২০২০ সালের মার্চে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকে দেশে জিনিসপত্রের দাম বাড়তে থাকে। তখন আতঙ্কে বেশি কেনাকাটার কারণে বাজারে সরবরাহ-সংকট তৈরি হয়েছিল। এরপর সরবরাহ-সংকট, দেশীয় পরিস্থিতিসহ নানা কারণে দর বাড়তিই ছিল। ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে সরবরাহ-সংকট, মার্কিন ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া এবং জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের দাম বাড়ানোর কারণে উৎপাদন ও পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। এতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে পণ্যের দাম ।
এতে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মতে, গত আগস্ট মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ, যা গত ১১ বছর ৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এরমধ্যে সরকার তিন পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয়। বেশ কিছুদিন ধরে এই তিন পণ্যের দামে বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এখন থেকে খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম হবে সর্বোচ্চ ১২ টাকা, প্রতি কেজি আলু ৩৬ এবং দেশি পেঁয়াজ ৬৫ টাকা। কিন্তু দেশের কোথাও স্বাভাবিক অবস্থায় সরকারের বেঁধে দেওয়া দরে বিক্রি হচ্ছে না এসব। যতক্ষণ অভিযান চলে শুধু ততক্ষণই সরকারি দরে এই তিন পণ্য কিনতে পারে ভোক্তারা।
এভাবে কি বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব? এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও সাবেক বাণিজ্যসচিব গোলাম রহমান পত্রিকাকে বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে দাম বেঁধে দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। তবে ক্ষেত্রবিশেষে সেটা করতে হলে কতগুলো বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে। তার একটা হলো মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে যেসব উপায়-উপকরণ আছে, তার সঠিক ব্যবহার করা। সেই কাজটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য করা কঠিন। এটা হতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে। অভিযানের ব্যাপারে তিনি বলেন, উৎপাদনস্থলে গিয়ে খোঁজখবর না নিয়ে বাজার অভিযানের মতো পদক্ষেপে হয়তো খুব বেশি লাভ হবে না। এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নে যথেষ্ট জনবল আছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। কারণ, অভিযানকালে পণ্যের দাম কম নিলেও, পরে জরিমানার টাকাসহ বিক্রেতারা উশুল করে নেন। তখন দেখার কেউ থাকে না।’
একটি দৈনিক কিছু বড় কোম্পানি, বাজার বিশ্লেষক, পাইকারি বিক্রেতা ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে নির্ধারিত দর কার্যকর না হওয়ার চারটি কারণ বের করেছে ১. বড় কোম্পানি, উৎপাদক অথবা আমদানি পর্যায়ে দর কার্যকর করতে না পারা। ২. পাইকারি বাজার ও খুচরা পর্যায়ে সার্বক্ষণিক নজরদারি না থাকা। দেখা গেছে, যতক্ষণ বাজারে অভিযান চলে, ততক্ষণ দাম কম থাকে। ৩. চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ভারসাম্য না থাকা। সরবরাহ–সংকট থাকলে কোনোভাবেই নির্ধারিত দর কার্যকর করা সম্ভব নয়। ৪. বেড়ে যাওয়ার পর দর নির্ধারণে লাভ হয় না।
সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এসব বিষয় নিয়ে ভাবনাচিন্তা করার অনুরোধ করা ছাড়া আমাদের অন্যকোনো উপায়ও নেই।
এ মুহূর্তের সংবাদ