করোনার মধ্যেও চলতি বছরে দেশের প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) ৮ শতাংশ বাড়বে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে এই খাতে ২০ বিলিয়ন ডলার আয় বাড়তে পারে যার বাজার মূল্য ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা করে)।
গত শুক্রবার বিশ্বব্যাংক ও নোম্যাডের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনায় ভ্রমণ নিয়ন্ত্রণের কারণে আনুষ্ঠানিক উপায়ে প্রবাসী আয় প্রবাহ বেড়েছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, প্রবাসী আয় প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ হবে অষ্টম। শীর্ষে থাকবে ভারত, দ্বিতীয় চীন, তৃতীয় মেক্সিকো। গত এপ্রিলের প্রতিবেদনের পূর্বাভাস ছাপিয়ে নূতন এই আভাস বাংলাদেশের জন্য সুসংবাদ। তবে একথাও বলা হয় যে, গত বছরের তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ার প্রবাসী আয় ৪ শতাংশ কমতে পারে।
২০২১ সালে আরও কমতে পারে ১১ শতাংশ। দেশে জিডিপির প্রায় ৬ দশমিক ২ শতাংশের সমান প্রবাসী আয় আসে। এই খাত ২৩ শতাংশে নিয়ে প্রথমে আছে নেপাল। সরকারের ২ শতাংশ প্রণোদনার কারণে সরকারি চ্যানেলে রেমিট্যান্স ভাল আসছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি ছাড়াও ইউরোপÑআমেরিকার উন্নত দেশগুলি থেকেও রেমিট্যান্সের হার বাড়ছে। প্রবাসী আয় বাড়লে দেশের অর্থনীতি শক্ত ভিত পায়। বড়ো কথা, প্রবাসী আয়ের ফলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ভোগব্যয় বাড়ে। জীবনযাত্রা সচল থাকে আর এই পরিস্থিতি উৎপাদনকে গতিশীল রাখে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঈদ ও বন্যার কারণে প্রবাসীরা তাদের আত্মীয়স্বজনদের জন্য টাকা না জমিয়ে পাঠাচ্ছেন। তদুপরি করোনা মহামারির সময়ের কথা মনে রেখে প্রবাসীদের আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে অর্থ পাঠানো বেড়ে গেছে।
এখন সরকারের উচিত প্রবাসী কর্মিদের ভালোমন্দের প্রতি নজর বাড়িয়ে দেওয়া। স্বদেশে এসে যারা আটকা পড়েছেন তাদের ভিসা ও আকামা বাড়ানোর ব্যাপারে সরকারি চ্যানেলে আলোচনা চালানো বাঞ্ছনীয়। প্রবাসী যারা দেশে ফিরে এসেছেন তাদের সহায়তা কিংবা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
করোনাকালে বিশ্বের ২১টি দেশে ১ হাজার ৯৭২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এর মধ্যে সৌদি আরবেই মারা গেছেন ৮৫০ জন। এখন মৃত্যু ও সংক্রমণ কমে এসেছে। প্রবাসে কর্মিদের গাদাগাদি করে থাকা, কর্মস্থলে অধিক জনসমাগম, চাকরি নিয়ে শঙ্কা ও অনিশ্চয়তা, স্বাস্থ্যবিধি পালনে উদাসীনতা এসব কারণে করোনার ঝুঁকি রয়েছে। আমাদের দূতাবাসকর্মী এবং সমিতিগুলি এ ব্যাপারে সচেতনতামূলক ভূমিকা নিতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের নারী শ্রমিকদের অবস্থা আরও করুণ। পত্রিকান্তরে প্রকাশ, গত ৫ বছরে ৪৭৩ জন নারী কর্মীর লাশ এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি থেকে। সৌদি আরবে পাঠানো কর্মীদের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। এর মধ্যে নিপীড়ন নির্যাতনে বেশ কিছু সংখ্যক নারী আত্মহত্যা করেছেন, এমন খবরও আছে। এ বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬৩ জন নারী কর্মির লাশ এসেছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে নারী কর্মিদের ওপর যৌন নিপীড়ন, শারীরিক নির্যাতনের খবর প্রায়ই পত্রিকায় আসে। সরকারের উচিত মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের দেশের নারীদের অবস্থা গভীরভাবে খতিয়ে দেখা।
মতামত সম্পাদকীয়