নিজস্ব প্রতিবেদক
৩০ তম চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা শুরু হয়েছে ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে। এই মেলায় সুলভ হয়ে ওঠে দেশি-বিদেশি বিপুল পণ্যসম্ভার। এক দেশের পণ্য আরেক দেশে পরিচিত হয় এ মেলার মাধ্যমে। এবারও দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি নিজস্ব পণ্য নিয়ে অংশগ্রহণ করেছে ভারত, থাইল্যান্ড ও ইরানের ব্যবসায়ীরা। এতসব বিদেশি পণ্যের উপস্থিতি সত্ত্বেও দেশের মানুষের কাছে দেশিপণ্যের চাহিদা যেন কমেইনি। এতো বিদেশিপণ্যের ভিড়েও মানুষ ঝুঁকছে দেশজ মৃৎশিল্পের দিকে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেলায় প্রবেশমুখেই বসেছে মাটির পণ্য ও বিভিন্ন রকম খাবারের দোকান। টিকিট কেটে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ঝাঁকে-ঝাঁকে প্রবেশ করছে মেলায়। মেলায় সচারাচর গৃহস্থালি পণ্যগুলো বেশি বিক্রি হওয়ায় নারীক্রেতার সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় পণ্যের পাশাপাশি তারা কিনছেন গৃহসজ্জার নানান সরঞ্জাম। এই গৃহসজ্জায় অন্য সবকিছুর সাথে বাঙালির যেন মাটির তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র না হলেই চলে না। এর মধ্যে আছে নানান রকম নকশা করা ফুলের টব, শো-পিস, মাটিতে খোদাই করা গ্রামীণদৃশ্য, পানির পাত্র, ফুলদানি, প্রদীপদানি, মোমদানি, কয়েলদানি, হাতি, ঘোড়া, বাউল প্রতিকৃতি, বুদ্ধমূর্তি, হাঁড়ি-পাতিল, কলস, জগ, গ্লাস, কাপ, আয়না, কেতলি ইত্যাদি।
মাটির তৈরি পণ্যের প্রতি আগ্রহ কেন, জানতে চাইলে মেলায় আসা সুফিয়া খানম নামের এক দর্শনার্থী বলেন, ‘আসলে আমরা তো বাঙালি , মৃৎশিল্প আমাদের ঐতিহ্য। আমাদের জীবনযাপনের সাথে মাটির সম্পর্কটাই বেশি। আমাদের ঘরবাড়ি মাটির পণ্য ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে সাজালে হয়তো অভিজাত ঠেকবে, কিন্তু নিজের মনে হবে না। কারণ তাতে আমাদের শেকড়ের রং, রূপ, রস, ঘ্রাণ থাকবে না। নীড়ের প্রতি বাঙালির যে মমত্ববোধ সেটি থাকবে না। তাই আমাদের যাপনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ঘর সাজাতে মাটির পণ্যের বিকল্প নেই।’
চাঁদপুর মৃৎশিল্পের একজন বিক্রেতা বলেন, ‘আমরা প্রতি মেলায় আশানুরূপ সাড়া পাই। তবে এসব পণ্যের চাহিদা মাঝখানে কমে গেছিল। ফলে কুমোরেরা অন্যসব পেশায় নিযুক্ত হয়ে গেছে। সেভাবে মাটির পণ্য এখন বছরব্যাপী দোকানপাট খুলে কেউ বিক্রি করে না। যার কারণে যখন হঠাৎ মেলা হয়, ক্রেতারা পণ্যগুলো লুফে নেয়। কারণ সর্বত্র এসব পণ্য তারা পান না। এছাড়া মাটির পণ্যগুলো যেমন আমাদের ঐতিহ্য, তেমনি এগুলোর নকশাও বেশ রুচিশীল। সেই সাথে অন্যান্য বিদেশিপণ্যের তুলনায় দামও কম। তাই ক্রেতারা এসব পণ্য কিনতে আগ্রহবোধ করে। ’