নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলের নাজিরার টেক থেকে শুরু কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার জুড়ে প্লাস্টিক, ছেঁড়া জাল, গাছ-গাছালি, স্যান্ডেল ও রশিসহ নানা ধরনের বর্জ্য জোয়ারের পানিতে ভেসে এসেছে। যা বালিয়াড়িতে ছড়িয়ে রয়েছে। ভেসে আসা এসব বর্জ্য সমুদ্র উপকূলের সৌন্দর্যকে ম্লান করে দিয়েছে। সমুদ্রে নিম্নচাপের কারণে এসব বর্জ্য ভেসে এসেছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ইতিমধ্যে এসব বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরু করেছে প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাতের জোয়ের সময় এসব বর্জ্য ভেসে আসার সত্যতা নিশ্চিত করেছে সৈকতে জেলা প্রশাসনের বিচ কর্মী বেলাল হোসেন। তিনি জানান, রাতের জো’য়ের পর শুক্রবার সকালে এসব বর্জ্য ভেসে আসতে দেখা গেছে।
সৈকতের নাজিরারটেক পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত আনুমানিক চার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বালিয়াড়িতে দেখা মিলেছে এসব বর্জ্য। যার বেশিরভাগ প্লাস্টিকের বোতল, রশি, স্যান্ডেল, ছোট ছোট গাছ-গাছালিসহ নানা সামগ্রী।
সৈকতের লাইফ গার্ডকর্মী সৈয়দ নুর জানান, বুধবার অসংখ্য মৃত জেলিফিস, বৃহস্পতিবার ২টি মৃত ইরাবতি ডলফিন ভেসে আসার পর ব্যাপক হারে বর্জ্য ভেসে এল। যার কারণে বালিয়াড়িতে পড়ে থাকা বর্জ্যে সৌন্দর্যহীন হয়ে পড়েছে সৈকত। একই সঙ্গে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। যা দেখে বিব্রত হচ্ছে পর্যটকরা। যদিও বা পর্যটকের উপস্থিতি অনেকটা কম।
বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্স ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর জানিয়েছেন, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কলাতলী থেকে নাজিরারটেক পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় নানা ধরনের সামুদ্রিক বর্জ্য ভেসে আসে। এর আগে বিভিন্ন সময়ে কক্সবাজার সৈকতের দরিয়ানগর হতে মহেশখালীর বিভিন্ন দ্বীপসহ সোনাদিয়া দ্বীপে একই বর্জ্য ভেসে এসেছিল।
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা সমুদ্রে নি¤œচাপ, বায়ুপ্রবাহ, পানির ঘূর্ণন (এডি), সমুদ্রের পানির গতি প্রবাহসহ সমুদ্র পৃষ্ঠের ধরনের উপর ভিত্তি করে সমুদ্র উপকূলের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় ভাসমান প্লাস্টিকসহ ও অন্যান্য বর্জ্য জমা হয়। উল্লেখ্য গত কয়েকদিন ধরে আমরা বঙ্গোপসাগরে একটি ছোট আকারের নিম্মচাপ লক্ষ্য করেছি। এসব নি¤œ চাপে জোয়ারের সময় সমুদ্রের উপরিভাগের পানি অতিমাত্রায় বেড়ে গিয়ে ফুলে উঠে এবং ঘূর্ণনের ফলে সমুদ্রের ভাসমান বর্জ্য একসাথে জমা হয়ে সমুদ্র সৈকতে ভেসে আসে। এসব বর্জ্য কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে অবস্থিত বিভিন্ন লতা, গুল্ম, ও ম্যানগ্রোভের সাথে আটকা পরে। এটি টেরেসস্ট্রিয়াল মাইক্রোপ্লাস্টিক এর উৎসে পরিণত হয়েছে।
তিনি অনতিবিলম্বে এই বর্জ্য অপসারণ না হলে সৃস্ট মাইক্রোপ্লাস্টিকের কারণে সমুদ্রের জীব বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে এবং মানুষের জন্য বিশাল স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠবে বলে মন্তব্য করেন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন শাখার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ জানিয়েছেন, এসব বর্জ্য অপসারণের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব অপসারণ করা হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত বৃহস্পতিবার ২ টি মৃত ইরাবতি ডলফিন, গত বছরের আগস্ট মাসের শুরুর দিকে, ১১ নভেম্বর, ৩ ডিসেম্বর অসংখ্য মরা জেলিফিশ ভেসে এসেছিলো। একইভাবে গত বছর ৩ দফায় ভেসে এসেছিলো ৪ টি নানা প্রজাতির ডলফিন।