নিজস্ব প্রতিনিধি, চকরিয়া »
বন পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার বলেছেন, সারাদেশে বনবিভাগের বহু বনভূমি জবরদখল হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বনভূমি দখলে জড়িত আছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। তাদেরকে এ কাজে সহযোগিতা দিয়েছেন বনবিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী। সে কারণে সংরক্ষিত বনভূমি দিন দিন বেহাত হয়ে যাচ্ছে। তিনি বনভূমি অবৈধভাবে দখলকারী ও সহযোগিতাকারীদের তালিকা প্রণয়ন করা হবে বলে মন্তব্য করেন।
গতকাল সোমবার দুপুরে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্ক পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন উপমন্ত্রী।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার বলেন, দেশে ২৫ ভাগ বনভূমি থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে নেই। আছে মাত্র ৯ ভাগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে ২২ শতাংশে উন্নীত হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ পার্কটি দেশের প্রথম। বর্তমানে চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শেষ হলে পার্কে দেশি-বিদেশি প্রাণির কোন সংকট থাকবে না। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে, যাতে পার্কে প্রাণির সংখ্যা বাড়ানো যায়। তখন দর্শনার্থীদের মন কেড়ে নিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তিনি বলেন, সুন্দরবনের মুক্ত বাঘ দেখেছি, আজকে ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে খাঁচাবন্দি বাঘ-সিংহ দেখেছি, গর্জনও শুনেছি, খুব ভাল লেগেছে।
গাজীপুর বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক প্রসঙ্গে উপমন্ত্রী বলেন, ওই পার্কটি বনায়ন সমৃদ্ধ নয়। এটি কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে। তার বিপরীতে ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক প্রাকৃতিক বনায়নে সমৃদ্ধ একটি দৃষ্টিনন্দন পর্যটন জোন। ভবিষ্যতেও এই পার্ক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আরো আধুনিক ও উন্নতমানের হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান বনসংরক্ষক আমির হোসাইন চৌধুরী, চট্টগ্রাম অঞ্চলের বনসংরক্ষক বিপুল কৃষ্ণ দাস, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতির সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রামের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ডিএফও আনোয়ার হোসেন সরকার, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান, চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মাজহারুল ইসলাম, হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান মেহেরাজ উদ্দিন মিরাজ, ডুলাহাজারা ইউপি চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর।
এদিকে সোমবার সকালে উপজেলার খুটাখালী ও ফাঁসিয়াখালি রেঞ্জ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের সাথে মতবিনিময় করেন উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন্নাহার। সভায় সভাপতিত্ব করেন, প্রধান বনসংরক্ষক মো. আমির হোসাইন চৌধুরী।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য জাফর আলম বলেন, সংরক্ষিত বনএলাকা থেকে বালু উত্তোলনের জন্য সরকারিভাবে ইজারা দেয়া হচ্ছে। সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব পাচ্ছে তার বেশি বনবিভাগের ক্ষতি হচ্ছে। বালু তুলে একজন, মামলার আসামি হয় আরেকজন। তিনি সংরক্ষিত বনের অবৈধভাবে স্থাপিত ইটভাটা চালু থাকলে পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্যের ক্ষতি হয়ে হাতির অভয়ারণ্য ধ্বংস হবে বলে মন্তব্য করেন।