নিজস্ব প্রতিবেদক »
বাবার ব্যবসাÑবাণিজ্য ভালো থাকায় ছোটবেলা থেকে গণপরিবহনে চলার অভ্যাস ছিল না। এরপর প্রাণঘাতী করোনা এসে পরিবারে নাজুক অবস্থা সৃষ্টি হলে গণপরিবহনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে আসা যাওয়া শুরু করি। কিন্ত একদিন বাসে হঠাৎ লক্ষ্য করলাম আমার স্পর্শকাতর জায়গায় বাবার বয়সী এক লোকের হাত পড়েছে। চক্ষুলজ্জার ভয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়েও পারিনি। সেদিন থেকে সিদ্ধান্ত নিই গণপরিবহনে উঠানামা বন্ধ করার। বাবা-মাকে বলে জমানো কিছু টাকা দিয়ে পুরোনো মোটরবাইক (স্কুটি) কিনে ফেলি। শেষে প্রশিক্ষণ-লাইসেন্স নিয়ে বর্তমানে নগরের এ গলি থেকে ও গলি ছুটে বেড়াই- জানান প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির ছাত্রী কলি (ছন্দ নাম) ।
দুই সন্তানের জননী জান্নাতুল মাওয়া। তিনি কাপাসগোলার বাসিন্দা। সংসার সামলিয়ে সমানতালে একটি পার্লার পরিচালনা করছেন। তার দ্ইু সন্তানের মধ্যে একজন ইস্পাহানি স্কুলে, অপরটা নাসিরাবাদ স্কুলে। তাদেরকে প্রত্যেক দিন মোটরবাইকে আনা-নেয়া করেন। এতে গণপরিবহন যোগে সন্তানদের আনা নেওয়ায় ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে না, সময় লাগছে কম, অন্যদিকে বিরাট অংকের অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে বলে জানান তিনি।
প্রতিদিন কর্নেলহাট থেকে মোটর বাইকযোগে জিইসি মোড়ে আসেন প্রিমিয়ার ব্যাংকে কর্মরত রিকি দাস। তিনি বলেন, নিজে গাড়ি চালিয়ে আসার মধ্যে একটা গর্ব কাজ করে। সেই সাথে বেঁচে যাচ্ছে সময়, টাকা, গণপরিবহনে হয়রানি হওয়া থেকে।
মাওয়া, রিকির মতো নগরে প্রতি অলি গলিতে দেখা যায় অনেক নারীকে বাইক চালিয়ে যেতে। অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায় তাদের চালকের আসনে বসতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। অনেক পরিবার চায়না নারীকে চালকের আসনে দেখতে। মোটরবাইক শেখার পর্যাপ্ত পরিমাণ স্কুল, সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ নেই বলেও অনেকে অভিযোগ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে বিআরটিএ, চট্টগ্রাম বিভাগের সহকারী পরিচালক রায়হানা আক্তার উর্থী বলেন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউটগুলোতে সারাদেশে মোটর সাইকেলের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তবে স্বতন্ত্রভাবে শুধু নারীদের নিয়ে প্রশিক্ষণ করানো হয় না। সেখানে পুরুষ মহিলা উভয়ই ট্রেনিং নিতে পারবেন। আমাদের দেশে পুরূষদের তুলনায় নারীদের মাটরসাইকেলের ট্রেনিং নেওয়ার উপস্থিতি কম থাকায় এ ব্যাপারে প্রকল্প হয়তো নেওয়া হয়নি। অদূর ভবিষ্যতে চাহিদা অনুয়ায়ী হয়তো প্রকল্প নেওয়া হতে পারে।
চট্টগ্রামে গত ৫ বছরে কতজন নারী মোটরসাইকেলের উপর লাইসেন্স পেয়েছেন- জিজ্ঞসা করলে বলেন, সেভাবে স্বতন্ত্র লাইসেন্সপ্রাপ্ত নারীদের তালিকা আমদের হাতে নেই।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরের সিআরবিতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ২০১৯ সাল থেকে নারীদের মোটর বাইকের (স্কুটি) প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছেন তাকিয়া সুলতানা নোভা। তিনি এ পর্যন্ত ৫৩৩ জন নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন বলে জানান। প্রতি কোর্সে ছাত্রের সংখ্যাটা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। প্রশিক্ষণে চাকরিজীবী মহিলাদের জন্য রেখেছেন আলাদা সুযোগ। শুধু নারীরা নয় বর্তমানে পুরুষেরাও তার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। নারীদের আত্মউন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখায় ‘আইপিডিসি-ডেইলি স্টার আনসাং উইমেন নেশন বিল্ডার্স অ্যাওয়ার্ডস- ২০২২’র সম্মাননা লাভ করেন তিনি।