‘নাশকতার কিছু কিছু তথ্য গোয়েন্দাদের কাছে রয়েছে’
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ
পাচ্ছেন খালেদা জিয়া ও ড.ইউনূস
২৬ জুন থেকে পদ্মা সেতুতে যান চলাচল
সুপ্রভাত ডেস্ক »
নতুন অর্থবছরের বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে আওয়ামী লীগের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের খবরে বাজেটের বদলে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রসঙ্গটি বেশি গুরুত্ব পাওয়ায় সাংবাদিকদের সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়ে প্রশ্নের জবাব গতকালও দিয়েছি। সাংবাদিক বন্ধুদের একটা কথা বলতে চাই, বারবার বলেছি। কিন্তু, বাস্তবে উল্টোটাই দেখি। বক্তব্য দিলাম বাজেট নিয়ে, কেউ কেউ বাজেট নিয়ে একটা কথাও লেখে নাই। খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে লিখেছে। সেটাতো প্রসঙ্গ ছিল না।’
রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল মাঠে রোববার মোহাম্মদপুর থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন হয়। সেখানে সাংবাদিকদের লিখিত প্রশ্নের জবাব দেন ওবায়দুল কাদের।
সীতাকুণ্ডের কন্টেইনার ডিপো, ট্রেন এবং ফেরীতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার তদন্ত চলছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘নাশকতার কিছু কিছু তথ্য গোয়েন্দাদের কাছে রয়েছে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় বিএনপির দিকে ইংগিত করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট বলতে চাই, আগুন নিয়ে খেলবেন না, আগুন নিয়ে খেললে এই আগুনেই পুড়ে মরবেন।
‘আপনাদের মিথ্যাচার, গণবিরোধী ও আগুন সন্ত্রাসীর রাজনীতি পুড়ে মরবে। সেই আগুনে, যে আগুন আপনারা আমাদের বিরুদ্ধে জ্বালাতে চান।’
আওয়ামী লীগ ‘জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে’ বলে যে মন্তব্য বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর করেছেন, তার জবাবে কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণের দল, তাই কোনোদিন জনগণের বিরুদ্ধে তারা যায়নি।
‘পঁচাত্তরের পরে ২১ বছর ক্ষমতায় না ছিলাম না, তারপর সাজানো নির্বাচনে (২০০১) হেরে গিয়েও আমরা মাঠে আছি। আমরা মাঠ ছাড়ব না।’
দলের অবস্থান স্পষ্ট করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের অবস্থান সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, আপনাদের (বিএনপি) মিথ্যাচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে। সেই অবস্থা নিয়ে এগিয়ে চলছি।’
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে সাংবাদিকদের যে প্রশ্ন, তা আইনমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে করার পরামর্শ দেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, “দুই মন্ত্রীই এ প্রশ্নের জবাব আগে দিয়েছেন, এখনও তারাই জানাবেন। মন্ত্রীদের কাজ ভাগ করা আছে।”
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘অন্তর্কলহ থাকলে দূর করুন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নৌকা আবারও পৌঁছাবে বিজয়ের বন্দরে।’
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাচ্ছেন খালেদা জিয়া ও ড.ইউনূস
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্টসহ সবাইকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, আমরা বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট, খালেদা জিয়া ও ড. মুহাম্মদ ইউনূস থেকে শুরু করে সবাইকে আমন্ত্রণ জানানোর চিন্তা করছি। নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) আমাদের সেইভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন। উই উইল ইনভাইট অল।
গতকাল রোববার মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমন্ত্রণের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। আমন্ত্রণপত্র ছাপানো শেষ হয়েছে। বিদেশি যাদের আমন্ত্রণ করবো তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমন্ত্রণ জানানো হবে। আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেবো। তারা পরে তাদের মতো করে পাঠাবে। আর খালেদা জিয়াকে আমরা চিঠি দেবো। খবর বিডিনিউজ ও বাংলাট্রিবিউন।
যান চলাচল শুরুর সময় জানালেন সেতুমন্ত্রী
আগামী ২৬ জুন সকাল ৬টা থেকে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে সর্বসাধারণের যান চলাচল শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
গতকাল রোববার মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর সাইট অফিসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। খবর বাংলাট্রিবিউনের।
ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনার অবদানে পদ্মা সেতু দৃশ্যমান। এটি আমাদের স্বপ্নের সেতু, সামর্থ্যের সেতু, সক্ষমতার সেতু, মর্যাদার প্রতীক। যারা আমাদের অপমান করেছে, সেই অপমানের প্রতিশোধ নেওয়ার সেতু।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন আগামী ২৫ জুন। ওইদিন সকাল ১০টায় মাওয়া প্রান্তে সুধী সমাবেশ এবং ফলক উন্মোচন হবে। মাওয়া প্রান্ত দিয়ে সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী সেতু পার হবেন। সময় লাগবে ৬ মিনিট। ওখানে কাঁঠালবাড়িয়ায় ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী ফেরিঘাটে কয়েক লাখ মানুষের উপস্থিতিতে তিনি জনসভা করবেন। সেখানে জাতির উদ্দেশে তিনি ভাষণ দেবেন।
তিনি আরও বলেন, এই সেতু শেখ হাসিনার অসীম সাহসিকতার ফসল। যারা বলছেন, সেতুতে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করা হয়েছে, তারা জানেন না আশপাশের দেশে যেসব সেতু নির্মিত হয়েছে বা যেসব সেতুর উদাহরণ তারা দেন, সেগুলোতে পদ্মা সেতুর প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়নি। তারা জানেন না এ ধরনের সেতু নির্মাণে কত টাকা ব্যয় হতে পারে।
শেখ হাসিনার নামে এই সেতুর নামকরণ করতে জাতীয় সংসদসহ সারা দেশ থেকে দাবি উঠেছিল জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, যেহেতু এই সেতুকে কেন্দ্র করে শেখ পরিবারকে জড়িয়ে নানা ধরনের সমালোচনা করা হয়েছে, সে কারণে প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি পদ্মা সেতু নামটিই যথার্থ মনে করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় ছত্রিশ হাজার কোটি টাকা। এই টাকা পঁয়ত্রিশ বছরে সরকারকে ফেরত দিতে হবে। সেটা টোল আদায়ের মাধ্যমে করা হবে। টোল বেশি কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, টোল অতিরিক্ত হয়নি। সবকিছুই স্বাভাবিক আছে। নিয়ম মেনেই টোল নির্ধারণ করা হয়েছে।
সেতুমন্ত্রী বলেন, এই সেতুর অবদান দুই পাড়ের মানুষের। সেতু নির্মাণে তারা তাদের বাপ-দাদার ভিটামাটি উৎসর্গ করেছেন। এটি যদি তারা না করতেন, তাহলে আমাদের পক্ষে সেতু নির্মাণ সম্ভব ছিল না। শেখ হাসিনা কখনও ইলেকশন নিয়ে ভাবেন না, তিনি জেনারেশন নিয়ে ভাবেন।
সেতুমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুর মোট দৈর্ঘ্য (ডাঙার অংশসহ) ৯.৮৩ কিলোমিটার। জিডিপিতে এটি অবদান রাখবে ১.২৩ শতাংশ। পদ্মা সেতুর জন্য ২৭শ’ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করতে ব্যয় হয়েছে ২৭০০ কোটি টাকা।