বিপ্লব উদ্যান পরিদর্শনে প্রশাসক সুজন
চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন
নিজস্ব প্রতিবেদক :
সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের আওতায় বিপ্লব উদ্যানে নকশা বর্হিভূত দোকান নির্মাণের দায়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য তা বন্ধ ঘোষণা করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। একইসাথে এই সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ও বরাদ্দ গ্রহীতার মধ্যে চুক্তি লঙ্ঘনের বিষয়ে সুরাহা করার জন্যও বলেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সিটি কর্পোরেশনের উর্ধতন কর্মকর্তা ও নগর পরিকল্পনাবিদদের নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলেন।
চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বিপ্লব উদ্যানে পরিদর্শনে দেখেন, চসিকের সাথে চুক্তিতে ১৫০ বর্গফুটের দোকান করার কথা থাকলেও প্রতিটি দোকান ২০০ বর্গফুট পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। এক সারিতে দোকানের সিট বসানোর কথা থাকলেও চলাচলের রাস্তা সংকুচিত করে দুই সারিতে দোকানের সিট বসানো হয়েছে। এছাড়াও চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রাকৃতিক পরিবেশ বিদ্যমান থাকার শর্ত থাকলেও পার্কটিতে তা নেই।
এসব অনিয়ম ও অসঙ্গতি দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করে চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের চুক্তির বাইরে গিয়ে কিংবা ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করে শুধুমাত্র বাণিজ্যিক চিন্তা ভাবনায় এই কাজ করতে দেয়া যায় না। এ বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী ও চসিকের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীগণ চুক্তি অনুযায়ী কাজ শেষের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। উভয় পক্ষ যতক্ষণ সিদ্ধান্তে আসতে পারবেন না ততদিন এই অবৈধ দোকান বন্ধ থাকবে। অন্যথায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, চসিকের সকল পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন শুধুমাত্র নগরবাসীর স্বার্থে। চসিকের সৌন্দর্যবর্ধন ও নগরায়ণে জনগণের স্বার্থরক্ষা প্রথমে করতে হবে। শুধুমাত্র ব্যক্তি স্বার্থে কোন কিছু করার সুযোগ নেই। কেউ যদি নগরবাসীর স্বার্থের বিপরীত কাজে লিপ্ত হয় তাদের আজকের এই কর্মসূচি থেকে সাবধান হওয়া উচিত।
চসিক প্রশাসকের বক্তব্যের পর সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান স্টাইল লিভিং আর্কিটেক্টের প্রধান নির্বাহী মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রায় ১০ কোটি টাকা খরচ করে এই প্রকল্পটি নিয়েছি। আর সিটি কর্পোরেশনের শর্ত মেনেই করা হয়েছে।’
কিন্তু দোকানের আয়তন যে বাড়িয়েছেন? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, দোকানের আয়তনের জায়গায় প্রায় বলা হয়েছে। তাই সেহিসেবে ঠিক আছে।
দুতলা কেন করলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘ চুক্তিতে দুই বা তিন তলার কথা কোথাও উল্লেখ নেই।’
তাহলে প্রাকৃতিক সবুজায়ন এখনো না করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সবুজায়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা ধীরে ধীরে করছি। এখানে অনেক গাছ ও পাখ–পাখালির আবাসস্থল বানানোর পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।
এখন প্রশাসক মহোদয় যে দোকান বন্ধের নির্দেশ দিলেন, এবিষয়ে আপনার বক্তব্য কি? এর উত্তরে মিজানুর রহমান বলেন,‘ প্রশাসক মহোদয় যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন অবশ্যই আমরা তা সম্মান করি। এখন আমরা চসিকের সাথে বসে সিদ্ধান্ত নেবো।’
এদিকে বিপ্লব উদ্যান পরিদর্শনকালে চট্টগ্রামের বিশিষ্ট নগর পরিকল্পনাবিদ এম আলী আশরাফ, আইইবি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের প্রেসিডেন্ট প্রবীর কুমার সেন, চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সামসুদ্দোহা, সচিব আবু শাহেদ চৌধুরী, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ মুফিদুল আলম, প্রকৌশলী আলী আশরাফ, প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন, প্রশাসকের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাশেম, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি এ কে এম রেজাউল করিম, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ শফিকুল মান্নান সিদ্দিকী, উপ প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদ আলম চৌধুরী, নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সিদ্দিক উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের আওতায় নগরজুড়ে সৌন্দর্যহানি করা হয়েছে। সবুজের পরিবর্তে দোকানকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। বর্তমান প্রশাসক দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তা নিয়ে সোচ্চার রয়েছেন।