নিজস্ব প্রতিবেদক »
অন্যান্য বছর রমজানকে ঘিরে সবজির বাজার চড়া থাকলেও এবছর তার ব্যতিক্রম। বাজারে পর্যাপ্ত যোগান ও সরবরাহ থাকার ফলে সবজির দাম রয়েছে স্বস্তিতে কিন্তু সাধারণ মানুষকে ভোগাচ্ছে মাছ, মাংসসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চড়া দামে।
বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর অন্যতম ভোগ্যপণ্যের কাঁচা বাজার রেয়াজউদ্দিন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে বেগুন, গাজর, মুলা, শালগম, শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লালশাক, পালং শাকসহ হরেক রকম শীতকালীন শাকসবজিতে ভরপুর কাঁচাবাজার। দামও সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রয়েছে। রমজান ঘিরে শসা ও লেবুর ছাড়া অন্যান্য সবজির দাম সহনীয় পর্যায়ে আছে। বাজারে প্রায়সব শীতকালীন সবজি ২৫ থেকে ৪০ টাকার মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে। তাছাড়া রমজানকে অন্যান্য বছর কাঁচামরিচ, গাজর, টমেটোর দর চড়া থাকে কিন্তু এবছর এসব ৪০ থেকে ৪৫ টাকার মধ্যেই বিক্রি হচ্ছে।
সবজিবিক্রেতা মো. রুবেল বলেন, রমজানকে ঘিরে লেবু ও শসা ছাড়া আর কোন সবজির দাম বাড়েনি। আলুর দাম কিছুটা বেড়েছে।
এদিকে রমজান ঘিরে দুই সপ্তাহ ধরে চড়া হওয়া মাছ, মুরগি, গরুর মাংস ও অন্যান্য মুদি পণ্যের দাম স্থিতিতে রয়েছে।
মাংসের বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার, সোনালি মুরগিসহ কোন ধরনের মাংসের দাম কমেনি। বরং সপ্তাহের ব্যবধানে ব্যয়লার মুরগি ১০ টাকা ও সোনালিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২১৫ টাকা আর সোনালি ৩৪০ থেকে ৩৫০।
গরু ও খাসির মাংসের বাজার চড়া হয়ে স্থিতিতে রয়েছে। বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯৫০ টাকা আর খাসির ১ হাজার ২০০ টাকা।
গরুর মাংসের বাজারে কথা হয় মো. সোলায়মান নামের এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, সারাদিন রোজা রেখে সেহরির সময় পরিবারের সবাই একটু ভালো খাবার খেতে চায়। তাই মাংস কিনতে আসা। কিন্তু বর্তমান মাছ-মাংসের বাজার সাধারণ মানুষের সাধ্যেও মধ্যে নেই। এসব খাবার এখন ধনীদের মেন্যুতেই সীমাবদ্ধ।
অন্যদিকে গত দুই সপ্তাহ ধরে চড়া হওয়া মাছের বাজার রয়েছে স্থিতিতে। বাজারে সাইজভেদে রুই মাছ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ২৮০ থেকে ৪০০ টাকা। আর চাষের পাবদা, টেংরা শিং, চিতল মাছ বিক্রি হয়েছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। সবচেয়ে কমদামের মাছ নাইলোটিকা ও পাঙ্গাস বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা। তাছাড়া সমুদ্রের পোয়া ৩৮০ থেকে ৪৪০ টাকা, রুপচান্দা ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, লাক্ষা ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছ কিনতে এসে ফিরে যাওয়া মো. সাদেক নামের এক রিকশাচালক বলেন, সারাদিন রিকশা চালিয়ে চার পাঁচশো টাকা পাই। এখন এক কেজি মাছের দাম ৩৫০ টাকা। মাছ কিনলে অন্যান্য খাবার কেনা যাবে না। তাই মাছ না কিনে সবজি ও ডিম কিনলাম।
গত সপ্তাহ থেকে কমতে থাকা ডিমের বাজারও রয়েছে স্থিতিতে। ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি ডজন ১১৫ থেকে ১২০ টাকা।
অন্যদিকে পেঁয়াজের দাম কমলেও চড়া দরের মধ্যে স্থিতিতে রয়েছে আদা ও রসুনের বাজার। বাজারে দেশি ও আমদানির পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৭০ টাকা। আদা ও রসুন কেজি ১৭০ থেকে ২০০ টাকা।
সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সকল চালের দামও বেড়েছে কেজিপ্রতি ২ থেকে ৪ টাকা। বাজারে নাজিরশাইল ও মিনিকেট মানের সরু চাল ৬২ থেকে ৭৫ টাকা, পাইজাম ও মানের মাঝারি চাল ৫২ থেকে ৫৬ টাকা, স্বর্ণা ও ইরি মানের মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৪৮ থেকে ৫২ টাকা।
চাল ব্যবসায়ীরা জানান, চালের সরবরাহ জটিলতার কারণে কয়েকদিন দরে চালের দর উঠানামা করছে।
তাছাড়া অপরিবর্তিত রয়েছে অন্যান্য মুদি পণ্যের দাম। বাজাওে খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা, প্যাকেট ৬০ থেকে ৬৭ টাকা, সাদা চিনি ১৪০ টাকা ও লাল চিনি ১৬০ টাকা, খোলা সয়াবিন লিটার প্রতি ১৬০ টাকা ও বোতলজাত সয়াবিন ১৬৫ থেকে ১৭৫ টাকা, লবণ ৪০ টাকা।
এদিকে রমজানকে ঘিরে বাজার তদারকিতে সক্রিয় রয়েছে জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার।
জেলা প্রশাসনের নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত বলেণ, বাজারের অস্থিরতা ঠেকাতে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করেছে জেলা প্রশাসন। যেখানে কারসাজির তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।