুক্তিটি একটি সুস্পষ্ট ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করেছে যে সব দেশকে অবিলম্বে, বৈশ্বিক তাপমাত্রার বিপর্যয়কর বৃদ্ধি রোধ করতে আরও অনেক কিছু করতে হবে।
চুক্তিতে ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন প্রায় অর্ধেকে কমিয়ে আনা থেকে শুরু করে আরেকটি শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস, মিথেন নির্গমন রোধ করার জন্য বিশ্বের যে নির্দিষ্ট পদক্ষেপগুলো নেওয়া উচিত তার রূপরেখা দেওয়া হয়েছে৷ এ ছাড়া লক্ষ্যে পৌঁছাতে অগ্রগতি বা ব্যর্থতার জন্য নির্দিষ্ট দেশকে দায়বদ্ধতা দেখাতে নতুন নিয়ম ঠিক করা হয়েছে।
চুক্তি নিয়ে শনিবার রাতে এবারের সম্মেলনের প্রেসিডেন্ট অলোক শর্মা এক সংবাদ সম্মেলন করেন।
অলোক শর্মা বলেন, ‘কঠিন কাজ এখন শুরু হলো। আমরা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রিতে সীমিত রাখার লক্ষ্য টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছি। আমরা যদি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করি তবেই এটি টিকবে।’
সম্মেলনের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘সমষ্টিগত ও একটি দল হিসেবে আমরা এটি অর্জন করেছি। এ অর্জন নিয়ে অনেকের সন্দেহ ছিল।’
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এটিকে একটি ‘বড় পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘এখনো অনেক কাজ বাকি রয়ে গেছে।’
চুক্তিতে শেষ মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের জন্য আহ্বান জানায় ভারত ও চীন। তারা কয়লার ব্যবহার ‘ফেজ আউট’ করার পরিবর্তে ‘ফেজ ডাউন’ করতে বলে। শেষ পর্যন্ত তা অনুমোদন পেলেও অনেক দেশ এতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি।
গ্লাসগো জলবায়ু চুক্তি ঘিরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিস বলছে, চুক্তিটিতে কেবল ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার লক্ষ্য টিকিয়ে রাখা হলো।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস চুক্তি প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘এটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ তবে যথেষ্ট নয়।’
সম্মেলনের সামগ্রিক লক্ষ্য ছিল উষ্ণতাকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাবগুলো এড়াতে একটি পথ নির্দেশিকা তৈরি করা।
সংবাদ সম্মেলনে কয়লার ফেজ ডাউন বিষয়ে সম্মত হওয়া প্রসঙ্গে অলোক শর্মা বলেছেন, কয়লা নিয়ে মূল প্রস্তাবটি থেকে যাবে বলে তিনি আশাবাদী।
চুক্তি নিয়ে মার্কিন জলবায়ু দূত জন কেরি বলেন, প্যারিস ক্ষেত্র তৈরি করেছিল এবং গ্লাসগোর দৌড় সেখান থেকে শুরু হয়েছে। শনিবার রাত থেকে সে দৌড় শুরু হলো।
কয়লা প্রসঙ্গে কেরি বলেন, কয়লা ব্যবহার শেষ করার আগে আপনাকে ব্যবহার সীমিত করতে হবে। এবারে চুক্তিতে তার শুরু হলো।